প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের দাবি সঠিকভাবে মূল্যায়ন না করে ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে কোটা বাতিলের কথা বলেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা কোটা পদ্ধতি বাতিলের জন্য আন্দোলন করছে না, তারা আন্দোলন করছে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে। দেশের প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ ও সরকারের সাবেক অর্থসচিব ড. আকবর আলী খান ছাত্র-ছাত্রীদের এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে আশাব্যঞ্জক পদক্ষেপ বলে অভিহিত করেছেন। কিন্তু গতকাল জাতীয় সংসদে এই কোটা বাতিলের কথা বলে প্রধানমন্ত্রী গোটা জাতিকেই হতাশ করেছেন।’
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নয়াপল্টনে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন রিজভী আহমেদ।
সরকার মুক্তমন নিয়ে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের কোটা সংস্কারের দাবিকে আমলে নেননি উল্লেখ করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘সংবিধানে অনগ্রসর জাতি গোষ্ঠীকে কোটা দেয়ার বিধান সুষ্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্র-ছাত্রী ও চাকরিপ্রার্থীরা বারবার মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও প্রান্তিক জাতি-গোষ্ঠী ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের কোটার বিরোধীতা করেনি। গতকাল সরকার প্রধানের কোটা বাতিলের ঘোষণা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই ঘোষণায় কুটচাল রয়েছে। আন্দোলনকারীদের দমানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে নানা অপকৌশলের আশ্রয় নেয়া হয়েছে।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘গতকাল প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে যত না কোটা সংস্কার আন্দোলনের মূল সমস্যাটি সমাধানের দিক নির্দেশনা এসেছে তার চেয়ে বেশি এসেছে ক্ষোভ প্রকাশ, বিরক্তি ও হুমকি। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো- প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের যে ঘোষণা দিলেন সেটি বাস্তবায়িত হলে এর বিরুদ্ধে যে কেউ রিট করলে তা খারিজ হয়ে যাবে। কারণ সংবিধানে এ বিষয়টি নিয়ে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। কিন্তু কোটার যে বিষয়গুলো বিধানে নেই, সেগুলো সংবিধান সংশোধন ছাড়াই সরকার সংস্কার করে তা কমিয়ে আনতে পারে।’
রিজভী আরও বলেন, ‘এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরও আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে এবং রাতেই আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে চারটি মামলাও হয়েছে। তাহলে স্পষ্টতঃই বোঝা যায়- সংসদে প্রধানমন্ত্রীর কোটা বাতিলের ঘোষণা দেয়ার পরে আন্দোলনকারীদের ওপর এই হামলা ও মামলায় অশান্তি বাড়বে, কমবে না। আসলে আওয়ামী লীগের সব কাজই প্রকৃতপক্ষে এক ছল। প্রধানমন্ত্রী এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে আবারও শপথ ভঙ্গ করলেন।’
সরকারবিরোধী এই নেতা বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী গতকাল তার বক্তব্যে বলেছেন- ছাত্র-ছাত্রীদের এই আন্দোলনে তিনি খুব উৎকণ্ঠিত, রাত্রে তার ঘুম আসে না। বিশেষভাবে রাত্রে আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্রীদের জন্য তিনি টেনশনে থাকেন। আসলে কী তাই? গতকালই প্রধানমন্ত্রী সুরের ধারা রজতজয়ন্তী উৎসবে সঙ্গীত উপভোগ করেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গীতানুষ্ঠান উপভোগে আমাদের আপত্তি নেই, আমাদের বক্তব্য হচ্ছে-ঢাকাসহ সারাদেশ যখন আন্দোলনে উত্তাল, যখন রাজধানী স্থবির হয়ে পড়েছে, যখন সরকারি বাহিনীর গুলিতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শরীর থেকে রক্ত ঝরছে, তখন সুরের ধারা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গানের সুরে তাল মেলাচ্ছেন। এ যেন রোম পুড়ছে আর নীরো বাঁশি বাজাচ্ছে। আওয়ামী সরকার দেশের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দেয়ার সরকার।’
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আব্দুস সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সেলিমুজ্জামান সেলিম, আব্দুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ। কেএইচ/জেএইচ/আরআইপি
Advertisement