দুই মাসের ব্যবধানে টনপ্রতি রডের মূল্য বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা, যা একেবারেই অস্বাভাবিক বলছেন সংশ্লিষ্টরা। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, এর পেছনে রয়েছে কতিপয় ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানের বড় ধরনের কারসাজি। এ কারণে মূল্য বেড়েছে।
Advertisement
সরকার যদি এখনই এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে তাহলে রডের মূল্য স্বাভাবিক হবে না। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি (বিএসিআই) মনে করছে, মিলমালিকরা সিন্ডিকেট করে রডের মূল্য বাড়িয়েছেন।
তবে রডের উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হার বেড়েছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে বেড়েছে রডের কাঁচামালের মূল্য। ফলে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। এছাড়া মূল্য বাড়ার পেছনে দেশের অভ্যন্তরীণ কিছু বিষয়ও কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে- পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়া, আমদানিপণ্য বন্দরে খালাসের ব্যয় বৃদ্ধি, নির্মাণ মৌসুম তথা নির্মাণসামগ্রীর চাহিদা বাড়া এবং উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়া প্রভৃতি।
নির্মাণসামগ্রীর মূল্য এভাবে বেড়ে যাওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। আগে যে পরিমাণ মূলধন খাটিয়ে মোটামুটি ব্যবসা চালিয়ে নেয়া যেত এখন তা দুরূহ হয়ে পড়েছে। কারণ নির্মাণকাজের প্রয়োজনীয় তিনটি পণ্য- রড, ইট ও সিমেন্টের পাইকারি মূল্যও বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে।
Advertisement
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজধানীর ইংলিশ রোডে অবস্থিত আয়রন অ্যান্ড স্টিল মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সচিব মো. আবু তাহের জাগো নিউজকে বলেন, মূল্য বাড়লে বিক্রিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়াটাই স্বাভাবিক। অস্বাভাবিক হারে মূল্য বাড়ার কারণে এখন ছোট ব্যবসায়ীরা পণ্য কিনতে সাহস পাচ্ছেন না। অনেকের পুঁজির সঙ্কট আছে। এছাড়া রডের বিক্রি অনেক কমে গেছে। এজন্য রড কিনে আটকে যাওয়ারও ঝুঁকি আছে। এতে ভরা মৌসুমেও অনেকে ব্যবসা করতে পারছেন না। এ অবস্থা চলতে থাকলে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বুধবার মার্কিন ডলার বিক্রি হয়েছে ৮৩ দশমিক ৫০ টাকায়, গত বছরের অক্টোবরে ছিল ৭৬-৭৮ টাকা।
অন্যদিকে অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, রডের মূল কাঁচামাল স্ক্র্যাপ লোহা আমদানির খরচ টনপ্রতি ৩০০ ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩৫ ডলারে। এছাড়া টনপ্রতি সাত থেকে আট হাজার টাকা পরিবহন ব্যয় বেড়েছে। এতে রডের মূল্য বেড়ে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি ও শাহরিয়ার স্টিল মিলস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে মাসুদুল আলম মাসুদ জাগো নিউজকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের মূল্য বেড়েছে। ডলারের মূল্যও বেড়েছে। দেশে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বেড়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসে দেরি হওয়ায় জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া পরিবহন খরচও বেড়েছে। এসব কারণে রডের মূল্য একটু বেশি।
Advertisement
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির (বিএসিআই) সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মুনীর উদ্দিন আহমেদ বলেন, ইস্পাত শিল্পের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মূল্য বাড়াচ্ছে, যার বড় অংশ উৎপাদক অর্থাৎ মিলমালিকরা। তারা গত দু-তিন মাসে টনপ্রতি রডের মূল্য বাড়িয়েছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। এটি কোনোভাবেই স্বাভাবিক হতে পারে না। মিলমালিকরা সিন্ডিকেট করে অতি মুনাফার আশায় মূল্য বাড়াচ্ছে।
তিনি বলেন, মিলমালিকরা বলছেন, উৎপাদন খরচ বেড়েছে। রডের কাঁচামাল, পরিবহন ও ডলারের মূল্য বেড়েছে। তাদের অভিযোগ ঠিক আছে। কিন্তু এসব কারণে রডের মূল্য সর্বোচ্চ তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা বাড়বে। কিন্তু এখন মূল্য বেড়েছে ২০ হাজার টাকা। এ অবস্থা চলতে থাকলে সঙ্কটে পড়বে নির্মাণশিল্প। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে। সরকার এর সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে হয় ব্যবস্থা নেবে, না হয় আমাদের লোকসান পুষিয়ে নিতে ভর্তুকি দেবে।
এমএ/জেডএ/বিএ