রড-সিমেন্টসহ নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় রাজধানীতে চলামান বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের ধীর গতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন নির্মাণ সংশ্লিষ্টরা। হঠাৎ করেই বেড়েছে নির্মাণ সামগ্রীর দাম। বাজার সংশ্লিটরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে চরম সংকটে পড়বে নির্মাণ-আবাসন খাত।
Advertisement
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে চলছে সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার উন্নয়ন কাজ। আর হঠাৎ করেই নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় এসব উন্নয়নমূলক কাজের ধীর গতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিভিন্ন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানও।
বাজার ঘুরে জানা গেছে, গত এক মাসে বিভিন্ন কোম্পানির ৫০ কেজি ওজনের সিমেন্ট বস্তা প্রতি দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৯০ থেকে ১১০ টাকা। এছাড়া বর্তমানে বাজারে মূল্য বৃদ্ধির ফলে কোম্পানি ভেদে ৬০ গ্রেডের রড বিক্রি হচ্ছে প্রতি টন ৬৯ থেকে ৭২ হাজার টাকায়। অন্যদিকে ৪০ গ্রেড রডের বাজার মূল্য ৫৭ থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গৃহায়ন শিল্পের নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনও করেছে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)।
Advertisement
রিহ্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরুন্নবী চৌধুরী বলেন, রড সিমেন্টের মূল্যবৃদ্ধি শুধু আবাসন খাতকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, এর সঙ্গে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ব্যয়ও বাড়াবে, উন্নয়ন কাজকে বাধাগ্রস্ত করবে।
এদিকে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এক মাসের ব্যবধানে মান ও কোম্পানি ভেদে রডের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। এমন দাম বাড়ার কারণে রডের বিক্রি আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে।
সেন্টু স্টিল হাউজের ম্যানেজার মো. রাসেল বলেন, এক মাস আগে যে রড ৪৭ টাকা কেজি বিক্রি করেছি, সেই রড এখন ৫৭ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে। এমন দাম বাড়ার কারণে আমাদের বিক্রি প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।
বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এ কে মাসুদুল আলম মাসুদ বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের দাম বেড়েছে। ডলারের দাম বেড়েছে। দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। পরিবহন খরচও বেড়েছে। এসব কারণে রডের দাম বেড়েছে। তাছাড়া সিজনাল কারণেও দাম কিছুটা বেড়েছে। এই সময় রডের চাহিদা কিছুটা বেশি থাকে, যে কারণে দাম কিছুটা বাড়ে।
Advertisement
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানেই সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থার রাস্তা, ড্রেন, ফুটপাত, ডিভাইডারসহ নানামুখী নির্মাণ কাজ চলছে আর হঠাৎ করেই নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ঠিকদার প্রতিষ্ঠানগুলো।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের একজন ঠিকাদার বলেন, উন্নয়ন কাজে টেন্ডার শিডিউলে যে দাম ধরা হয়েছিল, হঠাৎ করে তার থেকে বেশ কিছু শতাংশ বেড়ে গেছে। এখন নতুন শিডিউল না করলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো।
তিনি বলেন, রড-সিমেন্টের দাম বেড়ে যাওয়ায় সব ধরনের উন্নয়ন কাজেই এর প্রভাব পড়ছে। যে কারণে হয় আমাদেরকে খরচ বেশি দিতে হবে, না হয় এসবের দাম কমে যাওয়া পর্যন্ত কাজ শেষ করতে অপেক্ষা করতে হবে। হঠাৎ করেই এসব নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের কাজে কিছুটা ধীর গতি এসেছে। সবাই দাম কমে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে, সে কারণে কাজ শেষ করতে দেরি হতে পারে।
আবাসন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নাগরিকদের জীবন-মান উন্নয়নের সঙ্গে অবকাঠামোর উন্নয়ন সরাসরি জড়িত। দফায় দফায় এসব নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা যেমন লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছি তেমনি কাজের ধীরগতির আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে।
এএস/এমবিআর/আরআইপি