বিনোদন

প্রাণ দুলিয়ে গেলেন অঞ্জন দত্ত

অঞ্জন দত্ত একটা ঘোরের নাম। কৈশর পেরিয়ে উড়ু উড়ু মনের দিনগুলোতে তার গানের ঘোরে ডুবেছেন অনেকেই। তার সুরের নেশায় বুঁদ একটু একটু করে বাস্তবকে চিনতে শেখার দিন অনেকেই এখনও সমান ভাবেই নষ্টালজিক করে তোলে। সামনে বসে তাকে একটু খানি দেখা, কিংবা তার মুখতে দুই লাইন খালি গলায় গান শুনতে ইচ্ছে করা মানুষের সংখ্যা অনেক। হ্যাঁ প্রিয় এই ঘোর লাগানো মানুষটি বাংলাদেশে এসেছিলেন মঙ্গলবার। ওই দিন সন্ধ্যায় বাংলামটরস্থ বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের হল রুমে একটা অন্যরকম সন্ধ্যা উপহার দিয়ে গেলেন তিনি।

Advertisement

মঞ্চের সামনে বসে থাকা মানুষগুলো ভাবছিলেন এই তো তাদের সেই চিরচেনা অঞ্জন দত্ত। প্রাণ খুলে আড্ডায় মেতেছিলেন অঞ্জন। আবেগাপ্লুতও হয়ে পড়ে ছিলেন অনেক নিজের জীবনের গল্প শোনাতে শোনাতে। নিজের আত্মজীবনী ‘অঞ্জন যাত্রা’র মোড়ক খুলতে এসে এমন হওয়াটাও বুঝি বেশ স্বাভাবিক ছিল। অঞ্জন দত্তের সঙ্গে দিনের পর দিন আলাপ করে আড্ডা দিয়ে গুনি এই মানুষটির আত্মজীবনী লিখেছেন সাজ্জাদ হুসাইন। তিনিও উপস্থিত ছিলেন সেখানে। উপস্থিত ছিলেন অঞ্জর দত্তের স্ত্রী ছন্দা। ‘অঞ্জনযাত্রা’ বইটি প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশের প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ছাপাখানার ভূত থেকে।

অঞ্জন দত্ত বলেন,‘গানই আমার পরিচয়। অভিনেতা হিসেবে সেভাবে পরিচিতি পাইনি। বড়মাপের পরিচালকের সঙ্গে কাজ করেছি, কিন্তু বড় অভিনেতা হতে পারিনি। আমি এখন আর নতুন করে অভিনেতা হওয়ার চেষ্টা করি না। আমি মনে করি, একটা সময় যেভাবে অভিনেতা হওয়ার জন্য কাজ করেছি, তা এখন আর সম্ভব নয়। যদি বয়স কম হতো, তাহলে অভিনেতাই হতে চাইতাম। গান না গাইলে হয়তো হারিয়েই যেতাম।’

অঞ্জন দত্ত আরও বলেন, ‘আমার বয়স এখন ৬৪। বড় হয়েছি দার্জিলিংয়ে। প্রথম যখন ঢাকায় আসি, তখন জাতীয় জাদুঘরের এক অনুষ্ঠানে দেখা হয় শিল্পী লাকী আখান্দের সঙ্গে। এরপর অনুষ্ঠানের ফাকে পরিচয়, এরপর বন্ধুত্ব হয়েছিল তার সঙ্গে।’

Advertisement

দীর্ঘ সময় কথা বলেন অঞ্জন দত্ত। এর মধ্যেই বইটির মোড়ক উম্মোচন করা হয়। বই থেকে দুই পৃষ্ঠা পাঠ করেন তিনি। অঞ্জনযাত্রা প্রসঙ্গে বলেন,‘অনেক সাক্ষাৎকারেই আমার জীবন নিয়ে বলেছি। কিন্তু সাজ্জাদের সঙ্গে যেভাবে বলেছি এই ভাবে আর কাউকে বলা হয়নি। জীবনের কিছু রোদ্দুর এই বইটার মধ্যে আবদ্ধ হয়ে থাকলো। ওর সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছি। আমার বিপক্ষেও চলে গেছে অনেক কিছু। কোনো কিছুই বানিয়ে বানিয়ে বলিনি। আমাকে বাঁচাতেও কিছু বাদ দেননি লেখক।’

বইয়ের লেখক সাজ্জাদ বলেন, ‘অঞ্জন দত্তকে যা জিজ্ঞাসা করেছি, তারই উত্তর দিয়েছেন। তিনি সব সত্যি কথা আমাকে বলে দিয়েছেন। বইয়ে কী লেখা যাবে, কী যাবে না, কোন ছবি যাবে—এ বিষয়ে কোনো মতামত দেননি অঞ্জন। সব নিজের স্বাধীনতা থেকে করেছি।’

বইটি সংগ্রহ করার জন্য অগ্রীম মূল্য পরিশোধ করেছিলেন অনেকেই। তাদের বই ও তার সঙ্গে অটোগ্রাফ দেন অঞ্জন দত্ত। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যন্ত যারা উপস্থিত ছিলেন তারা ছিলেন সোভাগ্যবান। কারণ সব শেষে খেয়ালি মানুষটি গান গেয়ে প্রাণ দুলিয়ে গেলেন সবার।

এমএবি/এলএ/পিআর

Advertisement