অবশেষে চূড়ান্তভাবে জানা গেল কার হাতে উঠছে ২০১৬ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। জানা গেল, এবার আজীবন সম্মাননা যৌথভাবে পাচ্ছেন চলচ্চিত্রের দুই কিংবদন্তি ববিতা ও ফারুক। জাগো নিউজের কাছে এই সম্মননা পাওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করেছেন ববিতা।
Advertisement
অসংখ্য জনপ্রিয় ছবির নায়িকা ববিতা বলেন, ‘চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য এর আগেও পুরস্কার পেয়েছি। কিন্তু এবার যে পুরস্কারটি দেওয়া হচ্ছে সেটা আমার পুরো অভিনয় জীবনের জন্য। আগের সব পুরস্কার পাওয়ায় ছিলো অনেক আনন্দের কিন্তু সারা জীবনের কাজের জন্য রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়া আরও বেশি সুখের। এই খবরটি শুনে মনে হচ্ছে চলচ্চিত্রের জন্য কিছু একটা করতে পেরেছি। দর্শকের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি। রাষ্ট্রীয় সম্মান পেয়ে অনেক ভালো লাগছে।’
ববিতা আরও বলেন, ‘তার মানে এই নয় আমি এখানেই থেমে যাবো। আমি মনে করি আরও অনেক দূর এগিয়ে যেতে হবে আমাকে। সেই সুযোগ আমার কাছে আছে। ভালো কাজের করা সুযোগ আসলে অবশ্যই করবো।’
প্রসঙ্গত, ববিতার পুরো নাম ফরিদা আক্তার পপি। ১৯৫৩ সালের ৩০ জুলাই বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলায় জন্ম নেন। তার বাবা নিজামুদ্দীন আতাউর একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন এবং মাতা বি. জে. আরা ছিলেন একজন চিকিৎসক।
Advertisement
বাবার চাকরি সূত্রে তারা তখন বাগেরহাটে থাকতেন। তবে তার পৈতৃক বাড়ি যশোর জেলায়। শৈশব এবং কৈশরের প্রথমার্ধ কেটেছে যশোর শহরের সার্কিট হাউজের সামনে রাবেয়া মঞ্জিলে।
তিন বোন ও তিন ভাইয়ের মধ্যে বড়বোন সুচন্দা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী, বড়ভাই শহীদুল ইসলাম ইলেট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, মেজভাই ইকবাল ইসলাম বৈমানিক, ছোটবোন গুলশান আখতার চম্পা চলচ্চিত্র অভিনেত্রী এবং ছোটভাই ফেরদৌস ইসলাম বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দা।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে দুই শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন ববিতা। চলচ্চিত্রে তার শুরুটা হয়েছিল গত শতকের ষাটের দশকের শেষ দিকে। ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী পপি (ববিতার ডাক নাম) সংসার ছবিতে রাজ্জাক ও সুচন্দার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেন। ছবির নির্মাতা ছিলেন জহির রায়হান। ছবিটি মুক্তি পায়নি। জহির রায়হান ববিতাকে নিয়ে ‘জ্বলতে সুরুজ কা নিচে’ নামে একটি উর্দু ছবির কাজ শুরু করেন। মাঝপথে থেমে যায় ছবিটির কাজ। এরপর জহির রায়হান রাজ্জাক ও ববিতাকে নিয়ে তৈরি করেন চলচ্চিত্র ‘শেষ পর্যন্ত’। আর এটিই ছিল ববিতার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র।
অভিনয় জীবনে ববিতা সবেচেয় বেশি সাফল্য পেয়েছেন নায়করাজ রাজ্জাক, ফারুক ও জাফর ইকবালের সঙ্গে জুটি বেঁধে। তিনি সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র অঙ্গনে প্রশংসিত হন। তিনি পরপর তিন বছর একটানা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জেতেন। ‘অশনি সংকেত’ চলচ্চিত্র ‘অনঙ্গ বউ’ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি বেঙ্গল ফ্লিম জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সর্বভারতীয় শ্রেষ্ঠ নায়িকার পুরস্কার পান।
Advertisement
এছাড়াও সরকারি এবং বেসরকারি অসংখ্য পুরস্কার তিনি লাভ করেছেন। এজন্য তাকে ‘পুরস্কার কন্যা’ বলা হতো। তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে সবচেয়ে বেশিবার আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
এমএবি/এলএ/জেআইএম