মতামত

বিউটির লাশ হাওরের জলে ভাসে

১৭ মার্চ ২০১৮ খ্রি- এ প্রচার মাধ্যমগুলোতে একটা ছবি দেখা গেলো। একটা লাল সালোয়ার-কামিজ গায়ে সবুজ ঘাসের ওপর বিউটি নামক হবিগঞ্জের এক কিশোরীর নিথর দেহ পড়ে আছে যখন তার মাত্র একদিন পর লাল সবুজের পতাকা গায়ে জড়িয়ে আমরা আমাদের ৪৮তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন করতে যাচ্ছিলাম।

Advertisement

৪৭ বছর আগে এমনি এক কালো রাতের জন্মের পর এই বাংলাদেশের গ্রামে, গঞ্জে, শহরে, প্রান্তরে, খোলা মাঠে, প্রকাশ্য দিবালোকে, নিজ পরিবারের সামনে শত সহস্র নারীদের নিপীড়ন, অত্যাচারের মধ্য দিয়ে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে যেই স্বাধীন বাংলাদেশ আমরা পেলাম, সেই বাংলাদেশে আজ বিউটির মরদেহ অযুত নক্ষত্রের নিচে সবুজ ঘাসের ওপর পরে আছে। হবিগঞ্জ জেলার বাবুল মিয়া নামক এক পাষণ্ড দুই দুইবার তাকে অপহরণ করে উপর্যপরি ধর্ষণ করে তারপর হত্যা করে তাকে হাওরের জলে ভাসিয়ে দিয়েছে।

১৬ বছরের বিউটির অপরাধ ছিল এই যে বাবুল ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা প্রতিদিন তাকে উত্ত্যক্ত করতে থাকলে সে একদিন অভিযোগ করে। তারপর বাবুল তাকে অজ্ঞাত স্থানে উঠিয়ে নিয়ে যায়। জানুয়ারির ২১, ২০১৮ থেকে ফেব্রুয়ারি’র ২১, ২০১৮ পর্যন্ত এক মাস বাবুল তাকে অন্তরীণ রেখে নির্যাতন চালাতে থাকে। বিউটির দিন মজুর বাবা হবিগঞ্জ থানায় বাবুল ও তার ইউ পি সদস্য মা’র নামে একটি মামলা দায়ের করলে, বাবুল তাকে পুনরায় কিডন্যাপ করে এবং উপর্যপরি ধর্ষণ করার পর হত্যা করে হাওরের জলে ফেলে দেয়। বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে যখন আমরা গর্ব করে বিস্তর প্রবন্ধ লিখছি, তখন হবিগঞ্জে হাওরের জলে বিউটিদের লাশ ভেসে যাচ্ছে। বিউটির মৃত্যুর দুই সপ্তাহ আগেই কোর্ট কিন্তু বাবুলকে ধরার জন্য শায়েস্তাগঞ্জ থানাকে নির্দেশ দিয়েছিল।

বিউটির এই নারকীয় হত্যাকান্ড আমাদের খুব বেশি নাড়া দিয়েছে বলে মনে হয় না। এসব আমাদের গা সহা হয়ে গেছে। এই দেশে আমরা সাধারণ নাগরিকেরা হয়েছি যেন এক সর্বংসহা বসুন্ধরা। আমাদের যেন কিছুতেই কিছু যায় আসে না। বাবুলের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হোক এটাই কাম্য।

Advertisement

লেখক : বিভাগীয় প্রধান, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

এইচআর/পিআর