আজ ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক অনন্য গৌরবময় দিন। এই দিনেই বাঙালি জাতি তাদের চিরকালীন দাসত্ব ঘুচিয়ে স্বাধীনতার অগ্নিমন্ত্রে উজ্জীবিত হয়েছিল এবং লাখো প্রাণের বিনিময়ে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতার লাল সূর্যটাকে।
Advertisement
দীর্ঘ নয় মাসের সশস্ত্র যুদ্ধ ও ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে বাঙালির এ স্বাধীনতা। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে রাজনীতির দীর্ঘ চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বাঙালি জাতি স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়। এরপর ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের 'ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলার' আহ্বান এবং 'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম' বাঙালির বুকে স্বাধীনতার বীজমন্ত্র প্রথিত করে।
সেদিন জাতির পিতার আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলার মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ সর্বস্তরের জনগণ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী গৌরবোজ্জ্বল সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও দুই লক্ষ মা বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলার জনগণ স্বাধীনতা অর্জন করে।
অপরদিকে এ দেশের মাটিতে ভিন্নচিত্রও আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। এ দেশেরই কিছু স্বার্থান্বেষী মানুষ পাকিস্তানি বাহিনীকে সমর্থন দিয়ে রাজাকার, আলবদর, আলশামস গঠন করে বাঙালিদের হত্যা, নির্যাতন, লুণ্ঠনে মত্ত হয়ে ওঠেছিল। তাদের বিচারের কাজটি স্বাধীনতার পরও সুসম্পন্ন হয়নি। আর '৭৫-এর পট-পরিবর্তনের পর তা একেবারেই অনিশ্চয়তার নিগড়ে পড়ে।
Advertisement
এর পর থেকে জাতি দেখে এসেছে ধীরে ধীরে পুনর্বাসিত অভিযুক্ত যুদ্ধাপরাধীদের আস্ফালন, যাদের অনেকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পর্যন্ত পেয়েছেন। আশার কথা, স্বাধীনতার চার দশক পরে হলেও এ দেশের মানুষ যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ইতিমধ্যে কয়েকজনের মৃত্যুদন্ড কার্যকরও করা হয়েছে। রায়ের অপেক্ষায় আছে আরো কয়েকজনের।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সংগঠন হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচারও শুরু হয়েছে। এই বিচার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই জাতি হিসেবে আমরা কিছুটা হলেও কলঙ্কমুক্ত হব। বাঙালি জাতি আজ বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতায় স্মরণ করবে স্বাধীনতার জন্য এ দেশের আত্মদানকারী বীর সন্তানদের, শ্রদ্ধা নিবেদন করবে স্বাধীনতার স্থপতি, বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক জাতীয় নেতাদের, আত্মদানকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের এবং নৃশংস গণহত্যার শিকার লাখো সাধারণ মানুষকে।
তরুণ প্রজন্ম তাদের চেতনায় লালন করবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। এবং যে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন নিয়ে এদেশের সাধারণ মানুষ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল, জীবনপণ শপথ নিয়েছিল তা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব আমাদের সবার।
আমাদের নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শাণিত করে তোলার বিকল্প নেই। স্বাধীনতার আদর্শই বাঙালির মুখ্য আদর্শ হোক- এ প্রত্যাশা আমাদের। বিশ্বের বুকে একটি স্বাধীন এবং সার্বভৌম শক্তি হিসেবে বাংলাদেশ নিজেকে প্রমাণ করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর এভাবেই আমরা একদিন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলবো।
Advertisement
লেখক : কলামিস্ট।
এইচআর/জেআইএম