জাতীয়

ক্লাস সেভেন থেকে তরমুজের ব্যবসা মাস্টার্স শিক্ষার্থীর

মঙ্গলবার আনুমানিক বেলা ১১টা। রাজধানীর বৃহৎ ফলের আড়ত বাদামতলীর বেপারি, পাইকার ও শ্রমিকরা নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত। বুড়িগঙ্গা নদীর দিকে তাকাতেই চোখে পড়ে সারিসারি নৌকা ও ট্রলারবোঝাই করা তরমুজ। তার পাশেই একটি ছাউনির নিচে বসা কয়েকজন।

Advertisement

এদের কেউ তরমুজের চাষী, কেউ বেপারি, আবার কেউ পাইকারি ক্রেতা। তাদের কথোপকথন থেকে সহজেই বোঝা গেল তরমুজ কেনা-বেচা নিয়েই তাদের আলাপন। ছাউনিটির বিপরীত দিকে তাকাতেই চোখে পড়ল এক তরুণ, রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে তরমুজবোঝাই নৌকা-ট্রলারের দিকে তাকিয়ে আছে।

কিছুক্ষণ পর তার পাশে এসে দাঁড়ালেন মধ্যবয়সী একজন। কয়েক মিনিট চলল তাদের কথোপকথন। কিছুটা আগ্রহ নিয়ে ওই তরুণের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তিনি কবি নজরুল সরকারি কলেজের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। পড়ালেখার পাশাপাশি প্রায় এক যুগ ধরে তরমুজ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তার নাম মাহফুজুর রহমান। গ্রামের বাড়ি বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলায়।

এ ব্যবসার সঙ্গে জড়ানোর বিষয়ে মাহফুজুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, পৈত্রিক ব্যবসার সূত্র ধরে তরমুজ ব্যবসার সঙ্গে জড়াই। আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি তখন থেকে এ ব্যবসার সঙ্গে আছি। প্রায় ১২ বছর। ব্যবসার পাশাপাশি নিজের পড়ালেখাও চালিয়ে যাচ্ছি। কবি নজরুল সরকারি কলেজ থেকে এবার মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়েছি। এখনও রেজাল্ট হয়নি। আশা করছি রেজাল্ট ভালো হবে।

Advertisement

পড়ালেখার পাশাপাশি ব্যবসার সঙ্গে জড়ালেও কোনো সমস্যা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পড়ালেখার পাশাপাশি ব্যবসা করছি, এতে কোনো সমস্যা হয়নি। বরং বেশি উৎসাহ পেয়েছি। কারণ নিজের তো কিছু খরচ আছে, সেই খরচের জন্য অন্য কারও ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়নি। বরং চাইলে বাড়িতেও কিছু টাকা পাঠাতে পারছি।’

‘তরমুজের ব্যবসা সিজনাল, এটা তিন মাসের জন্য। এ ব্যবসা পেশা হিসেবে নেয়া যায় না। দেখা যাচ্ছে, বাব-দাদার জমি আছে, কিছু না কিছু তো চাষ করতে হবে। সেজন্য আমরা তরমুজ চাষ করি। আমাদের অঞ্চলের তরমুজ খুবই সুস্বাদু। এর চাহিদা অনেক বেশি। এটি চাষ করে ভালো মুনাফাও পাওয়া যায়। তবে মাঝেমধ্যে লোকসান হয়। যেমন গত বছর শিলাবৃষ্টির কারণে আমাদের ২০ লাখ টাকার মতো লোকসান হয়।’

পড়ালেখার পাশাপাশি কীভাবে ব্যবসা সামলান- জানতে চাইলে মাহফুজুর রহমান বলেন, আমি ঢাকায় থেকে পড়ালেখা করি। গ্রাম থেকে লঞ্চে তরমুজ ঢাকায় পাঠিয়ে দেয়, সঙ্গে আমাদের একজন লোক থাকে। ঢাকায় পৌঁছানোর পর বিক্রির দায়িত্ব থাকে আমার। আমি আড়তে নিয়ে বিক্রির পরবর্তী কাজগুলো করি।

তরমুজের চাষাবাদ সম্পর্কে তিনি বলেন, এবার ফলন খুব ভালো হয়েছে। আমরা ১৪ কানির (১০ বিঘায় এক কানি) কিছু বেশি জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। চাষ করতে ১৬ লাখ টাকার ওপরে খরচ হয়েছে। সব খরচ বাদ দিয়ে আশা করছি এবার সাত থেকে আট লাখ টাকার মুনাফা হবে।

Advertisement

ভবিষ্যত পরিকল্পনা হিসেবে তিনি বলেন, ‘ইচ্ছা আছে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার। তবে সেটা তরমুজের নয়। অন্য কোনো ব্যবসায় জড়ানোর ইচ্ছা আছে। এরপরও যেহেতু আমাদের জমি আছে তাই অন্য ব্যবসার পাশাপাশি তরমুজের ব্যবসাও থাকবে।

এমএএস/জেডএ/পিআর