মধ্য তিরিশের মাশরাফি সর্বাধিক উইকেট শিকারী। তার সমসাময়িক মোহাম্মদ আশরাফুল সর্বাধিক পাঁচ সেঞ্চুরির মালিক। ৬৬৫ রান করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীর তালিকায় এখন তিন নম্বরে আশরাফুল। নাঈম ইসলামের ব্যাটও কথা বলেছে। ৬৪৪ রান করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীদের মধ্যে পাঁচ নম্বরে নাঈম। একই বয়সের শাহরিয়ার নাফীসের ব্যাট থেকেও একজোড়া শতক বেরিয়ে এসেছে। এ বাঁ-হাতি ওপেনার ৫২৬ রান করে রান তোলায় ১১ নম্বরে। ৬৩২ রান করে ৬ নম্বরে মার্শাল আইয়ুব। ওদিকে ৩০-এ পা রাখা ফরহাদ রেজাও দ্বিতীয় সর্বাধিক ২৮ উইকেট শিকারী।
Advertisement
সে তুলনায় জাতীয় দলের তরুণরা সেভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে এনামুল হক বিজয় (সর্বাধিক ৬৮৭ ) আর নাজমুল হোসেন শান্ত ৬৩৬ (রান তোলায় ষষ্ঠ), দল সুপার লিগে উঠতে না পারলেও ৯ ম্যাচ খেলা লিটন দাস তিন সেঞ্চুরি আর এক হাফ সেঞ্চুরিতে ৫৩২ রান করে সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়েছেন। এছাড়া জাতীয় ক্রিকেটারের তকমা আঁটা আর কেউ ভাল খেলতে পারেননি এবারের প্রিমিয়ার লিগে।
সাব্বির রহমান রুম্মন নিষিদ্ধ। ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, মুমিনুল হক- কেউই সুবিধা করতে পারেননি। মোটা দাগে বলতে গেলে বলতে হবে, এবারের লিগে তরুণদের পারফরমেন্স খুব একটা আহামরি নয়। আশাব্যাঞ্জকও নয়। দেশের ক্রিকেটের বৃহত্তর স্বার্থে ও জাতীয় দলের পাইপ লাইন লম্বা এবং সমৃদ্ধ করতে তরুণদের ভাল খেলা এবং উঠে আসা যে খুব জরুরি।
আগের দিন মাশরাফি বিন মর্তুজাও এ সম্পর্কে আকার ইঙ্গিতে বলেছেন। আজ তামিম ইকবালের কন্ঠেও সে আক্ষেপ। তামিমও মনে করেন, তরুণরা জ্বলে উঠলে ভাল খেললে সেটা দেশের ক্রিকেটের জন্যই ভাল।
Advertisement
তাই তো মুখে এমন কথা, ‘অবশ্যই তরুণদের কাছ থেকে যদি আরো বেশি অবদান পাওয়া যায়, তাহলে এটা দলের জন্য খুবই ভালো হবে; কিন্তু আমি আসলে সব সময় দেখি ওরা কঠোর পরিশ্রম করে। হয়তো বা রেজাল্টটা পাচ্ছে না। তবে আমি আশা করি খুব দ্রুত ওরা ফল পাবে এবং আরো বেশি অবদান রাখতে পারবে জাতীয় দলের জন্য। যদি আমাদের চার-পাঁচজনের (সিনিয়রদের) সাথে ওরাও অবদান রাখতে শুরু করে, তাহলে আমরা আরো ভালো দল হয়ে উঠতে পারবো।’
