জাতীয়

মরে যাচ্ছে ঘাস: সৌন্দর্য হারাচ্ছে হাতিরঝিল

রাজধানীর দৃষ্টিনন্দন জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম হাতিরঝিল। এর নির্মাণশৈলীর পাশাপাশি অপরূপ সৌন্দর্য নগরবাসীকে হাতছানি দিয়েই ডেকেছিল। কিন্তু বর্তমানে নিজের রুপ হারাচ্ছে বসেছে হাতিরঝিল। পুরো হাতিরঝিল জুড়ে লাগানো ঘাস অনেক স্থানেই মরে যাচ্ছে। অনেক জায়গায় সবুজ ঘাসের উপর দিয়ে পথচারির চলাচলে ঘাসগুলো হয়েছে বিবর্ণ। তবে এর কারণ হিসেবে হাতিরঝিলে গড়ে উঠা দোকানগুলোকে দায়ি করছেন আগুন্তুকরা।

Advertisement

চারপাশে গাছ-গাছলা, বসার সু-ব্যবস্থা, আলোকসজ্জা, পানির নৃত্যসহ নিরিবিলিতে বসে একটু সময় কাটানোর জন্য রাজধানীবাসীর কাছে হাতিরঝিল বেশ প্রিয় একটি স্থান ছিল। কিন্তু বর্তমানে হাতিরঝিলের বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমাণ ও স্থায়ী মিলে প্রায় ২৯টি দোকান বরাদ্দ দেওয়া আছে। এসব দোকান রাস্তার পাশে বা ফুটপাত দখল করে বসানো হয়েছে অনেক জায়গায়। পাশাপাশি এসব দোকানের ক্রেতাদের জন্য বসার জায়গা করতে সৌন্দর্য বাড়ানো সবুজ ঘাসের উপরে রাখা হয়েছে চেয়ার। এসব ঘাসগুলোও এখন বিবর্ণ। অথচ সৌন্দর্য বাড়াতে অনেক টাকা খরচ করে এসব ঘাস লাগানো হয়েছিল।

কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে চালু হলেও নিয়মনীতি না মেনে দোকান চালানোয় নষ্ট হচ্ছে হাতিরঝিলে গাছপালা। হাতিরঝিলের পানিতে এসব দোকানের বর্জ্য ফেলায় দূষণের আশঙ্কাও বাড়ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ময়লা-আবর্জনায় লেকের পানি থেকে আসছে উৎকট গন্ধ।

স্থায়ী দোকান ছাড়াও বরাদ্দ পাওয়া অনেকেই হাতিরঝিলের উন্মুক্ত স্থান দখল করে পিকআপ ভ্যানে খাবারের দোকান পরিচালনা করছেন। কেউ কেউ ফুটপাতে খাবারের গাড়ি রাখার জন্য স্থায়ীভাবে জায়গাও করে নিয়েছে। আবার অনেকেই ত্রিপল, ছাতা আর চেয়ার, টেবিল দিয়ে বরাদ্দের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি জায়গা দখল করে রেখেছে। এছাড়াও রয়েছে খাবারের গাড়ির নামে বড় বড় ভ্রাম্যমাণ ট্রাক।

Advertisement

শুরুতে অস্থায়ীভাবে বসানো হলেও পরবর্তীতে লোহার অ্যাংগেল দিয়ে বিশাল এলাকায় শামিয়ানা টানিয়ে স্থায়ী করা হয়েছে। আর এসব দোকানে মানুষের আনাগোনার কারণেও ফাঁকা জায়গার ঘাসগুলো মরে যাচ্ছে।

হাতিরঝিলে ঘুরতে এসেছেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে একজন শিহাবুল ইসলাম শিহাব। তিনি বলেন, আমরা প্রায়ই হাতিরঝিলে ঘুরতে আসি। তবে হাতিরঝিলে অনেকগুলো দোকান গড়ে ওঠার কারণে এর সৌন্দর্য আর আগের মতো নেই। আমরা আগে অনেক সময় ঘাসের উপর বসে থাকতাম, কিন্তু এখন দোকান বসানোয় ক্রেতাদের হাটাচলাতে এসব ঘাস মরে যাচ্ছে। ফাঁকা স্থানগুলো দখল করে দোকানিরা কাস্টমারদের জন্য বসার জায়গা করেছে। ফলে মানুষের অতিরিক্ত পদচারণায় এসব ঘাস নষ্ট হচ্ছে।’

এদিকে এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে হাতিরঝিলে গড়ে ওঠা এক অস্থায়ী দোকানের মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অনেক টাকা দিয়ে দোকার জন্য জায়গা নিয়েছি আমরা। আর টাকার তুলনায় জায়গা অনেক ছোট, তাই কাস্টমারদের বসার জায়গা করেছি ফাঁকা জায়গায়। আমাদের কারণে এখানকার ঘাসগুলো নষ্ট হচ্ছে এটা ভুল তথ্য। তবে কাস্টমারদের বসার জায়গা করায় এখানে আসা যাওয়ার কারণে কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়া দোকানের ময়লা-আবর্জনা আমরা যেখানে সেখানে ফেলিনা।’

তিনি বলেন, আমরাও চেষ্টা করি পরিচ্ছন্ন রাখতে। তবে অবিবেচক কিছু কাস্টমার তাদের খাবারের উচ্ছিষ্ট অংশ যেখানে সেখানে ফেলতে পারে, তবে এ দোষ আমাদের না।’

Advertisement

মাস্টারপ্ল্যানের সঙ্গে ‘অসংগতিপূর্ণ’ এ ধরনের দোকান ঝিলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর নান্দনিকতা নষ্ট করছে-এ বিষয় নিয়ে সমালোচনা শুরু হলে স্থায়ী রেস্তোরাগুলো উচ্ছেদের বিষয়ে গত ফেব্রুয়ারি মাসে সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। তবে সিদ্ধান্তের এক মাস পার হয়ে গেলেও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।

হাতিরঝিলে দোকানপাট বিষয়ে জানতে চাইলে হাতিরঝিল প্রকল্প পরিচালক জামাল আকতার বলেন, ‘উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমাদের উদ্যোগ আছে, আমরা কাজ করবো। দর্শনার্থীদের কথা চিন্তা করে আগে কিছু ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। আর ভ্রাম্যমাণ দোকানসহ অন্যান্য দোকানের ময়লা-আবর্জনা যেন পানিতে না ফেলে, সৌন্দর্য বা পরিবেশ যেন নষ্ট না হয়-সে বিষয়ে দোকানিদের আগেই চিঠি দেওয়া হয়েছিলো।

এএস/এসআর/আরআইপি