কারো অগোচরে তার দোষ, অপবাদ, দুর্নাম বা কুৎসা রটানোই হলো গিবত। যদিও তার মাঝে উল্লেখিত দোষগুলো উপস্থিত থাকে। এভাবে দোষ, দুর্নাম ও অপবাদ রটানোর ফলে মানুষের সামাজিক সম্প্রীতি ও আন্তরিকতা নষ্ট হয়। শত্রুতা ও হিংসার জন্ম নেয়।
Advertisement
এ কারণেই আল্লাহ তাআলা গিবতকে অপছন্দ করেছেন। আল্লাহ তাআলা মানুষকে লক্ষ্য করে বলেন, ‘মন্দ কথা প্রকাশ করা আল্লাহর পছন্দনীয় নয়। তবে যার ওপর জুলুম করা হয়েছে, তার কথা স্বতন্ত্র। আর আল্লাহ তাআলা সবকিছু শোনেন এবং জানেন।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১৪৮)
আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা (মানুষের) যে কোনো মন্দ কথা প্রকাশ করা বা ছড়ানোকে অপছন্দ করেন। যে বা যারা মানুষ দোষ বা মন্দ কথা সমাজে ছড়িয়ে দেবে আয়াতের নির্দেশ মোতাবেক আল্লাহর অপছন্দনীয় ব্যক্তি হিসেবে পরিগণিত হবে। আর আল্লাহর অপছন্দনীয় ব্যক্তির শেষ পরিণতি কঠোর শাস্তি ছাড়া আর কিছুই নয়।
রাসুলে আরাবি গিবতের শাস্তির বর্ণনা হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাসের বর্ণনায় এভাবে এসেছে, একবার প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দু’টি কবরের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন তিনি (সহযাত্রী সাহাবাদের) বললেন, নিশ্চয়ই এ দুই কবরবাসীকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তবে শাস্তির কারণ বড় কোনো অপরাধ নয়; বরং এ কবরবাসীর (একজন) পেশাব করার সময় সতর ঢাকা থেকে বিরত থাকতো। আর অন্যজন (মানুষের) গিবত করে বেড়াতো।’ (বুখারি)
Advertisement
আল্লাহ তাআলা গিবত করাকে ‘মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়া’র সঙ্গে তুলনা করেছেন। আর তা উল্লেখ করার কারণ হলো, মানুষ ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক, যাতে কোনোভাবে গিবতের মতো ঘৃন্য ও নিকৃষ্ট কাজে নিজেকে নিয়োজিত না করে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা বহুবিধ ধারণা থেকে দূরে থাকো। কারণ কোনো কোনো ধারণা পাপ; এবং তোমরা একে অপরের গোপনীয় বিষয়ের সন্ধান করো না এবং একে অপরের পেছনে নিন্দা (গিবত) করো না। তোমাদের মধ্যে কি কেউ তার মৃত ভাইয়ের মাংস খেতে খেতে চাইবে? তোমরা তো এটাকে ঘৃন্যই মনে করো। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আল্লাহ তাওবা গ্রহণকারী পরম দয়ালু।’ (সুরা হুজরাত : আয়াত ১২)
আলোচ্য আয়াতের মূল টপিক হলো ‘মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়া’। নিঃসন্দেহে মুমিন মুসলমানের কাছে পারস্পরিক নিন্দা অত্যন্ত মন্দ ও গর্হিত কাজ। যা অন্য ভাই শোনলে মনে চরম কষ্ট পাবে। পরস্পরের মাঝে শত্রুতা-বিদ্বেষ সৃষ্টি হবে। পরিবার ও সমাজে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা বাড়তে থাকবে। তাই গিবত নামক মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়া থেকে বিরত থাকার কথা তুলে ধরা হয়েছে।
এ আয়াতের প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রিয়নবি থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা আন্দাজ-অনুমান থেকে বেচে থাকো। কেননা অনুমান করে কথা বলা সবচেয়ে বড় মিথ্যাচার।’ (বুখারি ও মুসলিম)
Advertisement
যেহেতু আল্লাহ তাআলা গিবত করাকে মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন। সুতরাং গিবত নামক গর্হিত ও সামাজিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরি।
কেননা আল্লাহ তাআলা মানুষকে এ ব্যাপারে চরম হুশিয়ারি প্রদান করে বলেন, ‘এমন ব্যক্তির জন্য দুর্ভোগ (কষ্ট-শাস্তি) নির্ধারিত যে সামনে এবং পেছনে নিন্দা করে।’ (সুরা হুমাজাহ : আয়াত ১)
গিবতের মতো মারাত্মক অপরাধ থেকে বিরত থাকতে প্রিয়নবি এ হাদিসটি সব সময় স্মরণ রাখি। আর তা হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘নিশ্চয়ই বান্দা এমন কিছু কথা বলে, সে কথার পরিণাম সম্পর্কে মোটেও চিন্তা করে না। অথচ এ (মন্দ) কথা বলার কারণে সে জাহান্নামের এমন গভীরে
আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: এরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই বান্দা এমন কিছু কথা বলে; যে কথার পরিণাম সম্পর্কে চিন্তাও করে না। অথচ এ কথা বলার কারণে তাকে নিক্ষেপে করা হবে জাহান্নামের এমন গভীরে, যার (দুনিয়ার) দূরত্ব বা সীমানা হলো পূর্ব থেকে পশ্চিম দিগন্তের চেয়েও বেশি।’ (বুখারি)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ার সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও ঘৃণিত কাজ; নিজের ভাইয়ের গোস্ত ভক্ষনের মতো গর্হিত কাজ গিবত থেকে বিরত রাখুন। কুরআন-সুন্নায় ঘোষিত গিবতের ভয়াবহতা থেকে হেফাজত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম