সাগর পাড়ের কিশোরী নাসিমা সকল প্রতিকূলতাকে পাশ কাটিয়ে বিশ্ব গণমাধ্যমে আলোচনার ঝড় তুলেছে। সার্ফিংয়ে বিশ্ব মিডিয়ার নজর কেড়েছে বাংলাদেশি এই কিশোরী। আর তাই তাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে ডকুমেন্টারি।চার বছর আগে মার্কিন সাংবাদিক জয়মাল ইয়োগিসের এক প্রতিবেদনে প্রথম উঠে আসে কক্সবাজারের মেয়ে নাসিমার কথা।এরপর তার গল্পে অনুপ্রাণিত হন ক্যালিফোর্নিয়ার প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা হিথার কেসিঞ্জার। সিদ্ধান্ত নেন নাসিমার গল্প তুলে ধরবেন তার প্রামাণ্যচিত্রে। নাসিমাকে নিয়ে তৈরি প্রামাণ্যচিত্রটির নাম রাখা হয়েছে `দ্য মোস্ট ফিয়ারলেস`। ইতোমধ্যে নাসিমাকে নিয়ে প্রতিবেদন এসেছে বৃটেনের `সানডে টাইমস`, দ্য গার্ডিয়ান, অস্ট্রেলিয়ার `দ্য অস্ট্রেলিয়ান`- এ। এছাড়া নারী বিষয়ক আন্তর্জাতিক ম্যাগাজিন ম্যারি ক্লেয়ারেও এসেছে নাসিমার সচিত্র প্রতিবেদন।নাসিমার সার্ফিং দক্ষতা নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ সবাই। কিন্তু নাসিমার এ অবস্থানে আসার পথটি কিন্তু মোটেই সহজ ছিলো না। সার্ফিংয়ের প্রতি অদম্য আগ্রহের কারণে সকল পিছুটান ফেছনে ফেলে বন্ধুত্ব করেছে উত্তল সাগরের সঙ্গে।হিথার কেসিঞ্জারের প্রামাণ্যচিত্রে তুলে ধরা হয়েছে নাসিমার সেই লড়াই। `দ্য মোস্ট ফিয়ারলেস`- প্রামাণ্যচিত্রে উঠে এসেছে, মাত্র ৯ বছর বয়সে বাধ্য হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় নাসিমা। এরপর একটি সার্ফ ক্লাবে নিজের পরিবার খুঁজে পায়। বাংলাদেশ সার্ফ ক্লাব নামের এ সংগঠনটির পৃষ্ঠপোষক একটি মার্কিন ক্রিশ্চিয়ান সংগঠন। নাসিমাও মানুষের বিদ্রূপ ও নানা প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে এগিয়ে গেছেন। যখনই নাসিমা সমুদ্র সৈকতে গেছে, আশপাশের লোকজন তাকে `বেশ্যা` বলে কটূক্তি করেছে। নাসিমা বলেন, ``আমার স্বামী ও পরিবার সার্ফিং পছন্দ করে না। বাংলাদেশি কোন মেয়ে সার্ফিং করবে এটা তারা পছন্দ করে না। কিন্তু সার্ফিং আমার অসম্ভব ভাল লাগে।``কেসিঞ্জার নাসিমাকে নিয়ে বলেন, নাসিমা একজন ভাল মুসলিম স্ত্রী হতে চায়। সে চায় তার সম্প্রদায়ের সম্মানিত অংশ হতে। কিন্তু এজন্য সার্ফিংয়ের প্রতি তার তীব্র অনুরাগ ছাড়তেও সে সম্পূর্ণ নারাজ। বৃটেনের পত্রিকা `দ্য সানডে টাইমস`-এ ` বলা হয়, নানা সার্ফিং প্রতিযোগিতায় জেতা অর্থ দিয়েই চলে নাসিমার জীবিকা। তবে তা বড়ই অপ্রতুল। তাই শামুক-ঝিনুকের খোলস সংগ্রহ করে সেগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে হয় তাকে। কখনো কখনো সৈকতে উল্টো করে শুইয়ে রাখা নৌকার তলায় ঘুমিয়ে রাত কাটাতে হয়।কেসিঞ্জার ২ বছর আগে প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণের কাজে হাত দেন। সে সময় নাসিমাই ছিল বঙ্গোপসাগরের বুকে দাপিয়ে বেড়ানো একমাত্র কিশোরী। সে সংখ্যা পরে ক্রমেই দীর্ঘায়িত হয়েছে। গত বছর ১০ থেকে ১৩ বছর বয়সী ৮ জন সার্ফিং ক্লাবে ভর্তি হয়। এই তরুণী সার্ফারদেরকেও ডকুমেন্টারিতে দেখানো হয়েছে। বাংলাদেশের একটি মোবাইল ফোন প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনে স্থান করে নিয়েছে তাদের মধ্যে একজন। আর এটাকেই সমাজের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের ইঙ্গিত বলে মনে করা হচ্ছে।এসকেডি/পিআর
Advertisement