বর্তমানে চাকরির ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই নারীরা। শিক্ষাগ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে তারাও সমানতালে এগিয়ে যাচ্ছেন। তবে আজকের গল্পটি একটু পেছনের। যখন আমাদের দেশে এমন সচেতনতার সৃষ্টি হয়নি। সে দিনের কথাই শোনাচ্ছেন ফাতিমাতুজ জোহরা-
Advertisement
‘ঘরের বউ কেন চাকরি করবে?’- একসময় এ কথাটির প্রচলন ছিল। তাই তাদের মেয়েদেরও লেখাপড়া করাতো না। এমনকি ঘরের বউদেরও না। কিছু পরিবারে লেখাপড়া সীমাবদ্ধ ছিল ৫ম শ্রেণি পর্যন্ত। কিংবা বড়জোর দশম শ্রেণি পর্যন্ত। এরই মধ্যে মেয়েদের বিয়ে হয়ে যেত। তারপর সংসারের কাজ, সন্তান লালন-পালন সব এসে পড়ে এই অপ্রাপ্তবয়স্ক নারীর ওপর।
আমার নানা শিক্ষক হয়েও তার মেয়েকে (আমার মা) পড়াশোনা না করিয়ে বাল্যবিবাহ দিয়েছিলেন। তখন বাল্যবিবাহ নিয়েও একজন শিক্ষিত মানুষের কোনো মাথাব্যথা ছিল না। এখনো কোনো কোনো অঞ্চলে রয়ে গেছে বাল্যবিবাহের প্রচলন। আমি নিজেও এর শিকার। তবে আমার মা প্রবল ইচ্ছাশক্তির ওপর নির্ভর করে বিএ পাস করেছেন। এতে সহায়তা করেছেন আমার বাবা। আমার মা চাকরিও করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সে সময়ের রীতি- ‘ঘরের বউ কেন চাকরি করবে?’
আমরা তিন বোন, এক ভাই যে কখন বড় হয়ে গেলাম তা উপলব্ধি করতেই পারিনি। কষ্ট কী তা আমরা কখনো বুঝতে পারিনি। আর কখনো বুঝতেও চাইনি। ছোটবেলা থেকে যা কিনে দিতো, তাতেই খুশি ছিলাম। কখনোই নতুন জামা-জুতার প্রতি আকর্ষণ ছিল না কারও। ঈদ, কুরবানি এলে সবাই ঈদের মার্কেট করতো। আমরা পাশের বাসায় তা দেখতে যেতাম। কিন্তু কখনোই মনে আশা জাগেনি ওদের মতো ড্রেস কেনার।
Advertisement
তবে এ পরিবারে জন্মগ্রহণ করে আমরা গর্বিত। কারণ আমাদের বাবা-মা কখনো আমাদের পড়াশোনা থেকে দূরে রাখেননি। আমার মা হাঁস-মুরগি পালন করে, তা বিক্রি করে আমাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। কোনো কোনো দিন টাকা না পেলে কলেজে যাওয়া হয় না। আবার কোনো কোনো কারো কাছ থেকে টাকা ধার এনে কলেজে যেতে হয়। এভাবেই আজ আমার বড় বোন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। মেজ বোন বরিশাল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডুয়েট অ্যাডমিশনে আছে। আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে হলেও পড়াশোনা কিন্তু থেমে নেই। তবে ‘ঘরের বউ চাকরি করতে পারবে না’ পরিস্থিতিতে আছি।
আমার প্রশ্ন- যদি কারো বোন বা মেয়ে চাকরি করতে পারে, তাহলে কেন কারো বউ চাকরি করতে পারবে না। তবে যা-ই হোক, আমার পড়াশোনা চলবে। আমাকে সাহস জোগাবে আমার মা, বাবা, স্বামী। নিজের ইচ্ছাশক্তির ওপর নির্ভর করে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছি। তাই আমি চাই- সেই প্রবাদ যেন আমি ভাঙতে পারি। বেগম রোকেয়া যেমন স্বামীর সহায়তায় নারী জাগরণের অগ্রদূত হয়েছেন, তেমনি আমিও আমার স্বামীর সহযোগিতায় যেন বড় কিছু করতে পারি।
সবশেষে বলব, চাকরি আমি করবোই, চাকরি আমার চ্যালেঞ্জ। যত বাধাই আসুক। যেন আমার মা গর্ব করে বলতে পারে, ‘আমি পারিনি তো কী হয়েছে? আমার মেয়ে তো পেরেছে।’ আমিও চাই- আমার মা যেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা হন। প্রত্যেক মা যেন কষ্ট করে হলেও তার কন্যাসন্তানকে শিকড় থেকে শিখরে পৌঁছে দিতে পারেন।
লেখক: শিক্ষার্থী
Advertisement
এসইউ/জেআইএম