গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এবারও মেয়র পদে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এ মান্নান। তবে আলোচনা শেষে গাজীপুরে হাসান উদ্দিন সরকার ও খুলনায় নজরুল ইসলাম মঞ্জুর নাম ঘোষণা করেছে বিএনপি।
Advertisement
বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দিনগত রাতে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে যান অধ্যাপক এম এ মান্নান। সেখানে দলীয় মনোনয়ন লাভের জন্য ভিডিও কনফারেন্সে দলের সর্বোচ্চ ব্যক্তির কাছে তিনি ‘কান্নাকাটি’ও করেছেন! মূলত সে কারণেই প্রার্থী চূড়ান্ত করতে বিলম্ব হয়। এমনকি মান্নানকে বোঝানোর জন্য দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যদের বলেছেন।
পরে মনোনয়ন বোর্ডের সদস্যরা দলের প্রেস সচিবের কক্ষে গিয়ে মান্নানকে বুঝিয়েছেন। প্রেস সচিবের কক্ষে মান্নানের সঙ্গে আলোচনায় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর রায়, নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা শেষে চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের এক সদস্য মির্জা আব্বাসকে বলেন, ‘ভাইয়া ৯টা বেজে যাচ্ছে, পত্রিকা ছাপা হয়ে যাবে।’ জবাবে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘যাকগে, আমাদের একটা প্রক্রিয়া আছে না। আমরা কি আরামে আছি?’
Advertisement
অধ্যাপক আব্দুল মান্নানকে আলাদাভাবে ডেকে কথা বলার কারণ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এটা আমাদের পার্টির অভ্যন্তরীণ বিষয়। তারপরও আপনাদের (সাংবাদিক) জানার জন্য বলছি, সবার সঙ্গেই আমরা আলাদা করে কথা বলেছি। কার কী সুবিধা অসুবিধা সেগুলো জানতে চাই।’
দীর্ঘ আলোচনার পর দুই সিটিতে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘গাজীপুর এবং খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত বিএনপির আগেই ছিল। গাজীপুরে ৭ জন এবং খুলনা থেকে ৩ জন আমাদের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। খুলনাতে মেয়র পদে আমরা মনোনয়ন দিচ্ছি নজরুল ইসলাম মঞ্জু সাহেবকে। আর গাজীপুরে মনোনয়ন দিচ্ছি সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক শ্রমিক নেতা হাসান উদ্দিন সরকারকে। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা।’
এদিকে দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর থেকে ৭ জন মনোনয়ন চাইলেও মূল প্রত্যাশী ছিলেন অধ্যাপক এম এ মান্নান এবং হাসান উদ্দিন সরকার। তবে তৃণমূল নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে গভীর পর্যালোচনা করেই হাসান উদ্দিন সরকারকে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে।
গত ৮ এপ্রিল চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার দিতে এসে অধ্যাপক এম এ মান্নান জানিয়েছিলেন, ‘গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে তিনিই বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন।’ তবে তিনি যখন কথা বলছিলেন তখন তাকে শারীরিকভাবে স্বাভাবিক দেখাচ্ছিল না। তার শরীরে কাঁপুনি লক্ষ্য করা গেছে। এছাড়া নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য শারীরিকভাবে ঠিক আছেন কি না -সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবও দেননি তিনি।
Advertisement
দলের নেতারা তাকে ডেকে নিয়ে কী বুঝিয়েছেন তা জানা না গেলেও শারীরিক বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন তারা। দলের হাইকমান্ড মনে করেন, অধ্যাপক আব্দুল মান্নান শারীরিকভাবে সক্ষম নয়। ফলে গাজীপুরে বিএনপিকে শক্তিশালী করতে এই মুহূর্তে সরকার পরিবারের বিকল্প নেই। এছাড়া খুলনায় দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল থামিয়ে বিএনপিকে আরও সুসংগঠিত করতে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর ব্যাপারে আগেই দলের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত ছিল।
অন্যদিকে গাজীপুর সিটি নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা আশা করি অতীতের মত জনগণ আমাদের সঙ্গে থাকবে। গতবারে গাজীপুর লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেছি, খুলনায়ও ৬০ থেকে ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেছি। আমরা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করছি।’
কেএইচ/আরএস/জেআইএম