অর্থনীতি

বড় সুবিধা পেতে যাচ্ছেন ওষুধ খাতের বিনিয়োগকারীরা

বাংলাদেশে ওষুধ খাতে বিনিয়োগকারীদের বড় ধরনের সুবিধা দিতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে জাতীয় এপিআই (কার্যকর ওষুধ উপকরণ) ও ল্যাবরেটরি বিকারক উৎপাদন-রফতানি নীতি তৈরি করা হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি এপিআই উৎপাদন-রফতানি নীতিটি নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে।

Advertisement

বুধবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়। বৈঠকে কমিটির সদস্য, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিনিয়র সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, আজকের বৈঠকে ‘জাতীয় এপিআই (কার্যকর ওষুধ উপকরণ) ও ল্যাবরেটরি বিকারক উৎপাদন-রফতানি নীতির’ নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

বাণিজ্য সচিব শুভাশীষ বসু স্বাক্ষরিত ওই নীতির প্রস্তাবনায় বলা হয়, বাণিজ্য সম্ভাবনা বিবেচনায় নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বেশকিছু খাত বা পণ্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নত করেছে। এর মধ্যে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য হচ্ছে অন্যতম। আর এ ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল হচ্ছে এপিআই, যা প্রায় সম্পূর্ণরূপে আমদানিনির্ভর। এপিআই রফতানির মাধ্যমে দেশের রফতানি খাতকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো এখন সময়ের দাবি। এপিআই খাতে টেকসই শিল্পায়নের মাধ্যমে রফতানি বহুমুখীকরণ এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করার লক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ নীতি প্রণয়ন করেছে।

Advertisement

নতুন নীতিতে বলা হয়েছে, আগামী পাঁচ বছর বাংলাদেশে নিবন্ধিত সব এপিআই ও ল্যাবরেটরি বিকারক উৎপাদনকারীরা শর্তহীনভাবে কর অবকাশ সুবিধা পাবে। তবে ২০২২ সাল পর্যন্ত কেবল যোগ্যতার ভিত্তিতে এ সুবিধা দেয়া হবে। ২০৩২ সাল পর্যন্ত অগ্রিম আয় কর (এআইটি) এবং উৎসে কর হতে অব্যাহতি প্রদান করা হবে। এছাড়া সব প্রকার কাঁচামাল, স্থায়ী সম্পদ ও অন্যান্য মালামাল সেবা, ক্রয় ও বিক্রয়ের ওপর ভ্যাট এবং উৎসে ভ্যাট কর্তন মওকুফ করা হবে। আর ন্যূনতম ২০ শতাংশ মূল্য সংযোজনের শর্তে বাংলাদেশে নিবন্ধিত সব এপিআই ও ল্যাবরেটরি বিকারক রফতানিতে স্থানীয় উৎপাদকদের ২০ শতাংশ নগদ প্রণোদনাও প্রদান করা হবে। একইসঙ্গে এ নীতির প্রত্যাশিত মলিকিউল অর্জনের লক্ষে সব এপিআই ও ল্যাবরেটরি বিকারক উৎপাদনে বার্ষিক টার্নওভার অন্তত এক শতাংশ গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যয় করার কথা বলা হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, বাংলাদেশে উৎপাদিত ফার্মসিউটিক্যাল পণ্য অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় ৯৮ শতাংশ মিটিয়ে থাকে, যা দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতুল্য। বাংলাদেশ বিশ্বের ১০০টিরও বেশি দেশে ওষুদ রফতানি করছে। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর মাধ্যমে ওষুধ শিল্প খাত আমদানি প্রতিস্থাপক শিল্প হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালক করছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে ডব্লিউটিও ট্রিপস চুক্তির অধীন ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যে ২০৩২ সালের ৩১ ডিসেম্ব পর্যন্ত ওয়েভার দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ওষুদ রফতানির ব্যাপক সম্ভবনা রয়েছে। আমাদের এপিআই না থাকায় ওষুধ উপদানে ব্যবহৃত এপিআইয়ের প্রায় ৯৫ শতাংশ আমদানি করতে হয়। আমদানি নির্ভর কাঁচামালের ওপর ওষুদ শিল্প টেকসই হবে না। এছাড়া ওয়েভার সুবিধা পরিসমাপ্তিতে ওষুধের মূল্য বেড়ে যাবে। এ জন্য দেশীয়ভাবে ওষুধ শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদন করা আবশ্যক।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আরও জানান, এপিআই খাতে একটি সময়োপযোগী নীতি করা হলে তা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হবে। এ নীতি বাস্তবায়িত হলে পূর্ণ উৎপাদন ক্ষমতা ব্যবহারের মাধ্যমে ২০৩২ সালের মধ্যে এপিআই উৎপাদন খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমানো এবং রফতানির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ৩৭০টি এপিআই মলিকুল তৈরি করা সম্ভব হবে। এ ছাড়া এপিআই খাতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে।

এমইউএইচ/জেডএ/বিএ

Advertisement