বেসরকারি মোবাইল অপারেটরগুলো ইতোমধ্যে ফোরজি অর্থাৎ চতুর্থ প্রজন্মের ইন্টারনেট চালু করলেও আগামী আগস্টের আগে এ সেবা চালু করতে পারবে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় মোবাইল ফোন কোম্পানি টেলিটক। নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলো অনুমোদিত না হওয়ায় পিছিয়ে পড়ছে টেলিটক।
Advertisement
রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ২৩তম বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়।
তবে চলতি বছরের মধ্যে সব জেলা, ২০১৯ সালে সব উপজেলা এবং ২০২০ সাল নাগাদ সব ইউনিয়নে ফোরজি সেবা পৌঁছে দিতে চায় এ সরকারি মোবাইল অপারেটর। এই সময়ের মধ্যে গ্রাহক সংখ্যা ৪৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে কমপক্ষে দেড় কোটি করতে চায় তারা। এ লক্ষ্যে ৯ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা রয়েছে। যার মধ্যে চলতি অর্থবছরে নিজস্ব তহবিল থেকেই ৭০০ কোটি টাকা খরচের কথা ভাবা হচ্ছে।
টেলিটক আরও জানায়, প্রাথমিকভাবে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভাগীয় শহরগুলোয় ফোরজি সেবা চালুর পরিকল্পনা করেছে তারা। এ লক্ষ্যে তাদের বিদ্যমান ব্যাকবোন ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে এক হাজার ১০০টি স্থানে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হবে।
Advertisement
একইসঙ্গে সাপ্লাই চেইন, জনবল কাঠামো ও কাজের কৌশল পুনর্বিন্যাস ও অটোমেশনের মাধ্যমে সক্ষমতা বাড়াতে চায় তারা। এছাড়া রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষ্যে সরকারের দুই ধরনের সহায়তা চাইছে টেলিটক। প্রথমত সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মোবাইল ভয়েস, ব্রডব্যান্ড এবং ভ্যালু অ্যাডেড সার্ভিস ব্যবহারের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার চায় তারা। দ্বিতীয়ত দেশের সবচেয়ে ছোট মোবাইল অপারেটর হিসেবে তারা চাইছে ‘অসম’ সুবিধা।
বৈঠকে এসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার কথা জানিয়ে কমিটির সভাপতি ইমরান আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘টেলিটককে লাভজনক করতে প্রয়োজনীয় প্রকল্প প্রণয়ন করে এ বিষয়ক একটি পরিকল্পনা আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে সংসদীয় কমিটিকে জানাতে বলা হয়েছে।’
লাভজনক হওয়ার না কারণে টেলিটক দেশের শেয়ারবাজারে প্রবেশ করতে পারছে না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘কমিটি ইতিপূর্ব এ বিষয়ক সুপারিশ করলেও টেলিটক বলছে- টানা তিন বছর লাভজনক না থাকলে পুঁজিবাজারে ঢোকা যাবে না।’ আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণেই সংস্থাটি লাভের মুখ দেখছে না বলেও মন্তব্য করেন সভাপতি।
বৈঠকে মন্ত্রণালয় জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল ফোনের অনুমোদিত কলরেট সর্বনিম্ন ২৫ পয়সা থেকে ২ টাকা নির্ধারণ করা আছে। বর্তমানে বিভিন্ন প্যাকেজের গড় কলরেট ৫৮ পয়সা। ২০০১ সালে যা ছিল গড় কলরেট ছিল ৯ দশমিক ৬০ টাকা। অর্থাৎ গত ১৭ বছরে কলরেট কমেছে ৯ টাকা ২ পয়সা। এছাড়া সর্বোচ্চ ১০ সেসেন্ড পালস চালু করায় মোবাইল গ্রাহকরা এখন সাশ্রয়ী মূল্যে কথা বলতে পারছে।
Advertisement
বৈঠকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) কার্যক্রম নিয়ে আলোচনাকালে জানানো হয়, ২০০৭ সাল থেকে গত মার্চ পর্যন্ত ৩৮৩টি অবৈধ ভিওআইপি বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৩ সাল থেকে এখন অবধি দুই লাখ ৬৮ হাজার ২১৫টি সিম জব্দ করা হয়েছে।
বৈঠকে অংশ নেন কমিটির সদস্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, শওকত হাচানুর রহমান (রিমন) এবং কাজী ফিরোজ রশীদ। এছাড়া বিশেষ আমন্ত্রণে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তফা জব্বারসহ মন্ত্রণালয় ও সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এইচএস/বিএ/জেআইএম