দেশজুড়ে

মা-ছেলে খুনের রহস্য দেহ ব্যবসা

সিলেট নগরের মিরাবাজারের খারপাড়ায় মা-ছেলে খুনের ঘটনায় তান্নি-মামুন দম্পতি ফৌজধারী দণ্ডবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

Advertisement

মঙ্গলবার দুপুরে সিলেট মহানগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) অমূল্য কুমার চৌধুরী জানান, সোমবার রাতে মহানগর হাকিম হরিদাস কুমারের আদালতে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন তারা।

জবানবন্দিতে তানিয়া বেগম তান্নি বলেন, জোর করে দেহ ব্যবসা ও মাদক ব্যবসা করানো এবং এর থেকে বেরিয়ে আসতে বাধা দেয়ায় রোকেয়া বেগম শিউলী ও তার ছেলে রবিউল ইসলাম রোকনকে হত্যার পরিকল্পনা করি। পরিকল্পনা অনুযায়ী তাদের হত্যা করি। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তারা সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় তানিয়া ও মামুন জবানবন্দি দেন।

এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গৌসুল হোসেনের কাছে তাদেরকে হস্তান্তর করে পিবিআই। রাতেই ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণের জন্য আদালতে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের। সেখানে তারা দীর্ঘক্ষণ জবানবন্দি দেন বলে ওসি গৌছুল হোসেন জানিয়েছেন।

Advertisement

আদালতে তারা জানায়, রোকেয়া বেগম ও তার ছেলে রবিউল ইসলাম রোকনকে অচেতন করে হত্যা করে তানিয়া ও মামুন। এ সময় তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে মা ও ছেলেকে। তাদের পরিকল্পনা ছিল রোকেয়ার পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলা।

পাঁচ বছরের শিশু রাইসাকে প্রথমে তান্নি ও মামুন গলা চেপে ধরেন। এ সময় রাইসা নিস্তেজ হয়ে পড়লে তার মৃত্যু হয়েছে ভেবে রোকেয়া ও রোকনকে হত্যা করা হয়। তবে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় শিশু রাইসা।

পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ৩০ মার্চ বিকেলে ঝড়ের সময় তার স্বামী মামুনকে নিয়ে রোকেয়ার বাসায় যান তানিয়া। রাতের খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে পরিবারের সবাইকে অচেতন করে।

রাত আনুমানিক ২টার দিকে মামুন ছোরা মারে রোকেয়ার গলায়। মৃত্যু নিশ্চিত করতে রোকেয়ার শরীরে ছুরিকাঘাত করে। এরপর তারা রোকেয়ার ছেলে রোকনকে ছুরিকাঘাত করে।

Advertisement

আসামিদের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, তানিয়া বেগম তান্নি দুই বছর আগে সিলেটে হজরত শাহজালাল (র.)-এর মাজারে বেড়াতে আসেন। এখানেই পরিচয় হয় রোকেয়া বেগমের সঙ্গে। পাশাপাশি দেখা হয় বিশ্বনাথের বাসিন্দা ইউসুফ খান মামুনের সঙ্গেও। পরে রোকেয়া বেগম কুমিল্লা থেকে আসা তান্নিকে বোন বানিয়ে সিলেটে রেখে দেন এবং তাকে কৌশলে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করেন।

এরই মধ্যে মামুনের সঙ্গে তান্নির প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর কয়েক দিন পরই মামুনের সঙ্গে তান্নির বিয়ে হয়। বিয়ের পরও স্বামী-স্ত্রী আলাদা বসবাস করতেন।

রোকেয়া তান্নিকে নিষিদ্ধ পথে নামানোর কথা স্বামী মামুনকে জানালে রোকেয়া বেগমকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তারা। এর অংশ হিসেবে গত ৩০ এপ্রিল রাত ৮টার দিকে তানিয়া ও মামুন রোকেয়ার বাসায় যান। পরে রাতের খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে পরিবারের সবাইকে অচেতন করা হয়।

রাত ২টার দিকে স্বামী-স্ত্রী মিলে প্রথমে রোকেয়া বেগমের কক্ষে যান। ঘুমে অচেতন রোকেয়া বেগমের মুখে কম্বল দিয়ে শ্বাসরোধ করার জন্য চেপে ধরেন তান্নি। আর ছুরি দিয়ে গলা কেটে ও কুপিয়ে রোকেয়াকে হত্যা করেন মামুন। পরে পার্শ্ববর্তী রুমে ঘুমে অচেতন রোকেয়ার ছেলে রোকনকেও একই কায়দায় হত্যা করেন তারা।

এদিকে, জীবিত উদ্ধার হওয়া রোকেয়া বেগমের পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে রাইসাকেও তারা হত্যার উদ্দেশ্যে ঘুমের ওষুধ খাওয়ায় এবং গলা চেপে ধরে। রাইসাও মারা গেছে ভেবে রাতেই বাসার বাইরে তালা দিয়ে চলে যায় তারা।

পুলিশ আরও জানায়, রোকেয়ার ইয়াবা ব্যবসা ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি জবানবন্দিতে তুলে ধরা ছাড়াও বিস্তারিত বর্ণনা দেয় তারা। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

প্রসঙ্গত, সিলেট নগরের নগরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের খারপাড়ায় মিতালী ১৫/জে নম্বরের তিনতলা বাড়ির নিচতলায় দুই সন্তানকে নিয়ে থাকতেন পার্লার ব্যবসায়ী রোকেয়া বেগম ওরফে শিউলী।

রোববার (১ এপ্রিল) বাড়ির ভেতর থেকে পাঁচ বছরের মেয়ে রাইসার কান্না ও পচা গন্ধ পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশে খবর দেয়। দুপুরে পুলিশ ওই বাড়িতে গিয়ে রোকেয়া বেগম শিউলী ও তার ছেলে রবিউল ইসলাম রোকনের মরদেহ উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় গত ৪ এপ্রিল রাতে শহরতলির শাহপরান গেট এলাকা থেকে নাজমুল হোসেন (৩২) নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়। নাজমুল তানিয়া ও নিহত রোকেয়া বেগমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গত ১ এপ্রিল রাতে নিহত রোকেয়া বেগমের ভাই জাকির হোসেন বাদী কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪/৫ জনকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।

ছামির মাহমুদ/এএম/এমএস