একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা হত্যায় অভিযুক্ত টাঙ্গাইলের মো. মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ ও গণহত্যার তিনটি অপরাধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেছেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে, মামলায় সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করার জন্য আগামী ২২ এপ্রিল দিন ঠিক করেছেন আদালত। ওই দিন মামলায় ওপেনিং স্টেটমেন্ট ( সূচনা বক্তব্য) উপস্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাব্যুনাল।
Advertisement
বুধবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যর আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ, তাপস কান্তি বল ও রেজিয়া সুলতানা চমন। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার পালোয়ান।
গত বছরের ৯ জুন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনালের অধীনে আসামি মাহবুবুর রহমানকে গ্রেফতার দেখানো হয়। বর্তমানে তিনি কারাগারেই আছেন। তার গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বইরাতিয়াপাড়ায়।
Advertisement
তদন্ত সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ৭ মে আসামি মাহবুবুরের সহায়তায় পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা রণদা প্রসাদ ও তার ছেলেকে নারায়ণগঞ্জের খানপুরের সিরাজউদ্দৌলা সড়কের বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। পরে তাদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
আসামি মাহবুবুরের বিরুদ্ধে সাহাপাড়া এলাকায় ৩৩ জন হিন্দুকে ধরে নিয়ে হত্যা ও মির্জাপুর থেকে ২৪ জনকে অপহরণের পর তাদের মধ্যে ২২ জনকে মধুপুরে নিয়ে হত্যার অভিযোগসহ অগ্নিসংযোগ, নির্যাতন ও গণহত্যার তিনটি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়।
প্রতিবেদনে মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে সমাজসেবক রণদা প্রসাদ সাহা হত্যাসহ অপহরণ, অগ্নিসংযোগ ও গণহত্যার তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর আগে গত ১১ জানুয়ারি আসামির বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ ও গণহত্যার তিনটি অভিযোগ দাখিল করেন প্রসিকিউটর রানা দাসগুপ্ত।
এর আগে গত ২ নভেম্বর দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা হত্যায় অভিযুক্ত টাঙ্গাইলের মো. মাহবুবুর রহমানের বিরুদ্ধে অপরাধের তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে তদন্ত সংস্থা। আসামি মাহবুবুর রহমানের বাবা আব্দুল ওয়াদুদ মুক্তিযুদ্ধের সময় মির্জাপুর শান্তি কমিটির সভাপতি ছিলেন। আসামি মাহবুবুর রাহমান ও তার ভাই আব্দুল মান্নান সে সময় রাজাকার বাহিনীতে ছিলেন। আসামি এক সময় জামায়াতে ইসলামির সমর্থক ছিলেন। কিন্তু নির্দলীয়ভাবে তিনবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থীতা করলেও প্রতিবারই পরাজিত হয়েছেন।
Advertisement
আসামি মাহবুবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মে মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২০-২৫ জন সদস্যকে নিয়ে রণদা প্রসাদ সাহার বাসায় অভিযান চালায়।
অভিযানে রণদা প্রসাদ সাহা, তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা, রণদা প্রসাদের ঘনিষ্ঠ সহচর গৌর গোপাল সাহা, রাখাল মতলব ও রণদা প্রসাদ সাহার দারোয়ানসহ ৭ জনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে সবাইকে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়। তাদের লাশ আর পাওয়া যায়নি।
মুক্তিযুদ্ধের সময় আসামি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের ভারতেশ্বরী হোমসের আশপাশের এলাকা, নারায়ণগঞ্জের খানপুরের কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ও তার আশপাশের এলাকা এবং টাঙ্গাইল সার্কিট হাউজ এলাকায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।
রণদা প্রসাদ সাহার পৈত্রিক নিবাস ছিল টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। সেখানে তিনি একাধিক শিক্ষা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। এক সময় নারায়ণগঞ্জে পাটের ব্যবসা করেন রণদা প্রসাদ সাহা। থাকতেন নারায়ণগঞ্জের খানপুরের সিরাজদিখানে। সে বাড়ি থেকেই তাকে, তার ছেলে ও অন্যান্যদের ধরে নিয়ে যায় আসামি মাহবুবুর রহমান ও তার সহযোগীরা।
এফএইচ/এমবিআর/পিআর