দেশজুড়ে

৩ দিন ধরে মৃত মায়ের আঙুল চুষে বেঁচে আছে শিশুটি

শিশুটির অবিরাম কান্না শুনে প্রতিবেশীরা এসে দেখেন ঘরে পড়ে রয়েছে গৃহবধূর নিথর দেহ। ঘরের দরজা খুলতেই ভেসে আসে দুর্গন্ধ। দেড় বছরের শিশুটি ছাড়া আশপাশে কেউ নেই। মায়ের লাশের পাশে বসে তিনদিন ধরে কাঁদছিল শিশুটি।

Advertisement

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় এ ঘটনা ঘটে। স্ত্রী রিমা আক্তারকে (২২) নির্যাতনের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে ঘরে তালা দিয়ে পালিয়ে যায় স্বামী। ওই সময় থেকে শিশুটি তার মায়ের লাশের পাশেই ছিল।

তিনদিন পর বুধবার সন্ধ্যায় ফতুল্লার কোতালেরবাগ বউ বাজার এলাকা থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় পুলিশ। এ সময় মায়ের লাশের পাশে থাকা দেড় বছরের শিশু নাহিদকে উদ্ধার করা হয়। নিহত রিমা আক্তার ফতুল্লার কোতালেরবাগ বউ বাজার এলাকার আলামিনের স্ত্রী। রিমার গ্রামের বাড়ি পাবনা।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, ফতুল্লার কোতালেরবাগ বউ বাজার এলাকার আছির আলী সরদারের ছেলে আলামিন গত আড়াই বছর আগে গার্মেন্টকর্মী রিমা আক্তারকে প্রেমের সূত্র ধরে বিয়ে করে। তাদের সংসারে একটি ছেলে সন্তান জন্ম হয়। বর্তমানে শিশুটির বয়স দেড় বছর। আলামিন গার্মেন্টকর্মী হলেও এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে চিহ্নিত।

Advertisement

আলামিন ঠিকমতো কাজে না গিয়ে মাদক ব্যবসা করে গভীর রাতে বাসায় ফিরতো। এ নিয়ে সংসারে অশান্তি শুরু হয়। কিছু বললে স্ত্রী রিমাকে আলামিন মারধর করতো। আলামিনের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে যেতে চেয়েও পারেননি স্ত্রী।

সোমবার রাতের কোনো এক সময় আলামিন তার দেড় বছরের শিশুকে সামনে রেখে স্ত্রী রিমাকে ধারালো ছোরা দিয়ে আঘাতের পর শ্বাসরোধে হত্যা করে। পরে শিশুকে রিমার লাশের পাশে রেখেই ঘরে তালা দিয়ে পালিয়ে যায়।

বুধবার সন্ধ্যায় শিশুর কান্না ও লাশের দুর্গন্ধ বের হলে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মালেক ও প্রতিবেশী নাছিমা ঘরের তালা ভেঙে গৃহবধূর মরদেহ দেখে। পরে লাশের পাশ থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে ফতুল্লা থানা পুলিশ।

ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আব্দুল মালেক বলেন, বিকেলে খবর পেয়ে আলামিনের ঘরের সামনে এসে দেখি শিশুর কান্না, লাশের দুর্গন্ধ। পরে ঘরের তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দেখি খাটের ওপর রিমার লাশ। লাশের পাশে দেড় বছরের শিশুটি মায়ের হাতের আঙুল চুষছে। তিনদিন তালাবদ্ধ থাকার পর শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। শিশুটি তিনদিন ধরে মৃত মায়ের আঙুল চুষে বেঁচে থাকার বিষয়টি আশ্চর্যজনক।

Advertisement

নিহতের জা মাহিনুর বেগম জানান, তিনি গার্মেন্টে চাকরি করেন। সোমবার দুপুরে বাসায় এসে রিমাকে দেখতে পান। এরপর রিমাকে আর দেখতে পাননি। বুধবার দুপুরে জানতে পারেন রিমার মৃত্যুর সংবাদ। পরে বাসায় এসে দেখেন রিমার লাশের পাশে তার সন্তান নাহিদ। এলাকার লোকজন তালা ভেঙে শিশুটিকে উদ্ধার করে।

ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) অটল দাস ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, স্থানীয় লোকজন ঘরের তালা ভেঙে তিনদিন ঘরে বন্দী দেড় বছরের শিশুকে উদ্ধার করে। রিমা আক্তারকে তার স্বামী আলামিন শ্বাসরোধে হত্যা করে ঘর তালা দিয়ে পালিয়ে যায়। নিহতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মরদেহ উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের রহস্যের উদঘাটনসহ ঘাতক স্বামী আলামিনকে প্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান এসআই।

মো. শাহাদাত হোসেন/এএম/জেআইএম