সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরসহ মিল্কসেড এরিয়ায় এ বছর মশা-মাছির অত্যাচার ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এসব মশা-মাছির আক্রমণে এরিয়ায় গরুর খুরা রোগ, ম্যাস্টাইটিস, ওলান ফোলা, জড়া, চর্মরোগ, এলার্জি, বাটে পচন, খুধা মন্দা, খাওয়ায় অরুচি, স্বাস্থ্যহানিসহ নানা রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে খুরা রোগসহ মশা-মাছি বাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ১ মাসে এ এলাকায় অন্তত শতাধিক গরু মারা গেছে। এতে খামারিদের কমপক্ষে দেড় কোটি টাকা লোকশান হয়েছে।
Advertisement
স্থানীয়রা জানায়, দুধের গ্রাম খ্যাত শাহজাদপুরে মশা-মাছির অত্যাচারে মিল্কসেড এরিয়ার দুগ্ধ উৎপাদনকারী কৃষক ও গো-খামারিরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। মশা-মাছির আক্রমণে গরুর নানা রোগ দেখা দিচ্ছে। মশা-মাছির অত্যাচারে গরু খেতে, বসতে ও ঘুমাতে না পারায় দুধের উৎপাদন হ্রাস ও ফ্যাট কমে গেছে। মিল্কসেড এরিয়ার পাবনার বেড়া, সাঁথিয়া, সুজানগর, ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর, সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, বেলকুচি ও চৌহালি এলাকার কৃষকরা দুধ বিক্রি করেও লোকশান গুনছে। ফলে এ এরিয়ার দুগ্ধ শিল্প হুমকির মুখে পড়েছে।
শাহজাদপুর উপজেলার চিথুলিয়া গ্রামের মন্তাজ মন্ডল, ইব্রাহিম, সারা খাতুন বলেন, গোয়াল ঘরে সাজাল, ধুপ-কয়েল জ্বালিয়ে, ফিনিশ ও ফাইটার স্প্রে করে এবং ফ্যান দিয়েও মশা-মাছি দূর করতে না পেরে গরু বাঁচাতে খেয়ে না খেয়ে অনেক টাকা ব্যয় করে পুরো গোয়াল ঘরে মশারি দিয়ে ঢেকে দিয়েছি। তারপরেও মশা-মাছি থেকে গরু রক্ষা করতে পারছি না। গত ৫০ বছরের মধ্যে এ রকম মশা-মাছির উপদ্রব দেখেনি।
মিল্কভিটার বৃ-আঙ্গারু প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির ম্যানেজার ও গো-খামারি আব্দুর রউফ বলেন, মশা-মাছি বাহিত খুরা রোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে তাদের গ্রামে গত ১ মাসে অন্তত ২০-২৫ গরু মারা গেছে। মশা-মাছির অত্যাচারে তাদের খামারের গরু সারা দিন-রাত খেতে ও ঘুমাতে পারছে না। না খেয়ে গরু রুগ্ন হয়ে পড়েছে। দুধের ফ্যাট কমে গেছে ও দুধ উৎপাদনও কমে গেছে। পাবনা-সিরাজগঞ্জ মিল্কসেড এরিয়ায় কমপক্ষে সাড়ে ৬ লাখ উন্নত জাতের দুধ উৎপাদনকারী গাভী রয়েছে। মশা-মাছির কামড়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়ে ৬ লাখ গাভীই ওলান জড়া ও ম্যাস্টাইটিস রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। ফলে এসব গাভী ক্রমশ দুগ্ধ উৎপাদন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এতে তারা চরমভাবে আর্থিক লোকশানে পড়েছে।
Advertisement
মিল্কভিটার সাথিয়ার বোয়ালমারী দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সভাপতি ও গো-খামারি বেলায়েত হোসেন বলেন, তাদের এরিয়ায় মাছির চেয়ে মশার অত্যাচার বেশি হওয়ায় মাংস উৎপাদনশীল গরুকে মশারির মধ্যে লালন-পালন করতে বাধ্য হচ্ছেন। গত ১ মাসে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার মিল্কসেড এরিয়ায় মশা-মাছির আক্রমণে খুরা রোগ ও অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে অন্তত শতাধিক গরু মারা গেছে। এ কারণে দুধের উৎপাদন কমে যাওয়ায় মিল্কভিটাসহ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে খামারিতের দুধ সরবরাহও কমে গেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে এ এলাকার গো-সম্পদ রক্ষা কঠিন হয়ে পড়বে। তাই এ এলাকার গো-সম্পদ রক্ষায় সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুস সামাদ বলেন, পরিস্থিতি এতোটা ভয়াবহ না হলেও এ এরিয়ায় মশা-মাছির উপদ্রব আছে। আমরা খামানিদের স্প্রে করাসহ নানা পরামর্শ দিয়ে গো-সম্পদ রক্ষায় কাজ করছি। এরপরেও সরকারিভাবে এ এরিয়ায় মশা-মাছি নির্মূলে কোরো পদক্ষেপ নেয়া যায় কিনা তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইউসুফ দেওয়ান রাজু/আরএ/জেআইএম
Advertisement