কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদের সঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বৈঠক চলছে। পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনের নেতৃত্বে বৈঠকে আন্দোলনকারীদের ১৯ সদস্য অংশ নিয়েছেন।
Advertisement
যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স রুমে বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে এ বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এনামুল হক শামীম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, মুক্তযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, উপ দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এস এম কামাল হোসেন, ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া উপস্থিত আছেন।
আর কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মী কানিজ ফাতেমা, আফসানা সাফা, একরামুল হক, আল ইমরান হোসাইন, লীনা মিত্র, আরজিনা হাসান, লুবনা জাহান প্রমুখ উপস্থিত আছেন।
এর আগে বিকেল পৌনে চারটার দিকে দুটি মাইক্রোবাসে তারা সচিবালয়ের উদ্দেশে রওনা দেন। সচিবালয়ে যাওয়ার আগে ফারুক হাসান গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, তারা পূর্বঘোষিত পাঁচ দফা দাবি আদায়ের ব্যাপারে আলোচনা করতে সচিবালয়ে যাচ্ছেন। সরকারের আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে অনেক আশা নিয়ে যাচ্ছেন। সরকার তাদের যুক্তিসঙ্গত দাবি মেনে নেবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। দাবি আদায় না হলে শিক্ষার্থীরা এবার ঘরে ফিরে যাবে না বলে মন্তব্য করেন মামুন।
Advertisement
পাঁচ দফা দাবিগুলো হলো-কোটা ব্যবস্থা সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা, কোটায় কোনো ধরনের বিশেষ নিয়োগ না দেয়া, চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহারের সুযোগ না দেয়া, সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সবার জন্য অভিন্ন কাট মার্কস ও বয়সসীমা নির্ধারণ করা ও কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধায় নিয়োগ প্রদান করা।
এর আগে আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন জাগো নিউজকে বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। আমরা তাদের বলেছি, আপনারা আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালাবেন না, টিয়ারসেল, জলকামান ব্যবহার করবেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আমাদের সচিবালয়ে ডেকেছেন। যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে কোটা সংস্কারের দাবির বিষয়ে আলোচনা হবে। আশা করি একটি ফলপ্রসূ আলোচনা হবে এবং বিদ্যমান সমস্যার নিরসন হবে।’
তিনি এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করবেন। আমাদের ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ধানমন্ডিতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্যারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। আমরা আশা করছি একটি ফলপ্রসূ আলোচনা হবে।’
Advertisement
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তাদের কথা হয়েছে। তারা আমার ও আবু সাঈদের আইডি কার্ড (আন্দোলনরত কর্মী) রেখে দিয়েছে। আপনারা কোনো বিশৃঙ্খলা করলে পরবর্তীতে আমাদের সমস্যা হবে। তাই আপনাদের প্রতি অনুরোধ, আপনারা কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবেন না, ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করবেন না। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন।’
এর আগে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সোমবার দুপুরের মধ্যে আটক সব আন্দোলনকারীকে মুক্তি দেয়া না হলে সারা দেশে দাবানল ছড়িয়ে পড়বে। সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা এ আন্দোলনে যুক্ত হবেন।’
সকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে আন্দোলনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা এ কথা বলেন।
সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) বলতে চাই, যারা আন্দোলন করছেন, তারা আপনার ভাই বা সন্তানের মতো। তারা কারও বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন না। তারা অধিকারের প্রশ্নে আন্দোলন করছেন। তাই আজ দুপুরের মধ্যেই আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দেন। তা না হলে আন্দোলনে দাবানল সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে।’
এদিকে সকালে কয়েক দফা উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দালনরত শিক্ষার্থীদের বচসা হয়।
প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কারের দাবিতে গতকাল রোববার দুপুর আড়াইটা থেকে শাহবাগ মোড়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থী। একই সঙ্গে সারাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালিত হয়।
রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে শাহবাগসহ আশপাশের সড়ক দিয়ে সব ধরনের যান চলাচাল বন্ধ হয়ে যায়। দুর্ভোগে পড়েন রাজধানীবাসী। রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশ টিয়ারসেল, জলকামান ও লাঠিপেটা করে শিক্ষার্থীদের অবস্থান থেকে সরিয়ে দেয়। শুরু হয় সংঘর্ষ। থেকে থেকে সংঘর্ষে প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। আটক করা হয় অসংখ্য শিক্ষার্থীকে। মধ্যরাতে হামলা চালানো হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের বাসভবনে। ভাঙচুর করে সেখানে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
সোমবার সকাল থেকে ঢাবির ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করে।
এমইউএইচ/জেডএ/পিআর