বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আজ থেকে দেশব্যাপী লিফলেট বিতরণ শুরু করেছে দলটি। সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় দলটির নেতারা লিফলেট বিতরণ করেন। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লিফলেট বিতরণ করে জানান তাদের এই কর্মসূচি আরও কয়েকদিন চলবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারকে পরাস্ত করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে সক্ষম হবো আমরা।
Advertisement
মহাসচিবের বিতরণ করা লিফলেটের উপরিভাগে বিএনিপর প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি রয়েছে। এছাড়ও রয়েছে ‘গণতন্ত্রের মা’ ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি চাই’ লাল রঙের মধ্যে সাদা অক্ষরে লেখা।
‘একদলীয় শাসন কায়েমের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান’ শীর্ষক এই লিফলেট দলটির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি কর্তৃক প্রচারিত।
লিফলেটে বলা হয়েছে, ‘লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত মহান স্বাধীনতার সোনালি অর্জন গণতন্ত্র, সুশাসন ও বৈষম্যহীন সমাজ আজ বিনা ভোটে স্বনির্বাচিত ক্ষমতালিপ্সু সরকারের দুর্নীতি, অনাচার ও স্বেচ্ছাচারের হাতে অর্থহীন হয়ে পড়েছে। অনুগত নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসনের সহায়তায় জাতীয় সংসদ ও প্রায় সবগুলো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানকে দখল করা হয়েছে। ক্ষমতা কুক্ষিগত করার জন্য রাষ্ট্রীয় সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও গণভোটের বিধান বাতিল করে অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং জনগণের মতপ্রকাশের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। জাতীয় সংসদ দখল, প্রশাসনকে, দলীয়করণ করার পর প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগ ও দেশত্যাগে বাধ্য করে গোটা বিচার বিভাগকে অনুগত করার অপচেষ্টার অভিযোগ আজ বর্তমান সরকার দেশবাসীর কাছে অভিযুক্ত। অনির্বাচিত সরকারের দলীয়করণকৃত প্রশাসনের কাছে সুশাসনের প্রত্যাশাও আজ দুরাশায় পরিণত হয়েছে। সরকারের অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে কথা বলা কিংবা লেখালেখি আজ বিরোধীদল, সচেতন জনগণ এমনকি লেখক-সাংবাদিকদের জন্য শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’
Advertisement
বিএনপির এই লিফলেট বার্তায় আরও বলা হয়, ‘নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির সীমাহীন ও অব্যাহত ঊর্ধ্বগতিতে জনজীবন অতিষ্ঠ। শ্রমিকের প্রকৃত আয় কমে গেছে। কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায় না। ঘুষ, দুর্নীতি, চাঁদাবাজির শিকার দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ। প্রতিবাদ করলেই প্রতিদিন গুম, খুন, মিথ্যা মামলা, হামলার ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ। শেয়ারবাজার লুট হয়ে গেছে এবং আরেকবার লুটের ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে। সরকারি, বেসরকারি ব্যাংক এমনকি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় লুট হয়ে গেছে। বিদেশে পাচার করা হয়েছে লাখ কোটি টাকারও বেশি। গত কয়েক বছরে মেগা প্রজেক্টের নামে সরকারি দলের মন্ত্রী-নেতাকর্মী ও সুবিধাভোগীরা মেগা দুর্নীতি করে আঙুল ফুলে বটগাছ হয়েছে। অথচ তাদের বিচার করা তো দূরের কথা গ্রেফতার করা হলেও কদিন যেতে না যেতেই সদর্পে মুক্তি পায় তারা। সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা মন্ত্রিত্ব করছে, সংসদ সদস্য হিসেবে কাজ করছে।’
লিফলেটে আরও বলা হয়, ‘অন্যদিকে দেশের প্রতিবাদী জনগণের কণ্ঠস্বর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের নেত্রী ‘গণতন্ত্রের মা’ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা অভিযোগে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। হাইকোর্টে জামিন পেলেও ৭৩ বছর বয়সী এই অসুস্থ নেত্রীর জামিনের আপিল শুনানির জন্য দেড় মাসেরও বেশি সময় দেয়ার ঘটনাকে প্রবীণ আইনজীবীরা অস্বাভাবিক ও অভূতপূর্ব বলে বর্ণনা করেছেন। আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি বিলম্বিত করার সরকারি অপচেষ্টার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তার এবং অন্যান্য সব নেতাকর্মীর মুক্তি দাবি করছি।’
‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াসহ দেশের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার, মিথ্যা মামলায় লাখ লাখ নেতাকর্মী-সাধারণ মানুষকে আসামি করে হয়রানি করা, শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক কর্মসূচি পালনে অন্যায়ভাবে বাধা দেয়া, প্রতিবাদী জনগণকে গুম, খুন করে অন্যদের আতঙ্কিত করা এবং নিত্যনতুন গণবিরোধী আইন পাস করার মাধ্যমে সরকার প্রকৃতপক্ষে ১৯৭৫ সালের মতো পুনরায় একদলীয় স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করছে।’
লিফলেট বার্তার শেষ অংশে বলা হয়, ‘বহুদলীয় গণতন্ত্র, আইনের শাসন, বৈষম্য ও বঞ্চনাহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা এবং জনগণের জীবন ও জীবিকার মান উন্নয়নে বিশ্বাসী সব রাজনৈতিক দল, সামাজিক-সাংস্কৃতিক এবং শ্রেণি-পেশার সংগঠন তথা দেশবাসীর প্রতি আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে অবৈধ ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে সরকারের একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েমের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছি। বর্তমানে ক্ষমতাসীন দল এর আগেও একদলীয় শাসন কায়েমের অপচেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে- এবারও জনগণের প্রতিরোধের মুখে ব্যর্থ হবেই ইনশাআল্লাহ।’
Advertisement
কেএইচ/বিএ/পিআর