ভারতে নিম্নবর্ণের দলিত সম্প্রদায়ের বেশ কয়েকটি সংগঠনের ডাকা ‘ভারত বন্ধ’ থেকে ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। দেশটির সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের বিরদ্ধে ডাকা দলিতদের ভারত বন্ধে সোমবার অন্তত চারজনের প্রাণহানি ঘটেছে।
Advertisement
এর আগে গত ২০ মার্চ দেশটির সুপ্রিম কোর্ট জানায়, তফশিলি জাতি ও উপজাতিদের উপর নির্যাতন বন্ধের যে আইন রয়েছে, তা সরকারি কর্মীদের বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। নিয়োগ কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া এই আইনে কোনো সরকারি কর্মীকে গ্রেফতার করা যাবে না।
সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে সোমবার দলিতদের বেশ কয়েকটি সংগঠন ভারত বন্ধের ডাক দেয়। দেশটির পাঁচটি রাজ্যে সহিংসতা তীব্র হয়ে উঠেছে। তবে সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে মধ্যপ্রদেশে। এই রাজ্যের সহিংসতায় অন্তত চারজনের প্রাণহানি ঘটেছে। দেশটির উত্তরাঞ্চল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।
মধ্যপ্রদেশ ছাড়াও পাঞ্জাব, রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড ও উত্তর প্রদেশও দলিতদের প্রতিবাদ উত্তাল রূপ ধারণ করেছে। পাঞ্জাব রাজ্য সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে।
Advertisement
দেশটির সুপ্রিম কোর্টের ২০ মার্চের রায়ে বলা হয়, কোনো সাধারণ নাগরিকের বিরুদ্ধেও যদি একই অভিযোগ ওঠে, তবে তাকে গ্রেফতারের আগে পুলিশ সুপার পদমর্যাদার কোনো পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে তদন্ত করাতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের এ রায়ের বিরুদ্ধে সোমবার ভারত বন্ধের ডাক দিয়েছে দেশটির দলিত সম্প্রদায়গুলোর বিভিন্ন সংগঠন। এর মধ্যে রয়েছে, রাষ্ট্রীয় সেবা দল, ন্যাশনাল দলিত মুভমেন্ট পর জাস্টিস, সিআইটিইউ, ভারিপ বহুজন মহাসংঘ।
দলিতদের প্রতিনিধিত্বকারী এসব সংগঠনের দাবি, ‘সুপ্রিম কোর্টের এ নির্দেশ দলিতদের স্বার্থের পরিপন্থী।’ রায়ের বিরুদ্ধে ডাকা বন্ধে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড, ও পাঞ্জাবে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। মধ্যপ্রদেশের মোরিনা ও গোয়ালিওর এলাকায় ব্যাপক সংঘর্ষের পর জনসমাগমের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে রাজ্য সরকার। জয়পুর, বার্মার ও আলওয়ারের বেশ কিছু এলাকায় বিক্ষোভকারীরা অগ্নিসংযোগ করেছেন।
রেলওয়ে স্টেশনে বিক্ষোভকারীরা অবস্থান নেয়ায় বিহার, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব ও রাজস্থানের রেল সেবা বিঘ্নিত হয়েছে। পাঞ্জাবের জালানধর, অমৃতসর ও বাথিন্দা এলাকায় বিক্ষোভকারীরা লাঠিসোটা, তরবারি, বেসবল ব্যাট ও পতাকা হাতে মিছিল করেছে। এসব এলাকার দোকান-পাট বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছে স্থানীরা। মহাসড়ক অবরোধ করে রাখায় চান্ডিগরে ব্যাপক যানজট দেখা দিয়েছে।
পরিস্থিতি এতটাই খারাপ আকার ধারণ করেছে যে, পাঞ্জাব রাজ্য সরকার মোবাইল ইন্টারনেট সেবা, স্কুল, কলেজ ও বোর্ডের পরীক্ষা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। ব্যাংক ও সরকারি অফিসও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
Advertisement
জালান্ধর, কাপুরথালা, নওয়ানশার ও হোশিয়ারপুরে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার। এই কয়েকটি এলাকায় দলিত সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বেশি মানুষ বসবাস করেন। পাঞ্জাবে তফশিলি জাতি ও উপজাতিভূক্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩২ শতাংশ। রাজ্যের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সরকার বলছে, ‘দলিতদের দাবি ন্যায্য।’
দলিতদের ডাকা ভারত বন্ধ নিয়ে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, এই রায় পর্যালোচনা করার জন্য তারা আদালতের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে।
সূত্র : এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া, দ্য হিন্দু।
এসআইএস/এমএস