বিনোদন

ভাগাভাগি করে আজীবন সম্মাননা পাওয়াটা অপমানের : ফারুক

চূড়ান্ত তালিকা এখনো প্রকাশ হয়নি। তবে তথ্য মন্ত্রণালয়ের ঘনিষ্ঠ সূত্রে এরই মধ্যে চলচ্চিত্রপাড়ায় রটে গেছে চলতি বছরে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ীদের সম্ভাব্য নাম। সেইসঙ্গে জানা গেছে এবারে চলচ্চিত্রের দুই কিংবদন্তি অভিনয়শিল্পী ফারুক ও ববিতাকে দেয়া হবে আজীবন সম্মাননা।

Advertisement

এই সম্মাননাকে ঘিরে চলছে সমালোচনা ও আলোচনা। চলচ্চিত্রের মানুষেরা ফারুক ও ববিতাকে ভাগ করে আজীবন সম্মাননা দেয়া নিয়ে তীব্র সমালোচনা করছেন। তাদের মতে, একটা মানুষের সারা জীবনের স্বীকৃতি দেয়ার সময় সেটা কারো সঙ্গে ভাগাভাগি করে হতে পারে না। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে প্রতিবার একজনকেই আজীবন সম্মাননা জানানো হয়। এবারেও তাই হওয়া উচিত। তাছাড়া ঢাকাই ছবিতে ফারুক ও ববিতা দুজনেরই অবদান অনস্বীকার্য। বিশেষ করে ‘মিয়াভাই’ খ্যাত ফারুক যেমন চলচ্চিত্রের পর্দায় দাপিয়ে বেড়িয়েছেন কয়েক দশক, তেমনি তার নেতৃত্বে বারবার নানা সমস্যার মোকাবেলা করেছে এদেশের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি। সর্বশেষ গেল বছরের চলচ্চিত্র পরিবার গঠনের পর তারও হাল ধরেন তিনি। তাই তার মতো একজন চলচ্চিত্র নিবেদিত মানুষের সম্মাননা কারো সঙ্গে ভাগ করে দেয়া উচিত নয় বলেই মন্তব্য করছেন চলচ্চিত্রের শিল্পী-কলাকুশলীরা।

পাশাপাশি অভিনেত্রী ববিতাও মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই এই দেশের চলচ্চিত্রে আলো ছড়িয়েছেন। আন্তর্জাতিকভাবেও তিনি দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন বিদেশের মাটিতে। তাকে কেন অন্যের সঙ্গে ভাগ করে আজীবন সম্মাননা নিতে হবে? এই প্রশ্ন চলচ্চিত্রের মানুষদের। এই প্রশ্ন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান কর্তৃপক্ষের বরাবর করেছেন সয়ং ফারুকও।

আজ শনিবার ‘মিয়াভাই’ সৈয়দপুর যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। অনেকদিন পর তিনি ট্রেন ভ্রমণ করছেন। সেখানে বসেই কথা বললেন জাগো নিউজের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘মানুষ যখন আদর্শ থেকে পতিত হয় তখন চারপাশে অনেক কিছুই ঘটে। আমাদের দেশপ্রেম, চলচ্চিত্র প্রেম- সব আদর্শেই মন্দা লেগে গেছে। তাই যা হবার নয় তাই হচ্ছে। আজীবন সম্মাননা পুরস্কার দেয়া হচ্ছে ভাগাভাগি করে। সেটাও ফারুক ও ববিতাকে। এ শিল্পীর জন্য অপমানের, শিল্পের জন্য হতাশার। পুরস্কার নেব কি-না সেটি ভেবে দেখছি। এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে কষ্ট পেয়েছি, পাচ্ছি সেটা বলতে পারি।’

Advertisement

ফারুক বলেন, ‘আমি যখন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরি বোর্ডে ছিলাম তখন আমিই আজীবন সম্মাননা ক্যাটাগরিটি রাখার প্রস্তাব করেছিলাম প্রথম। আমারই ভাবনার অস্ত্র দিয়ে আমাকেই আঘাত করা হবে এটা আমি মানবো না। সম্মানিত প্রধানমন্ত্রী অনেক ব্যস্ত মানুষ। তার চোখে অনেক কিছুই পড়ে না। তাই এসব করার সাহস পায় উনার প্রতিনিধিরা। যোগ্যতার মুখোশে চারদিকে এখন চামচামি আর গুরুজনদের ছোট করার উৎসব চলে। এত বড় ভয়াবহ অভ্যাস। তবে আমি কাউকে ভয় পাই না। কারণ এসব পুরস্কারের কাঙ্গাল আমি নই। বহু আজীবন সম্মাননা আমি পেয়েছি দেশে-বিদেশে। তাছাড়া আমি একুশে পদক পাইনি, স্বাধীনতা পদক পাইনি, একটাও জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাইনি। অথচ এসব অনেক আগেই আমার পাবার কথা ছিল।, বারবার বঞ্চিত আর প্রতারিত হয় আমি এসব থেকে দূরে থাকার অভ্যাস করে ফেলেছি। কিন্তু একটা জীবন তো চলচ্চিত্রের পেছনেই কাটিয়ে দিলাম স্রেফ বঙ্গবন্ধুর একটি আদেশের ওপর নির্ভর করে। উনিই বলেছিলেন, চলচ্চিত্রে অভিনয় কর। ইন্ডাস্ট্রির হাল ধর। তার হাত ধরেই তো এসেছিল চলচ্চিত্র শিল্প। তার এনে দেয়া শিল্পকে বাঁচাতে সেই যে ঝাঁপ দিয়েছিলাম, আজও সাঁতার কেটে চলেছি। সেই মূল্যায়ণটা কে করেছে শুনি?

