জাতীয়

ইতিহাসের নৃশংসতম কালরাত আজ

সেদিন মুয়াজ্জিনের আজানে ঘুম ভাঙেনি নগরবাসীর। এমনকি পাখির ডাকেও না। সেদিন পলাশ-শিমুলের রক্তমাখা রূপ ফিকে হয়ে আসছিল। রক্ত জবাতেও রক্ত ছিল না।

Advertisement

২৫ মার্চ। যুদ্ধের কোনো দামামা বাজেনি সেদিন। তবুও যুদ্ধ। ঘুমন্ত নগরবাসী। তবুও সর্বশক্তি প্রয়োগ সামরিক জান্তার। দুনিয়ার যুদ্ধ ইতিহাসে এমন কলঙ্কময় অধ্যায় আর দ্বিতীয়টি সৃষ্টি হয়নি, যা করেছিল ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তান সামরিক বাহিনী।

রক্তের হোলি খেলায় উম্মাদ বনে যাওয়া পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে সমস্ত মানবিকতা পরাজিত হয়েছিল সেদিন। একই রাষ্ট্র, একই শাসক। তবুও হিংস্রতায়, ক্ষিপ্রতায় কোনো কমতি ছিল না ইয়াহিয়া সরকারের।

একটি রাতের অভিযান। তাতেই যেন রক্ত গঙ্গা। রাজপথে মিলল শুধুই লাশের মিছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র, রিকসা চালক পড়ে রইল নিথর দেহে। শিশু, নারী, বৃদ্ধরাও বাদ গেল না পাকিস্তানি হায়েনার বুলেট থেকে।

Advertisement

ধর্মের দোহাই দিয়ে সকল অধর্মের ঘটনাই ঘটালো তারা। রক্ত-খুনেই থেমে থাকেনি, আগুনের লেলিহান শিখায় দোযখে রূপ দেয় ঢাকার অলি-গলি। খুন-আগুনের নির্মমতায় বাঙালির নিশানা মুছে দিতেই পাকিস্তানি হায়েনারা চালিয়েছিল এই পৈশাচিকতা।

২৫ মার্চের বর্ণনা দিতে গিয়ে ওই সময় পূর্ব পাকিস্তানে রয়টার্সের সাংবাদিক সাইমন ড্রিং লিখেছেন, ‘আমরা দেখলাম, দুই দিন পরও পুড়িয়ে দেয়া কক্ষগুলোতে ছাত্রদের মৃতদেহ একটু একটু করে পুড়ছিল। অনেক মৃতদেহ বাইরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল, অবশ্য হলের পার্শ্ববর্তী পুকুরেই বেশির ভাগ মৃতদেহ ভেসে ছিল। চারুকলার একজন ছাত্রের মৃতদেহ পড়ে ছিল তার ইজেলের পাশেই হাত-পা ছড়িয়ে। সাতজন শিক্ষক নিহত হয়েছেন। বাইরের ঘরে লুকিয়ে থাকা ১২ সদস্যের এক পরিবারের সবাইকেই হত্যা করা হয়েছে। সৈনিকরা অনেক মৃতদেহ সরিয়ে ফেলেছে। ইকবাল হলে এখনও ৩০টি মৃতদেহ পড়ে রয়েছে।’

লাশের গন্ধ আর স্বজন হারানোর আহাজারিতে সেদিন ঢাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠেছিল। রাষ্ট্রে থেকেও সেদিন রাষ্ট্রহীন হয়েছিল বাঙালিরা। খোদ রাষ্ট্রই নিপীড়নের দেয়াল তুলে দিয়ে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, ভোটের অধিকার চাওয়া বঞ্চিত এই জনগোষ্ঠীর ওপর।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। ২৫ মার্চ ঢাকার হাতিরপুল সংলগ্ন একটি বাসায় অবস্থান করেন। প্রত্যক্ষদর্শী এই রাজনীতিক বলেন, ‘সে দিনের বীভৎসতা কোনো ভাষায় বর্ণনা করবার নয়। একটি নিরস্ত্র জনগোষ্ঠীর ওপর এভাবে হামলার ঘটনা পৃথিবীতে আর হয়েছিল কিনা জানা নেই।

Advertisement

স্মৃতিচারণ করে সেলিম বলেন, ‘চারদিকে হত্যা আর ধ্বংসস্তূপের মধ্যে মানুষ দিশেহারা। সত্যি কথা, সেনা অভিযানে যে এমন হত্যাযজ্ঞ হবে তা কল্পনা করতে পারিনি। মধ্যরাত থেকেই কারফিউ চলছিল। বাইরে বেরুলেই গুলি করা হচ্ছিল। বস্তি, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছিল। গণহত্যা শুরু হয়ে গিয়েছিল ২৫ মার্চ মধ্য রাত থেকেই।

এএসএস/ওআর/আরএস