নড়াইলে এখন বাণিজ্যিকভাবে জৈব সার তৈরি হচ্ছে। নড়াইল পৌর এলাকার উজিরপুর অর্গানিক বহুমুখী সমবায় সমিতির তৈরি ‘চিত্রা জৈব সারের’ চাহিদা দিন দিন কৃষকদের মধ্যে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকরা জমিতে বিভিন্ন ফসলে এ সার ব্যব্যহার করায় একদিকে মাটির গুণাগুণ বাড়ছে এবং ভালো ফলও পাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চারটি উপাদানে তৈরি হচ্ছে এ জৈব সার। এ উপাদানগুলো হলো, এজোলা (এক প্রকার শ্যাওলা যাতে প্রোটিন, ইউরিয়া, এমওপি ও ফসফরাসসহ বিভিন্ন মৌল ও গৌণ উপাদান রয়েছে), অ্যাজোফস (এক প্রকার জীবাণু), ভার্মি কম্পোস্ট (কেঁচো সার) ও ট্রাইকো ডারমা মিশ্রিত কম্পোস্ট (এর মধ্যে রয়েছে গোবর, কচুরিপানা, কাঠের গুড়া, চা পাতি বর্জ্য, ধানের চিটা, মুরগির বিষ্টা, সরিষার খৈল, হাড়ের গুড়া, গবাদি পশুর সিং এর গুড়া ও শামুক-ঝিনুকের গুড়া)। এই জৈব সার প্রস্তুত ও প্যাকেটজাত করতে সময় প্রয়োজন ৪০দিন।সংশ্লিষ্টরা জানায়, যে কোনো জাতের ধান উৎপাদনের জন্য প্রতি শতকে মাত্র আধা কেজি, রবি শস্যের জন্য ১ কেজি ও সবজির জন্য শতকে ২ কেজি জৈব সার প্রয়োজন হলেও একই জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয় কয়েক গুণ বেশি। প্রথম অবস্থায় এ সকল জমিতে জৈব সারের পাশাপাশি রাসায়নিক সার সামান্য প্রয়োজন হলেও ৪ থেকে ৫ বছর পরে রাসায়নিক সারের আর প্রয়োজন পড়বে না। তখন জমিতে এই জৈব সার সামান্য ব্যবহার করলেই চলবে। কৃষকের এতে খরচও কমবে এবং জমির উর্বরা শক্তিও বাড়বে। সদরের উজিরপুর গ্রামের কৃষক সুমন ভট্টাচার্য জাগো নিউজকে বলেন, এ বছর ৩০শতক জমিতে রাসায়নিক সার এবং ৩০শতক জমিতে জৈব সার ব্যবহার করে পটল উৎপাদন করা হয়। এতে জৈব সার ব্যবহার করা জমির ফসল অনেক ভালো এবং খরচও অর্ধেক কম হয়েছে। একই গ্রামের কৃষক টিটো মোল্লা জানায়, এ বছর ১ একর জমিতে রাসায়নিক সারের পাশাপাশি এ জৈব সার ব্যবহার করে ভালো ফলাফল পেয়েছি।সদরের ভদ্রবিলা গ্রামের সাইদ মন্ডল জাগো নিউজকে জানান, ৪০ শতক জমিতে পানের বরজে এই সার ব্যবহার করে অন্য যে কোনো বছরের তুলনায় ভালো ফলন হয়েছে।উজিরপুর অর্গানিক বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক সায়েদ আলী শান্ত জাগো নিউজকে জানান, প্রতি মাসে ৫ টন সার তৈরি করা হচ্ছে। কক্সবাজার জেলার চকোরিয়ার এ্যাডভান্স মাল্টি র্ফার্মা লি. নামে একটি বেসরকারি সংস্থা প্রতি বছরে ৪শ মেট্রিক টন সার ক্রয় করছে। এছাড়া স্থানীয় কৃষকরা সাড়ে ৩শ একর জমিতে এই সার ব্যবহার করছেন এবং ভালো ফল পাচ্ছেন। নড়াইল কৃষি সম্পসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শেখ আমিনুল হক জাগো নিউজকে জানান, অতিরিক্ত রাসায়নিক সার প্রয়োগের ফলে জমিতে জৈব পদার্থ কমে যাচ্ছে। জমিতে ৫ ভাগ জৈব পদার্থ থাকার নিয়ম থাকলেও বর্তমানে আছে এক ভাগেরও কম। সেখানে চিত্রা জৈব সার উৎপাদনের উদ্যোগ খুবই প্রশংসনীয়। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগ এ সার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে একটি ইতিবাচক প্রতিবেদন দেওয়ায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর উজিরপুর অর্গানিক সমিতিকে বাণিজ্যিকভাবে চিত্রা জৈব সার উৎপাদনের জন্য নিবন্ধন দিয়েছেন। হাফিজুল নিলু/এসএস/এমআরআই
Advertisement