একবার দুবার নয়, ১৯টি চলচ্চিত্রে আমাকে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। প্রথমেই এই তালিকায় থাকবে ‘লাঠিয়াল’ ছবিটি। সেখানে মেনে নিয়েছিলাম আনু দা’র (প্রয়াত অভিনেতা আনোয়ার হোসেন) জন্য। তিনি সিনিয়র, আমি জুনিয়র। দুজনেই সমানে সমান অভিনয় করেছিলাম। কিন্তু পুরস্কারটি উঠলো তার হাতে। এটা মেনে নেয়া যায়। আনু দা’র মতো শক্তিশালী অভিনেতা পুরস্কার ডিজার্ভ করেন। এরপর? এরপর ‘নয়নমণি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘প্রতীক্ষা’, ‘সাহেব’, ‘সুজন সখী’, ‘কথা দিলাম’র মতো ছবিগুলো কী দোষ করলো? কেন ওইগুলো পুরস্কার পায়নি? একটাই কারণ। আমি বঙ্গবন্ধু পাগল, আর ওইসব ছবির পুরস্কার পাওয়ার সময়ে ক্ষমতায় ছিল বঙ্গবন্ধু বিরোধী সরকার। আমার ছবিগুলোর বছরে যারা পুরস্কার পেয়েছে তাদের অনেকের নামও জানে না দেশের দর্শক। তবুও পেয়েছে।’

অভিনেতা ফারুক আরও বলেন, ‘কিন্তু আমার তো আক্ষেপ হয় বঙ্গবন্ধুর দলটি ক্ষমতায় এসেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করা লোকদের পাশে দাঁড়ায়নি। এখনো বঙ্গবন্ধু বিরোধীরাই লেবাস ধরে পুরস্কার বিজয়ীদের নির্বাচন করছে। সেখানে আমাকে তো ছোট করার চেষ্টা চলবেই। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বলতে চাই সময় হলে এসবে যেন একটু চোখ রাখেন। তার দৃষ্টি দেয়া খুব প্রয়োজন। কে কী দায়িত্ব পালন করছে, তার সেই যোগ্যতা রয়েছে কি-না।’

আজীবন সম্মাননা কখনোই ভাগ করা উচিত নয় দাবি করে তিনি বলেন, ‘এর আগেও আজীবন সম্মাননা ভাগ করে দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। আমি তখনো প্রতিবাদ করেছিলাম। এটা ঠিক নয়। শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে দুজনেক যৌথভাবে পুরস্কার দেয়া আর দুজনকে আজীবন সম্মাননা দেয়া আলাদা বিষয়। এটা বুঝতে হবে যারা ওখানে বসে আছেন দায়িত্বে, তাদের। পৃথিবীর কোথাও দুজনকে আজীবন সম্মাননা দেয়া হয় না। আমরা কেন এই সংস্কৃতি চালু করেছি? আমি মনে করি যেদিন প্রধানমন্ত্রী কাউকে এই সম্মাননা দেবেন সেদিন সেই মানুষটা হবেন একজন রাজার মতো। তার আনন্দ হবে রাজ্য জয়ের। তিনি হবেন অন্য সবার চেয়ে আলাদা, অধিক সম্মানের। সেখানে ভাগ কেন হবে? এটা আমার কাছে অপমানের। নিশ্চয়ই ববিতাও অপমানিত হবেন? আমি চাইবো ববিতাকেই দেয়া হোক আজীবন সম্মাননা। একজন নারী হিসেবে হাজার প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি চলচ্চিত্রের সঙ্গে রয়েছেন প্রায় পাঁচ দশক। তার হাতে এই পুরস্কার দেখলে আমি খুশি হবো। আমার অনেক হিট ছবির নায়িকা ববিতার এককভাবেই এই সম্মাননা পাওয়া উচিত।’

Advertisement

এলএ/এমএস