ঢাকা লিগে তরুণরা প্রত্যাশা পূরণ করতে না পারায় তামিমও খানিক হতাশ। এ কারণে মুখ ফুটে তিনি বলেই ফেলেছেন, ‘খেলোয়াড়দের কাছ থেকে শুনেছি, এ বছরের উইকেট খুব ভালো ছিলো। তরুণরা যদি আরো একটু ভালো করতো, তাহলে অনেক ভালো হতো। তবে একেবারে যে ভালো করে নাই, সেটা বলা ভুল হবে। বিজয় (এনামুল হক) রান করেছে, শান্ত (নাজমুল হোসেন) কিছুটা রান করেছে। এটা বলতে পারেন, আরো বেশি তরুণরা যদি রান করতো, তাহলে আরো ভালো হতো। আসলে অতটা খেলা দেখা হয় নাই, সুতরাং খুব বেশি কথা না বলাই ভালো। (জাতীয়) দলে যে তরুণরা আছে, তারা খুব চেষ্টা করে। কখনো কখনো তারা আমাদের (সিনিয়রদের) চেয়েও বেশি পরিশ্রম করে। শুধু রেজাল্টটা পাচ্ছে না। এটা গেম প্ল্যানের কারণে হতে পারে। আমার বিশ্বাস, বেশি দিন নয়, ওরাও বড় বড় পারফরমার হয়ে উঠতে পারবে।’
ঢাকাই লিগে আগে কখনোই যা হয়নি। এবার তা হয়েছে। এবার লিগে এখন পর্যন্ত ৪৭টি সেঞ্চুরি হয়েছে। এটাকে এক রকম প্রাপ্তি ও ইতিবাচক দিক আখ্যা দিয়ে তামিম বলেন, ‘এটা অবশ্যই ইতিবাচক ইঙ্গিত। আপনি যেখানেই রান করুন না কেনো ,সেটা বড় ব্যাপার। বোলারদের মান কেমন ছিলো সেটা বড় নয়। রান করাটাই বড় কথা। অনূর্ধ্ব-১৩ দলে হোক বা জাতীয় দলে হোক, রান করা সহজ কাজ নয়। ৪৭টি সেঞ্চুরি অনেক বড় ব্যাপার। আশা করি সামনে আরো বাড়বে।’
অন্যদিকে বোলারদের পারফরমেন্সে হতাশ তামিম মনে করেন বোলিংয়েং উন্নতি দরকার। তামিমের উপলব্ধি শুধু ব্যাটসম্যানরা নয়, দলগত সাফল্যে বোলারদের ভূমিকাও থাকে যথেষ্ট। ২০১৫ সালে ভারত, পাকিস্তান আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঘরের মাঠে তিনটি ওয়ানডে সিরিজ বিজয়েও ব্যাটসম্যানদের পাশাপাশি বোলারদের অবদান ছিল প্রচুর।
Advertisement
সেই উদাহরণ টেনে তামিম বলেন, ‘এই একটা জায়গায় (বোলিংয়ে) আমাদের খুব দ্রুত উন্নতি করা দরকার। কারণ জাতীয় দলেও যদি দেখেন, আমি বিশ্বাস করি যে- বোলাররাই আমাদের ম্যাচ জেতায়। বড় বড় জয় যদি দেখেন, ভারত-সিরিজ (২০১৫), দক্ষিণ আফ্রিকা-সিরিজ (২০১৫) বা পাকিস্তান-সিরিজ (২০১৫)। হ্যাঁ, ব্যাটসম্যানরা পারফর্ম করেছে, সঙ্গে বোলাররাও বিশাল দায়িত্ব পালন করেছে দেখেই আমরা জিতেছি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলিং বিভাগ যদি সেরা পারফরম্যান্স এনে দেয়, তাহলে ম্যাচ জেতা সহজ হয়ে যায়। আমি আশা করবো, আমাদের যে বোলাররা ফর্মে নেই, তারা দ্রুত তাদের সেরা অবস্থায় এসে যাবেন। জাতীয় দলের ব্যাটিং বিভাগটা একটু স্থির এখন। এর সঙ্গে বোলিং বিভাগ যদি পারফর্ম করা শুরু করে, তাহলে কঠিন কঠিন ম্যাচও আমরা জিততে শুরু করবো।’
এআরবি/আইএইচএস/আরআইপি