ফিচার

জমানো টাকায় রিকশাচালকের ৯ স্কুল

তার নাম আহমেদ আলি। পেশায় একজন রিকশাচালক। বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা আসামের প্রত্যন্ত একটি গ্রামের বাসিন্দা তিনি। এই ‘অর্ধশিক্ষিত’ মানুষটি জমানো টাকায় নয়টি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাকে নিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও গর্ববোধ করেন। গর্বিত তার স্ত্রী ও তিন ছেলে।

Advertisement

জানা যায়, আহমেদ আলি কখনো মাটি কেটেছেন কিংবা অন্যের জমিতে মজুর খেটেছেন। শেষ পর্যন্ত রিকশা চালানোকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। নিজে স্কুলে যেতে পারেননি। অর্থের অভাবে স্কুল ছেড়েছেন অনেক আগেই। সেই কষ্ট থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

৮২ বছরের আহমেদ আলির স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। তিনি প্রাথমিক, জুনিয়র হাইস্কুল, হাইস্কুল প্রতিষ্ঠার পর এখন একটি কলেজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছেন। এদিকে ‘মন কি বাত’ নামের একটি রেডিও অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তার গল্পকে উদাহরণ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি যখন জানলাম যে অাসামের করিমগঞ্জের একজন রিক্শাচালক গরিব ছেলেমেয়েদের জন্য নয়টা স্কুল তৈরি করেছেন, তখন বুঝলাম আমার দেশের ইচ্ছাশক্তি কতটা বেশি।’

আহমেদ আলি ভারতীয় গণমাধ্যমকে জানান, পাথারকান্দি থেকে করিমগঞ্জ শহরে গিয়ে রিকশা চালাতেন তিনি। সেখানকার ছাত্রদের দেখে ভাবতেন, স্কুল থাকলে তার গ্রামের ছেলেমেয়েরাও পড়াশোনা করতে পারত। তাই স্ত্রী ফাতইর বিবির সঙ্গে পরামর্শ করে নিজের তিন বিঘা জমি স্কুলের নামে লিখে দেন।

Advertisement

আলি আরও জানান, ১৯৭৮ সালে চালু হয় সেই স্কুল। দুই বছরের মধ্যে সরকার ‘আহমেদ আলি এমই স্কুল’ অধিগ্রহণ করে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে নিম্ন প্রাথমিক স্কুল না থাকলে এমই স্কুলে ছাত্র আসবে কোথা থেকে। তাই আশপাশের গ্রামে তিনটি নিম্ন প্রাথমিক স্কুল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জমির ব্যবস্থা করেন। ছাত্র বাড়তে থাকায় ওই সব স্কুল চত্বরেই আরও তিনটি স্কুল চালু হয়।

তিনি জানান, এরপর ছেলেমেয়েরা পড়বে কোথায়? এলাকার মেয়েরা দূরের হাইস্কুলে যেতে হবে বলে পড়াশোনা ছেড়ে দিচ্ছিল। তাই একটি হাইস্কুল প্রয়োজন। এবারও এগিয়ে এলেন তিনিই। নিজের বাকি জমিটুকুও হাইস্কুলের জন্য লিখে দেন। ২০১১ সালে ৪টি এমই স্কুলই সরকার অধিগ্রহণ করে। তবে এখন তার স্বপ্ন হচ্ছে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করার। তিনি আশা করেন, সে স্বপ্নও হয়তো তার পূরণ হবে।

এসইউ/পিআর

Advertisement