ধর্ম

কথা ও কাজের সমন্বয়হীনতার কুফল ও প্রতিকার

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা অন্যদেরকে তো ন্যায়ের পথ অবলম্বন করতে বল, কিন্তু নিজেদের ব্যাপারে ভুলে যাও, অথচ তোমরাই কিতাব পড়, তোমরা কি একটুও বুদ্ধি খাটাও না?’ (সুরা বাকারা : আয়াত ৪৪)

Advertisement

আল্লাহ তাআলা মানুষকে সতর্ক করে বলেছেন, তোমরা নিজেরা ভালো কাজ না করে অন্যকে ভালো কাজের উপদেশ দাও। এমনটি ঠিক নয়, কারণ নিজে ভালো কাজ করে অন্যকে ভালো কাজের উপদেশ দিয়ে সে কাজে বরকত হয়।

বর্তমান সময়ে মুসলমানদের দুর্দশার অন্যতম কারণও এটি। ইসলাম যেখানে মুসলমানদের ভালো কাজের প্রেরণাদায়ক অন্যতম আদর্শ, সেখানে মুসলমানরা ইসলামের বিধানকে নিজেদের মধ্যে বাস্তবায়ন না করে পেশা হিসেবে নিজেকে দায়ী পরিচয় দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।

মুখে ধর্মের ভালো ভালো নসিহতের কথা বলে অথচ নিজেদের বেলায় তা পালন করে না। মুখে বলে এক কথা আ মনেভাবে অন্য জিনিস। অন্য মানুষকে ভালো কাজের আহ্বানের পাশাপাশি স্বার্থের টানে নিজেরা সে কাজে অবহেলা করে থাকে।

Advertisement

এমনকি কুরআনের (বাণী) নির্দেশকে নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করে; বিকৃত করতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। একশ্রেণীর লোক মাঝে মাঝে এমন এমন ফতোয়া প্রদান করে, যা কুরআন-হাদিসের সঙ্গে কোনো মিল থাকে না। আর এ কারণেই মুসলমানদের দুর্দশার অন্ত নেই।

আয়াতের প্রেক্ষাপট ছিল এ রকমপ্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন পবিত্র কুরআনসহ নবি ও রাসুল হিসেবে জন সম্মুখে আত্ম প্রকাশ করলেন; তখন ইয়াহুদি ধর্ম যাজকরাই সর্ব প্রথম বিরোধিতা শুরু করে। অথচ তারা তাদের কিতাব তাওরাতে প্রিয়নবির আগমনের সব সংবাদ নিজেরা জানতো এবং অন্যদেরকেও জানাতো। অথচ তারাই সর্ব প্রথম প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বীকৃতি দেয়ার কথা ছিল। দুনিয়াবী স্বার্থের কারণে তারা প্রিয়নবির বিরোধিতা করতে থাকে।

ইয়াহুদিদের এ বিরোধিতার ধারাবাহিকতা আজও বিদ্যমান। এর সঙ্গে যোগ দিয়েছে এক শ্রেণীর মুনাফেক; যারা নিজেদেরকে মুসলিম হিসেবেও পরিচয় দেয়।

এ কথা সত্য যে, কথা ও কাজের এবং আদর্শ ও চরিত্রের সাদৃশ্য ও সামঞ্জস্য তৈরি হওয়া সহজ ব্যাপার নয়। কথা ও কাজের সমন্বয় করতে একজন ব্যক্তির জন্য অনেক চেষ্টা, সাধনা ও অধ্যবসায়ের প্রয়োজন হয়। আর এ জন্য এ কাজের প্রতিদানও সুউচ্চ।

Advertisement

হাদিসে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ভালো কাজের পথ নির্দেশকারী ভালো কাজ সম্পাদনকারীর সমতুল্য।’

আল্লামা শিব্বির আহমদ ওসমানি তাঁর বিখ্যাত তাফসিরে ওসমানিতে কথা ও কাজের সমন্বয় সংক্রান্ত আয়াত প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন, ‘উপদেশদাতাকে তার উপদেশ অনুযায়ী কাজ অবশ্যই করতে হবে। পক্ষান্তরে বিষয়টি আবার এমনও নয় যে, পাপী বা অপরাধী ব্যক্তি উপদেশ দিতে পারবে না।’

ইসলামের প্রতিটি কথা ও কাজের সঙ্গে মিল রাখতে হলে প্রত্যেককেই আল্লাহর সঙ্গে সুগভীর সংযোগ রক্ষা করা এবং তার কাছে হেদায়েত ও সাহায্য প্রার্থনা জরুরি।

বর্তমান সময়ে মানুষের নিত্যকার কর্মব্যস্ততা ও কর্মক্ষেত্রের নানাবিধ কাজ দুনিয়া ও স্বার্থের প্রয়োজনে মানুষকে ফেতনা-ফাসাদ ও অন্যায়ের দিকে ধাবিত করে। যার ফলে মানুষ অনেক সময় নিজেদের নৈতিক ও চারিত্রিক গুণ থেকে দূরে সরে যায়। অন্যদেরকে নীতি ও আদর্শের দিকে আহ্বান করলেও নিজেদের জীবনে তা বাস্তবায়নে অসামর্থ হয়ে পড়ে। আর এ সব লোকদের করুণ পরিণতিই হলো দুনিয়ার দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত জীবন।

কথা ও কাজের সমন্বয়ের উপায়কথা ও কাজের সমন্বয় রাখতে, দুঃখ-দুর্দশাগ্রস্ত জীবন থেকে বেঁচে থাকতে মানুষ যদি সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাআলার সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক সুনিবিড়, সুদৃঢ় ও মজবুত করে এবং শুধুমাত্র তারই ওপর নির্ভরশীল হয়। তবেই সে সব দুর্বলতা, কামনা-বাসনা, প্রয়োজন ও বাধ্যবাধকতা জয় করতে এবং নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হবে।

এমনকি দুনিয়ার যে সব লোভ ও ব্যক্তিস্বার্থ প্রতিনিয়ত তাকে সঠিক জীবন-যাপনে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে, আল্লাহর সঙ্গে সুনিবিড় সম্পর্ক এ সব চ্যালেঞ্জকেও বাগে আনতে সমর্থ হবে।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কথা ও কাজের সঙ্গে সমন্বয় বা মিল রাখার মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালের সফলতা লাভের তাওফিক দান করুন। কুরআন-সুন্নাহর বিধি-বিধানগুলো যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএমএস/আরআইপি