আইন-আদালত

সুন্দরবনের নিকটবর্তী ২৪ প্রতিষ্ঠান ‘হুমকিস্বরূপ’

বিশ্বের প্রথম ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে স্বীকৃতি বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের আশেপাশে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ১৯০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে দাখিল করা প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। যার মধ্যে ২৪টি প্রতিষ্ঠান লাল শ্রেণিভুক্ত। এসব প্রতিষ্ঠান পরিবেশের জন্য ব্যাপক হুমকিস্বরূপ বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এ প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। পরে মামলার শুনানির জন্য আাগমী ৯ মে দিন ঠিক করা হয়েছে। আদালতে আজ রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ১৯০টি শিল্প প্রতিষ্ঠান আছে। যার মধ্যে ২৪টি লাল এবং বাকিগুলো কমলা ও সবুজ শ্রেণির।

প্রতিবেদন দাখিলের পর আদালত বলেছেন, ১৯৯৯ সালের ৩০ আগস্টের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী পরিবেশগত প্রতিপন্ন এলাকায় লাল শ্রেণির শিল্প প্রতিষ্ঠান থাকার সুযোগ নেই। কারণ এগুলো মাটি, পানি ও বায়ু ব্যাপকভাবে দূষিত করে।

Advertisement

২০১৭ সালের ২৩ আগস্ট হাইকোর্ট সুন্দরবনের আশপাশে নতুন শিল্প-কারখানা অনুমোদনের উপর নিষেধাজ্ঞা দেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি জে বি এম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। একই সঙ্গে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে শিল্প কারখানা স্থাপনের অনুমোদন কেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের ১৯৯৯ সালের ৩০ আগস্টের প্রজ্ঞাপনের লঙ্ঘন হবে না এবং নতুন শিল্প কারখানা কেন অপসারণ করা হবে না -তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়।

এছাড়া ওই ১০ কিলোমিটারের মধ্যে বর্তমানে কতগুলো শিল্প-কারখানা রয়েছে তার তালিকা তৈরি করে ছয় মাসের মধ্যে দাখিল করার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা দেন আদালত।

সুন্দরবনের আশেপাশে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা শিল্প-কারখানার অন্যত্র সরিয়ে নিতে সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের সভাপতি শেখ ফরিদুল ইসলাম ২০১৭ সালের ৪ এপ্রিল হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। রিটে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি), খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও বরগুনা জেলা প্রশাসক (ডিসি) এবং পুলিশ সুপার (এসপি) বিবাদি করা হয়।

রিট আবেদনে বলা হয়, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় ১৯৯৯ সালের ৩০ আগস্ট এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সুন্দরবনকে সংরক্ষিত বন এবং এর চারপাশে ১০ কিলোমিটার এলাকাকে পরিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। এ প্রজ্ঞাপন অনুসারে সুন্দরবনের চারপাশে ১০ কিলোমিটার এলাকায় ভূমি, পানি, বায়ু ও শব্দ দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা যাবে না।

Advertisement

পরিবেশ অধিদফতর ইতোমধ্যে প্রায় ১৫০টি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে প্রকল্প করার জন্য অবস্থানগত ছাড়পত্র দিয়েছে। যার মধ্যে জাহাজ ভাঙা শিল্পসহ পরিবেশ দূষণকারী প্রকল্প রয়েছে বলেও গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়। এসব শিল্পকারখানা স্থাপনের অনুমোদন দেয়া সংবিধানের ১৮(ক) অনুচ্ছেদ ও পরিবেশ আইন ১৯৯৫-এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এছাড়া এসব শিল্প কারাখানা সুন্দরবনের জন্য হুমকিস্বরূপ বলেও রিট আবেদনে দাবি করা হয়।

এফএইচ/আরএস/আরআইপি