বিশেষ প্রতিবেদন

সঙ্কটের আশঙ্কা আবাসন শিল্পে

দীর্ঘ মন্দা কাটিয়ে আবাসন ব্যবসা যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে ঠিক তখনই রড-সিমেন্টের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এতে আবাসন শিল্পে সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলে ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা।

Advertisement

তারা বলছেন, সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসেবে এক মাস আগেও ৬০ গ্রেডের রডের বাজারমূল্য ছিল ৫৯-৬০ হাজার টাকা এবং ৪০ গ্রেডের রডের বাজারমূল্য ছিল ৫০-৫১ হাজার টাকা। অথচ এখন ৬০ গ্রেডের রডের বাজারমূল্য ৬৯-৭২ হাজার আর ৪০ গ্রেডের মূল্য ৫৭-৬০ হাজার টাকা।

শুধু রডের মূল্য নয় নির্মাণ শিল্পের অপরিহার্য পণ্য সিমেন্ট ও ইটের দামও বেড়েছে। কোম্পানি ভেদে সিমেন্টের মূল্য বেড়েছে বস্তাপ্রতি প্রায় ১০০ টাকা এবং ইটের মূল্য বেড়েছে প্রতি হাজারে এক হাজার টাকা। ৩৬০-৩৯০ টাকায় বিক্রি হওয়া সিমেন্টর বস্তা এখন ৪৭০-৫১০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

শেলটেক’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. তৌফিক এম সেরাজ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আবাসন ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। সেখান থেকে উত্তরণে ২০১৭ সাল ছিল রাইজিং পিরিয়ড। বছরটিতে মোটামুটি ভালো ব্যবসা হয়েছে। চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেও ব্যবসা ভালো। কিন্তু ব্যাংক সুদের হার আবার বাড়ছে। রড-সিমেন্টের মূল্য হঠাৎ করে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। এটি ভালো লক্ষণ নয়।

Advertisement

আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আবাসন খাত যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, ঠিক তখনই নির্মাণ উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় নির্মাণকাজ গতিহীন হয়ে পড়বে।

নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই ইতোমধ্যে নির্মাণকাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে যথাসময়ে ফ্ল্যাট হস্তান্তর অনিশ্চয়তায় মধ্যে পড়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে ফ্ল্যাট বুঝে না পাওয়ায় দুর্ভোগে পড়বেন চুক্তিবদ্ধ ক্রেতারা।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্সট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রিজের (বিএসিআই) সভাপতি প্রকৌশলী মুনীর উদ্দীন আহমেদ সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় জানিয়েছেন, অস্বাভাবিকভাবে নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কারণে অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। এ অবস্থায় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন হবে না।

রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিনের মতে, সিমেন্টের ওপর কোনো ধরনের চার্জ বা কর আরোপ করা হয়নি, বাড়েনি কাঁচামালের মূল্য। তাহলে মূল্য বৃদ্ধি কেন? রড, সিমেন্ট, ইট ছাড়াও গত ছয় মাসে পাথরসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রীর মূল্যও বেড়েছে। আমরা মনে করি এ মূল্য বৃদ্ধি আবাসন শিল্প তথা নির্মাণ খাতের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

Advertisement

তিনি আরও বলেন, নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কারণে ফ্ল্যাট হস্তান্তর অনিশ্চয়তায় পড়বে। এতে দুর্ভোগে পড়বেন চুক্তিবদ্ধ ক্রেতারা। ফলে সংকট উত্তরণের পথে থাকা আবাসন খাত আবারও বড় ক্ষতির মুখে পড়বে। এ জন্য দ্রুত সরকারের সহযোগিতা দরকার।

রিহ্যাব সভাপতি বলেন, সরকার সারা দেশে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। যার বেশির ভাগ নির্মাণ-সংক্রান্ত। উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় রড, সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল এবং পাথর আমদানি বেড়েছে। বর্তমানে রড তৈরির বিভিন্ন উপাদান আমদানিতে নানা ধরনের কর দিতে হচ্ছে।

এমএএস/এএইচ/বিএ