মতামত

এই পাশবিকতা বন্ধ হবে কবে?

নারীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে এই বীভৎসতম নিষ্ঠুর কাণ্ড ঘটেই চলেছে। যেখানে কমার কথা সেখানে বরং ধর্ষণ বেড়েই চলেছে। শিশু থেকে যুবতী কেউ বাদ যাচ্ছে না। সময় সুযোগ বুঝে পাশবিক অত্যাচার চলছে পশুদের। একটি সভ্য সমাজে এই জঘন্যতম কর্মকাণ্ড চলতে দেয়া যায় না। ধর্ষণের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের পাশাপাশি সামাজিক প্রতিরোধও অত্যন্ত জরুরি।

Advertisement

এবার বিউটি আক্তার নামে এক তরুণীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে হাওরে ঘাসের ওপর পড়ে থাকা বিউটি আক্তারের নিথর ছবি। চারদিকে ধিক্কার উঠেছে এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে। গত ১৭ মার্চ হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে হাওর থেকে বিউটি আক্তারের (১৬) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিন বেলা ১১টায় শায়েস্তাগঞ্জের পুরাইকলা বাজার সংলগ্ন হাওর থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন বিউটির বাবা। মামলার প্রধান আসামি বাবুল মিয়া। বাবুল ব্রাহ্মণডোরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য কলম চান বিবির পুত্র। জানা যায়, গত ২১ জানুয়ারি ওই কিশোরীকে ধরে নিয়ে ধর্ষণ করেন বাবুল। এ ঘটনায় ৪ মার্চ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে একটি মামলা করা হয়। এরপর ১৭ মার্চ গুনিপুর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে হাওরে তার মরদেহ পাওয়া যায়। ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৮ মার্চ কিশোরীর বাবা সায়েদ আলী বাদী হয়ে একই গ্রামের বাবুল মিয়া (৩২) ও তার মা ইউপি সদস্য কলম চান বিবিকে (৪৫) আসামি করে শায়েস্তাগঞ্জ থানায় আরেকটি মামলা করেন।

বলা হচ্ছে স্থানীয়ভাবে পরিবারটি অত্যন্ত প্রভাবশালী। এর প্রমাণও পাওয়া যায় কার্যক্রমে। মামলা হওয়ার পর যদি পুলিশ ত্বরিৎ ব্যবস্থা নিত তাহলে বিউটি আক্তারের ওপর দ্বিতীয়বার পাশবিক অত্যাচার ও হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটাতে পারতো না বাবুল। যদিও পুলিশ এখন বলছে ‘কিশোরীকে ধর্ষণ করে হত্যা করবে, এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। বাবুলকে ধরতে ইতোমধ্যে অভিযান শুরু হয়েছে। আসামি যতই প্রভাবশালী হোক কোনোভাবেই সে ছাড় পায় না।’ এটা কার্যক্ষেত্রেও দেখাতে হবে।

হত্যা মামলার অন্যতম আসামি বাবুলের মাকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করে আদালতে সমর্পণ করা হয়েছে। অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক সাজা না হলে সমাজে অপরাধ প্রবণতা বাড়তেই থাকে। প্রভাবশালী হলেই অপরাধ করে পার পাওয়া যায়-এ ধারণা পাল্টাতে হলেও আসামীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

Advertisement

বাংলাদেশ যখন উন্নয়নশীল দেশের কাতারে তখন কিশোরী বিউটি ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের মতো বর্বরোচিত ঘটনা সমাজে ভুল বার্তা দেবে। তাই আইনের শাসন ও একটি নারীবান্ধব সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে হলে ধর্ষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। ধর্ষণ মামলা তদন্ত ও আসামিদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে পুলিশকে আরো দায়িত্বশীল, কর্তব্যপরায়ণ ও দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার মানসিকতা রাখতে হবে। বিউটি ধর্ষণ হত্যা মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি ও অপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তিই পারে এই ক্ষতে সামান্য প্রলেপ দিতে। আমরা এ ধরনের বর্বরোচিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না।

এইচআর/পিআর