দুনিয়া ও পরকালের সফলতা লাভ সচেতনতার ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করে। অসচেতনার ফলে মানুষ ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে পৌঁছে যায়। আল্লাহ তাআলা এ কারণেই মানুষের জন্য পবিত্র কুরআনুল কারিম নাজির করেছেন। দেখিয়েছেন অন্ধকার থেকে আলোর পথ।
Advertisement
কুরআনের আলোকোজ্জ্বল নসিহতগুলো দুনিয়ার জীবনে বাস্তবায়নের ফলেই মানুষ লাভ করে সচেতন ও সফল জীবন। তারপরও মানুষ অনেক সময় ভুল করে অসচেতন ও বিবেকশূন্য হয়ে পড়ে। যে কারণে সমাজের অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে থাকে।
মানুষের জীবনে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো থেকে নিজেদেরকে মুক্ত রাখতে কুরআন হাদিসে রয়েছে অসংখ্য বিধি-নিষেধ। ইসলামিক স্কলার আলেম-ওলামা ও পীর-মাশায়েখগণ ইসলামের অনুসারী মুসলমানদের জন্য কুরআন-হাদিসের সার-নির্যাসগুলো সাজিয়ে-গুছিয়ে তুলে ধরেছেন।
উদ্দেশ্য একটাই-মানুষ সত্যের পথে সফলতা লাভে নিজেদের পরিচালিত করবে; অন্যায় ও ইসলাম বহির্ভূত জীবন পরিহার করবে। দুনিয়ার স্বচ্ছলতা, সফলতা ও পরকালের চিরস্থায়ী জীবনের সাফল্য ও মুক্তি লাভ করবে।
Advertisement
দল-মত নির্বিশেষে সমকালীন বিশ্বের অনত্যম শ্রেষ্ঠ ইসলামিক স্কলার আল্লামা ইমাম গাজ্জালি রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র কিছু যুগশ্রেষ্ঠ উপদেশ মুসলিম উম্মাহর দুনিয়া ও পরকালের সফলতায় তুলে ধরা হলো-
>> যে সব মানুষ সচেতনতার সঙ্গে উল্লেখিত অভ্যাসগুলো নিজেদের মধ্যে বাস্তবায়ন করতে পারে। দুনিয়ার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত ওই সব মানুষের জন্য কল্যাণ ও সফলতার কারণ হয়ে যায়। আর সে অভ্যাস গুলো হলো- সব সময় আল্লাহ তাআলার ইচ্ছার (বিধানের) প্রতি সন্তুষ্ট থাকা, দুনিয়ার সব বিপদে দু’হাত তুলে শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার কাছে সাহায্য চাওয়া এবং যে কোনো সংকট বা সমস্যায় একনিষ্ঠভাবে ধৈর্য ধারণ করা।
কুরআন হাদিসের অনেক জায়গায় আল্লাহর বিধান পালন, বিপদে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া এবং ধৈর্য ধরণ করার বিষয়ে আল্লাহর কাছে ধরণা দেয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
>> মানুষের কিছু কাজ নিশ্চিত ধ্বংস ডেকে আনে। কুরআন এবং হাদিসে এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য রয়েছে। আর তাহলো- লোভ, হিংসা ও অহংকার। এ কাজ তিনটি মানুষের সব নেক আমলকে মাটি করে দেয়। যার ফলে মানুষগুলো চরম ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
Advertisement
>> মানুষের সফলতা ও কৃতিত্ব লাভে সঠিক মানসিকতা তৈরি করার পাশাপাশি নিজেদের জবানের হেফাজত জরুরি। কারণ অন্যায় ও অশালীন কথাবার্তা মানুষের সব ভাল আমল বা কাজগুলোকে ধ্বংস করে দেয়। এ কারণেই প্রিয়নবি জবানের হেফাজতকারীর জন্য জান্নাতের নিশ্চয়তা প্রদান করেছেন।
>> ভালো ও মন্দ এমন দুটি কাজ আছে; যা মানুষকে কখনো তৃপ্ত হতে দেয় না। যারা ভালো কাজটি গ্রহণ করবে, তারা সফল; আর যারা মন্দ কাজটি গ্রহণ করবে ধ্বংস তাদের জন্য অনিবার্য। সুতরাং ভালো কাজের গুণ অর্জনের পাশাপাশি মন্দ কাজের ভয়াবহতা থেকে নিজেকে রক্ষা করা জরুরি। আর তাহলো-
ভালো কাজের লোকটি হলো জ্ঞান অন্বেষণকারী মানুষ। আর সঠিক জ্ঞানে অন্বেষণকারী কখনো পথহারা হতে পারে না। আর এ কারণেই প্রত্যেক মানুষের উচিত ধর্মীয় নৈতিক উন্নত চরিত্রের জ্ঞান আর্জন করা।
পক্ষান্তরে মন্দ কাজের লোকটি হলো সেই ব্যক্তি, যে ধন-সম্পদের প্রবল লোভী। সম্পদের এ লোকই মানুষকে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে নিয়ে যায়। সুতরাং সম্পদের মাত্রাতিরিক্ত লোভ থেকে বিরত থাকা জরুরি।
>> প্রতিটি মানুষেরই উচিত হৃদয়ে আয়নায়, জ্ঞানের আয়না নিজের চারিত্র সৌন্দর্য দেখা। যদি চারিত্র সৌন্দর্য পরিলক্ষিত হয় তবে, পাপ বা অপরাধ করে চারিত্রিক সৌন্দর্যের আমলনামাকে ধ্বংস না করা যেমন আবশ্যক কর্তব্য তেমনি হৃদয়ের আয়না যদি চারিত্রিক সৌন্দর্য বিনষ্টকারী হিসেবে চিহ্নিত হয়ে তবে পাপ-পঙ্কিলতা থেকে তাওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসা একান্ত কর্তব্য।
>> আল্লাহর কোনো বিধান বা ফয়সালার প্রতি বিরক্তি বা অভিযোগ প্রকাশ না করা। কারণ আল্লাহ তাআলা সব ফয়সালা ও বিধান ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠিত। যেখানে জুলুমের কোনো আশংকা নেই।
>> দুনিয়ার প্রতিটি কাজে রাগ বা ঘোস্বাকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। কারণ ক্রোধ বা রাগ মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরাকেও নিঃশেষ করে দেয়। তাই সফলতা লাভে রাগমুক্ত জীবন-যাপন করা জরুরি।
>> কথা ও কাজে সর্বাবস্থায় কঠোরতা পরিহার করা আবশ্যক। কঠিন কথা মানুষের জন্য মারাত্মক ক্ষতি। এ ক্ষতির তুলনা এভাবে করা হয়েছে যে, শক্ত কথার কুফল এত ভয়াবহ যে, এর ফলে রেশমের মতো নরম অন্তরও পাথরের মতো শক্ত হয়ে যায়।
সর্বোপরি, জীবনে সফলতা লাভে এবং ব্যর্থতা পরিহারে উল্লেখিত বিষয়গুলো কুরআন-সুন্নাহ নির্দেশিত পন্থায় নিরলস কথা ও কাজের মাধ্যমে বাস্তবায়ন জরুরি। তবেই দুনিয়া ও পরকালের চিরস্থায়ী সফলতা সম্ভব।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী সঠিক কথা বলার সঠিক কাজ করার এবং সঠিক পথে চলার মাধ্যমে জীবনের ব্যর্থতার পরিবর্তে সফলতা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন। এমএমএস
এমএমএস/পিআর