কৃষি ও প্রকৃতি

চলনবিলের ক্ষিরা যাচ্ছে সারা দেশে

জমে উঠেছে চলনবিলের ঐতিহ্যবাহী ক্ষিরার হাট। চলনবিলের প্রাণকেন্দ্রে দিঘরিয়ার ক্ষিরার আড়ৎগুলো পাইকার ও বিক্রেতাদের ভিড়ে জমে উঠেছে। প্রতিদিন ভোর থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত বেচাকেনা হচ্ছে শত শত টন ক্ষিরা। চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশের উৎপাদিত ক্ষিরা রাজধানীসহ যাচ্ছে সারা দেশে। ক্ষিরার আড়ৎ থেকে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৭৫ টন ক্ষিরা রাজধানীতে সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলনবিলের উত্তর এলাকার তাড়াশ, নাটোরের সিংড়া ও বগুড়ার শেরপুরের ১টি ইউনিয়নের কৃষকদের উৎপাদিত ক্ষিরা বেচাকেনার জন্য দিঘরিয়া আড়ৎটি প্রায় ১৬ বছর আগে চালু হয়। সিরাজগঞ্জ, নাটোর ও বগুড়া জেলার ক্ষিরা চাষীরা এখানে বিক্রি করতে আসেন। প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি ট্রাক প্রস্তুত থাকে। বেলা ১১টা থেকে শুরু হয় বিক্রি। মহাজনরা ক্ষিরা কিনে ট্রাকে লোড দিতে থাকেন। এ কাজে নিয়োজিত রয়েছে প্রায় ৪০ জন শ্রমিক। কেনাবেচার মধ্য দিয়ে ১-২ ঘণ্টার মধ্যে ভরে যায় মহাজনদের আড়ৎ।

হাটে প্রচুর ক্ষিরা আমদানি হওয়ায় ওজনের পরিবর্তে বস্তা চুক্তিতে বিক্রি করা হয়। প্রকারভেদে প্রতি ছোট বস্তা ক্ষিরা বিক্রি হয় ২৬০ থেকে ৩২০ টাকা এবং প্রতি বড় বস্তা বিক্রি হয় ৫৫০ থেকে ৬৫০ টাকা পর্যন্ত। এ হাটটি ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে চলে এপ্রিল পর্যন্ত।

কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, তাড়াশ উপজেলার পশ্চিম এলাকার বারুহাস ও তালম ইউনিয়ন, নাটোরের সিংড়ার বিয়াস ইউনিয়ন এবং বগুড়ার শেরপুরের বিশালপুর ইউনিয়নের কৃষকরা প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে ক্ষিরা চাষ করে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ক্ষিরা চাষে ৩ হাজার হেক্টর জমি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে চাষ হয়েছে। এবছর ফলন কম হলেও দাম বেশি হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।

Advertisement

চাষীরা জানান, প্রতিবিঘা জমিতে ক্ষিরা চাষ করতে প্রায় ১০-১২ হাজার টাকা ব্যয় হয়। ১ বিঘা থেকে উৎপাদিত ক্ষিরা বিক্রি হয় ২৫-৩০ হাজার টাকা। এ আবাদে পোকা-মাকড়ের ঝামেলা কম, তাই ক্ষিরা চাষে কৃষকের আগ্রহ বেশি।

ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তাড়াশ অঞ্চলের উৎপাদিত ক্ষিরার মান ভালো, দামও কম। ক্ষিরার মান ভালো হওয়ায় এর কদর সারা দেশে রয়েছে।’

তাড়াশ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর ক্ষিরার ফলন ভালো হওয়ায় এবছরও আবাদে ঝুঁকেছেন কৃষকরা। সামনে আরও বেশি ক্ষিরার আবাদ হবে বলে আমি আশাবাদী।’

ইউসুফ দেওয়ান রাজু/এসইউ/এমএস

Advertisement