জাতীয়

ইলিশের চাহিদা কম

একটা সময় পহেলা বৈশাখ মানেই ছিল সকালে উঠে পান্তা ভাতের সঙ্গে ইলিশ ভাজা খাওয়া। ফলে এপ্রিল শুরু হওয়ার আগেই অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেত ইলিশের দাম। তবে গত বছর থেকে এ রীতির কিছুটা পরিবর্তন ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আহ্বানে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পহেলা বৈশাখে ইলিশ না খাওয়ার ঘোষণা আসে।

Advertisement

গত বছরের ১১ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলনে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে পহেলা বৈশাখে ইলিশ না খাওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা ইলিশ খাবেন না, ইলিশ ধরবেন না। এ সময় প্রধানমন্ত্রী পহেলা বৈশাখের খাদ্য তালিকা হিসেবে- খিঁচুড়ি, সবজি, মরিচ ভাজা, ডিম ভাজা ও বেগুন ভাজার কথা উল্লেখ করেন।

ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত বছর প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানের কারণে বৈশাখকেন্দ্রীক ইলিশের চাহিদা কিছুটা হলেও কমে যায়। সেই সঙ্গে ইলিশের ঊর্ধ্বমুখী দামেও ছেদ পড়ে। গত বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও বৈশাখকেন্দ্রীক ইলিশের চাহিদা কম। ফলে দামও তুলনামুলক কম।

৯ এপ্রিল সরেজমিন কারওয়ানবাজারে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা এক কেজি থেকে এক কেজি ২০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ বিক্রি করছেন ১৪০০-১৫০০ টাকা পিস। ৬০০-৭০০ গ্রাম সাইজের ইলিশ বিক্রি করছেন ৪০০-৫০০ টাকা পিস। আর ২৫০-৩৫০ গ্রাম সাইজের ইলিশ বিক্রি করছেন ৮০০ টাকা হালি।

Advertisement

কথা হয় বাজারটির মাছ ব্যবসায়ী চাঁদপুরের শুকুর আলীর সঙ্গে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমি কারওয়ানবাজারে ১০ বছর ধরে মাছের ব্যবসা করছি। প্রতিবারই দেখেছি পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকেই ইলিশের দাম বহুগুণে বেড়ে যায়। ২০০ টাকার ইলিশের দাম হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। তবে এবার বৈশাখকেন্দ্রীক ইলিশের দাম খুব একটা বাড়েনি। হালিতে ১০০-২০০ টাকার মতো বেড়েছে।

এই ব্যবসায়ী বলেন, গত বছর প্রধানমন্ত্রী পহেলা বৈশাখে ইলিশ না খাওয়ার আহ্বান জানান। এ কারণেই হয়তো এখন ইলিশ বিক্রি কমে গেছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। আগে কখনও এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়নি।

বাজারটিতে শুকুর আলীর মতো আরও কয়েকজন ব্যবসায়ী শুধু ইলিশ নিয়েই বসে আছেন। প্রায় আধাঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো ইলিশ ব্যবসায়ীর কাছে ক্রেতাদের উপস্থিতি দেখা যায়নি।

এ বিষয়ে আরেক ব্যবসায়ী সুকুমার জাগো নিউজকে বলেন, ইলিশের ব্যবসায় মন্দা দেখা দিয়েছে। আমাদের কাছে যে ইলিশ দেখছেন তার সবই দেড় থেকে দুই মাস আগে ধরা। বৈশাখে বিক্রি করবো বলে মাছ ফ্রিজে রেখে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন দেখি বাজারে ক্রেতা নেই। দামও তেমন পাচ্ছি না। দুই মাস আগে যে দামে ইলিশ বিক্রি করেছি ,এখনও সেই দামে বিক্রি করছি।

Advertisement

কিশোরগঞ্জের ব্যবসায়ী তারা মিয়া বলেন, এখন বাজারে সব থেকে বড় আকারের যে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে তার ওজন এককেজি থেকে এক কেজি ২০০ গ্রাম। দুই মাস আগে এই সাইজের ইলিশ বিক্রি করেছি ১২০০-১৪০০ টাকা পিস। এখন বিক্রি করছি ১৪০০-১৫০০ টাকা পিস।

ইলিশ বিক্রিতে মন্দার কথা জানান যাত্রাবাড়ী ও রামপুরার ব্যবসায়ীরাও। যাত্রাবাড়ীতে এক কেজি সাইজের ইলিশ ১২০০-১৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রামপুরায় এক কেজি সাইজের ইলিশের দেখা মেলেনি। তবে ৬০০-৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৬০০-৭০০ টাকা পিস বিক্রি হতে দেখা যায়।

রামপুরার ব্যবসায়ী সুবল বলেন, বৈশাখ উপলক্ষে ইলিশের দাম যেমন বাড়ার কথা এবার তেমন বাড়েনি। দুই মাস আগে যে দামে বিক্রি করেছি এখন তার থেকে কিছু বেশি দামে বিক্রি করছি। কিন্তু ৩-৪ বছর আগে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে যে দামে ইলিশ বিক্রি করতাম এপ্রিলের শুরুতে দাম তার দ্বিগুণের বেশি হয়ে যেত। সে সময় দাম বাড়লেও বিক্রি ভালোই হতো। কিন্তু এখন দাম না বাড়ার পরও বিক্রি বাড়েনি। স্বাভাবিক সময়ে যেমন বিক্রি হয়, এখনও তেমন বিক্রি হচ্ছে।

যাত্রাবাড়ীর ব্যবসায়ী সুদেব বলেন, ৯ এপ্রিল (সোমবার) আড়তে দুই কেজি ওজনের একটি ইলিশ এসেছিল। একজন সেই ইলিশ পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে কেনেন। এখন যে ইলিশ আছে তার সর্বোচ্চ ওজন এক কেজি ১০০ গ্রাম। এই সাইজের ইলিশ ১৩০০-১৪০০ টাকায় বিক্রি করছি। দুই মাস আগে ১০০০-১২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অন্যবার বৈশাখে ইলিশ নিয়ে যত মাতামাতি হয় এবার তেমন দেখা যাচ্ছে না। যে কারণে দাম খুব একটা বাড়েনি।

এমএএস/জেএইচ/এমএআর/পিআর