আন্তর্জাতিক

চীন-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে ভূমিকা রেখেছিলেন আনা শেনওয়াল্ট

যুক্তরাষ্ট্র, চীন এবং তাইওয়ানের মতো দেশের মাঝে মধ্যস্থতা করার মতো অত্যন্ত প্রভাবশালী একজন ব্যক্তিকে হারিয়েছে বিশ্ব। তিনি হলেন আনা শেনওয়াল্ট। গত সপ্তাহে ৯৪ বছর বয়সে মারা যান আনা। বিশ্বের খুব কম মানুষই জানতে পেরেছেন যে, তিনি কতটা গুরুত্বপূর্ণ মানুষ ছিলেন।

Advertisement

আনা চীনে চেন জিয়ানজেমি নামে পরিচিত। ওয়াশিংটন ডিসির কূটনীতিক মহলে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল তার। সেই সঙ্গে যোগাযোগ ছিল চীন আর তাইওয়ানের সরকারের সঙ্গেও।

তিনি ছিলেন একজন অনানুষ্ঠানিক কূটনীতিক কর্মকর্তা, যিনি বিংশ শতকের রাজনীতির নানা ক্ষেত্রে বিচরণ করেছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি আর রিচার্ড নিক্সনের সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছিল। চীনের নেতা ডেঙ জিয়াওপিং আর তাইওয়ানের চিয়াং কাইশেকের সঙ্গেও তিনি বৈঠক করেছেন।

Advertisement

তাকে কমিউনিজমবিরোধী বলে জানতো আমেরিকানরা। কিন্তু চীনে তাকে বিবেচনা করা হতো নামী একজন যোদ্ধার বিধবা স্ত্রী হিসাবে। আর তাইওয়ানের কাছে তিনি যথেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ একজন ছিলেন যিনি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন আদায়ে ভূমিকা রেখেছেন।

১৯২৩ সালে বেইজিংয়ে একটি শিক্ষিত আর ধনী পরিবারে তার জন্ম। হংকংয়ে পড়াশোনা শেষে একটি চীনা বার্তা সংস্থায় প্রতিবেদক হিসাবে কাজ শুরু করেন। ১৯৪৪ সালে তিনি এমন একটি দায়িত্ব পান, যা তার জীবনকে বদলে দেয়। কুনমিংয়ে মার্কিন মেজর জেনারেল ক্লারেল শেনওয়াল্টের সাক্ষাৎকার নেয়ার দায়িত্ব পান তিনি।

শেনওয়াল্ট তখন মার্কিন বিমানচালকদের স্বেচ্ছাসেবী গ্রুপ ফ্লায়িং টাইগারের দায়িত্বে ছিলেন। যারা জাপানী হামলা থেকে চীনকে রক্ষায় কাজ করছিল। দু’জনের মধ্যে ত্রিশ বছর বয়সের ব্যবধান থাকলেও, দুজনে প্রেমে পড়ে যান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর স্ত্রীকে তালাক দিয়ে চেন শিয়ানজেমিকে বিয়ে করেন শেনওয়াল্ট। তার নতুন নাম হয় আনা শেনওয়াল্ট।

তখন নিজের দুই কন্যাকে নিয়ে ওয়াশিংটনে পাড়ি জমান ৩৫ বছরের আনা। সেখানেও তিনি সাংবাদিক, অনুবাদক আর পরে স্বামীর বিমান পরিবহন ব্যবসা দেখাশোনা করেন। তার পেন্ট হাউজ অ্যাপার্টমেন্ট ছিল ওয়াটার গেট কমপ্লেক্সে। ওই ভবনেই ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারির জন্ম। সেখানে তার দেয়া পার্টিতে এসেছিলেন রিচার্ড নিক্সনও, যিনি তাকে ‘ড্রাগন লেডি’ বলে ডাকতেন।

Advertisement

তবে তিনি পুরোপুরি বিতর্কের বাইরেও ছিলেন না। তার মৃত স্বামীর একটি কোম্পানি পরে সিআইএ কিনে নেয়। বলা হয়, সেটি কমিউনিজমবিরোধী কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করা হয়েছে। এফবিআইয়ের একটি গোপন রেকর্ডিয়ে জানা যায়, তিনি তৎকালীন দক্ষিণ ভিয়েতনামের সরকারকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যেন তারা প্যারিসে শান্তি আলোচনা বর্জন করে, যা রিচার্ড নিক্সনের নির্বাচনী প্রচারণায় সহায়তা করেছিল।

তার বিরুদ্ধে এ জন্য অভিযোগ আনা হলেও পরে নিক্সন ক্ষমতায় আসার পর সেটি আর এগোয় নি। চীনে আনা শেনওয়াল্টকে দেখা হয় কিছুটা ভিন্নভাবে। চীনে এখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার ফ্লাইং টাইগার্স আর মেজর জেনারেল ক্লারেল শেনওয়াল্টকে সম্মানের চোখে দেখা হয়। আর তাই আনাকেও দেখা হয় তাদের সম্মানের ধারক হিসাবেই। এমনকি ২০১৫ সালে তাকে একটি সম্মানসূচক পদকও দিয়েছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। চীনে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের পর যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্ক তৈরিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

টিটিএন/জেআইএম