বৈসাবিকে ঘিরে উৎসবের জনপদে পরিণত হয়েছে তিন পার্বত্য জেলা। জাত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই মেতে উঠেছে প্রাণের উৎসবে। নববর্ষের একদিন বাকি থাকতেই বৃহস্পতিবার ভোর থেকে ‘ফুলবিঝু’র মধ্য দিয়ে পাহাড়ে বৈসাবি উৎসবের মুল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। দিনের আলো ফুটে ওঠার পরপরই ঐহিত্যবাহী পোশাকে বর্ণিল সাজে সেজে নদীর পাড়ে আসতে শুরু করে চাকমা তরুণ-তরুণীরা। পিছিয়ে ছিল না ছোটরাও। তারাও বর্ণিল সাজে ফুল হাতে বড়োদের হাত ধরে নদীর পাড়ে আসে।
Advertisement
বৃহস্পতিবার ভোরের আলো ফোটার আগেই খাগড়াছড়ির খবং পড়িয়া এলাকায় চেঙ্গী নদীর পাড়ে নানা রঙের পোশাকে সেজে নদীর পাড়ে আসতে শুরু করে চাকমা সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা। সকলের হাতে দেবী উদ্দেশ্যে সংগৃহীত রঙ-বেরঙের ফুল। এতে অন্যান্য সম্প্রদায়ের দর্শনাথীরাও ফুলবিঝু উপভোগ করতে নদীর পাড়ে আসে।
এর পরপরই সকলের মঙ্গল কামনায় চেঙ্গী নদীর বুকে কলা পাতায় গঙ্গাদেবীর উদ্দেশে ফুল ভাসিয়ে বিগত বছরের গ্লানি মুছে নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর মধ্য দিয়ে খাগড়াছড়িতে চাকমা সম্প্রদায়ের অন্যতম সামাজিক উৎসব ‘ফুলবিঝু’ পালিত হয়েছে। মুহূর্তের মধ্যেই চেঙ্গীর নদীর পানি ঢাকা পড়ে ফুলে ফুলে। শুধু খাগড়াছড়ির চেঙ্গী নদী নয় ফুলে ফুলে ঢেকে গেছে দীঘিনালার মাইনী নদী, মাটিরাঙ্গার ধলিয়া খালসহ ছোট-বড় সব নদীর পানি। উৎসব মুখর পরিবেশে বর্ণিল সাজে চাকমা সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীরা দিনটি পালন করেছে।
নদীতে ফুল ভাসাতে আসা বাসন্তী চাকমা বলেন, এদিন সকলের মঙ্গল কামনার মধ্য দিয়ে আমরা দিনটি শুরু করি। তার মতে পাহাড়ের শান্তি আজকের দিনে বড় চাওয়া।
Advertisement
বৈসাবি উৎসবের দ্বিতীয় দিনে ১৩ এপ্রিল শুক্রবার ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর হারি বৈসু পালিত হবে। এদিন ঘরে ঘরে রান্না হবে বিশেষ পাঁচন। আর মন্দিরে মন্দিরে চলবে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান।
বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে শনিবার পালিত হবে মারমাদের সাংগ্রাই উৎসব। মারমা সম্প্রদায়ের লোকজন মেতে উঠবে ওয়াটার ফেস্টিবল বা জলকেলী উৎসবে। সকল দুঃখ, পাপ-তাপ, কালিমা ধুয়ে-মুছে দিতে একে অপরের দিকে পানি ছুড়বেন। আর তরুণ-তরুণীরা ভালোবাসার মানুষের গায়ে পানি ছিটিয়ে ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাবে।
এছাড়াও নতুন বছরের প্রথম দিন বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে বাংলার ঐতিহ্যকে ধারণ করে খাগড়াছড়িতে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করবে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসন। অনুরূপ বিভিন্ন উপজেলাতে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে স্থানীয় প্রশাসন।
এদিকে প্রাণের উৎসব ‘বৈসাবি’কে ঘিরে খাগড়াছড়ির শহর ছাড়িয়ে প্রত্যন্ত জনপদে ছড়িয়ে পড়েছে উৎসবের আমেজ। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা চলছে পাড়ায় পাড়ায়। যেন বৈসাবি উৎসবে রঙিন খাগড়াছড়ি।
Advertisement
মুজিবুর রহমান ভুইয়া/আরএ/পিআর