মাদারীপুরের শিবচরে এক ইজিবাইক চালককে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে বেঁধে রেখে তার স্ত্রীকে গণধর্ষণ করা হয়েছে। এ ঘটনায় মূলহোতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
Advertisement
ঘটনার পর থেকে স্থানীয়ভাবে সালিশের নামে পাঁচ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও ধর্ষকদের বিচার না হওয়ায় পরিবারটি থানায় মামলা দিলে সোমবার ঘটনার মূলহোতা ধর্ষক মিজানকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
পুলিশ ও নির্যাতিতার পরিবার সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মাদবরচর ইউনিয়নের মিজান, রাশেদ, কামাল, মনিরসহ চারজন এলাকার চিহ্নিত মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী। তারা এলাকার বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত।
গত ৩ মার্চ রাতে ছলু বেপারীর কান্দি গ্রামের এক ইজিবাইক চালক বাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় ইউসুফ হাওলাদারের বাড়ির কাছে পৌঁছলে বখাটে মিজান, রাশেদ, মনির ও কামালসহ চার যুবক তার গতিরোধ করে। এ সময় ইজিবাইক চালকের কাছে তারা নেশার জন্য ২০ হাজার টাকা দাবি করে।
Advertisement
দাবিকৃত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মাদকসেবী চার যুবক ইজিবাইক চালককে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মূলহোতা মিজানের বাড়িতে নিয়ে মারধর করে বেঁধে রাখে।
ওদিন রাত ১টার দিকে মিজান ও রাশেদ ওই ইজিবাইক চালকের বাড়িতে ঢুকে তার স্ত্রীকে ডাকে। স্ত্রী দরজা খুললে মিজান ও রাশেদ ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে তার দুই শিশুর গলায় ছুরি ধরে হত্যার ভয় দেখিয়ে গৃহবধূকে (২৪) পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
ভোর রাতে আটক ইজিবাইকচালক মাদকসেবীদের দাবিকৃত ২০ হাজার টাকা দিতে সম্মত হয়। ওই টাকাসহ কামাল ও মনির ইজিবাইক চালককে নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে। ঘরে প্রবেশ করতেই স্ত্রীকে ধর্ষণ করতে দেখেন ইজিবাইক চালক।
এ সময় ইজিবাইক চালককে দেখে মিজান ও রাশেদ এই ঘটনা কাউকে না বলার জন্য তাকে ভয় দেখিয়ে পালিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মাদকাসক্ত ধর্ষক মিজান ওই এলাকায় আবার প্রবেশ করে।
Advertisement
তাকে দেখে ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূ তার শাশুড়ি ও এলাকাবাসীকে ধর্ষণের বিষয়টি জানায়। এ ঘটনা জানার পর এলাকাবাসী এক হয়ে ধর্ষক মিজানকে গণধোলাই দেয়।
এ সময় স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ প্রভাবশালীরা অসহায় পরিবারটিকে বিচারের আশ্বাস দিয়ে মিজানকে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
তবে ঘটনার পাঁচদিন অতিবাহিত হলেও স্থানীয়রা ধর্ষকদের বিচার না করায় গতকাল রোববার রাতে নির্যাতিত গৃহবধূ বাদী হয়ে মিজান, রাশেদ, কামাল ও মনিরকে আসামি করে শিবচর থানায় মামলা করেন।
সোমবার দুপুরে অভিযান চালিয়ে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসাধীন অবস্থায় মিজানকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
ইজিবাইক চালক বলেন, ওরা এলাকার চিহ্নিত মাদকসেবী। নেশার টাকার জন্য আমাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে রাতভর আটকে রেখে আমার ঘরে ঢুকে স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছে। স্থানীয় মাতব্বরদের বিচারের আশ্বাসে থানায় মামলা দিতে দেরি হয়েছে।
ধর্ষক মিজান পুলিশকে জানায়, ওই গৃহবধূর স্বামীকে আটকে রেখে তার বাড়িতে আমি ও রাশেদ গিয়েছিলাম। তবে গৃহবধূকে ধর্ষণ করেছে রাশেদ।
শিবচর থানা পুলিশের ওসি জাকির হোসেন বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। মূলহোতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ভুক্তভোগী নারীকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য মাদারীপুর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান চলছে।
এ কে এম নাসিরুল হক/এএম/আরআইপি