মতামত

প্রশ্নফাঁস জাতির আত্মহননের একধাপ

সোমবার থেকে শুরু হয়েছে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা। আমার ধারণা, শিক্ষা জীবনের সবচেয়ে কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার নাম এইচএসসি বা উচ্চ মাধ্যমিক। অথচ প্রতিবারই এইচএসসিসহ সব পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হবার অভিযোগ উঠছে।

Advertisement

এবারও ফেসবুকে অনেকেই ফোন নম্বরসহ পরীক্ষার আগেই প্রশ্নপত্র পাইয়ে দেয়ার বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। এ ব্যাপারে যদিও বগুড়া থেকে রোববার রাতে ভুয়া প্রশ্নফাঁস চক্রের একজন সদস্যকে আটক করা হয়েছে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি আমাদের সমস্ত শিক্ষা ব্যবস্থায় এক বিষফোঁড়া হয়ে দেখা দিয়েছে। 

আমাদের শিক্ষা প্রশাসন, শিক্ষা ব্যবস্থাপক, শিক্ষকদের একটি অংশ এবং অভিভাবকরাও এতে জড়িয়ে পড়েছেন। এর চেয়ে দুঃখের এবং লজ্জার আর কিছু হতে পারে না। ‘পরীক্ষায় অসদুপায়’ বা ‘নকল’ ইত্যাদি যে এই দেশে কোন কালে ছিল না তা নয়। ‘চোথা’, ‘টুক্লিফাইং’, ‘গণটোকাটুকি’ প্রায় সব সময়ই ছিল। তাই বলে উত্তরসহ পুরো প্রশ্নপত্র ফাঁস এমনভাবে আগে কখনো দেখা যায়নি। শিক্ষামন্ত্রণালয় বহুকিছু করেও স্থায়ীভাবে কোচিং সেন্টার বন্ধ করতে পারছে না। শিক্ষামন্ত্রী নিজেই বলেছেন, ৩২ হাজার কোটি টাকার এই কোচিং বাণিজ্য।

রাতারাতি হয়তো শতভাগ নির্মূল করা সম্ভব নয়, তবে সরকার আন্তরিকভাবে চাইলে কোন কিছু হয় না এটা বিশ্বাস করা খুব কঠিন। লোক দেখানো সমাধান বা ‘কুইক ফিক্স’ দিয়ে খুব একটা লাভ নেই, প্রয়োজন মূলোৎপাটন। আজ পর্যন্ত দেশের প্রযুক্তিবিদ আর শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকে নিয়ে একটা পরামর্শ সভা হয়েছে বলে শুনিনি। যেখানে সবাই জানছেএবং দেখছে, সেখানে শিক্ষামন্ত্রণালয় বহুদিন এই অভিযোগ অস্বীকার করে গেছে।

Advertisement

‘প্রশ্নপত্র ফাঁস’ নামক এই মহামারী আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে একেবারে ধ্বংসের দাঁড়প্রান্তে নিয়ে যাচ্ছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রীপরিষদের সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ, শিক্ষামন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দসহ শিক্ষক, অভিভাবক সবাই মিলে এই ভয়ঙ্কর অভিশাপ থেকে মুক্ত হবার জন্য একটি আন্দোলন গড়ে তোলার কোনো বিকল্পনেই।

লেখক : অধ্যাপক একেএম মাজহারুল ইসলাম, বিভাগীয় প্রধান, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

এইচআর/পিআর

Advertisement