রাজনীতি

‘আমরা এর বেশি পারি না, এটা কিন্তু নয়’

কারাগারে অন্তরীণ খালেদা জিয়ার নির্দেশ অনুযায়ীই বিএনপির বর্তমান কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে জানিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, এখন যা করছি আমরা শুধু এতটুকুই করতে পারি, এর বেশি পারি না, এটা কিন্তু নয়।

Advertisement

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংহতি সমাবেশে নজরুল ইসলাম এ কথা বলেন। বাংলাদেশ লেবার পার্টি এ সমাবেশের আয়োজন করে।

তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ার একটাই কারণ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, উনি এতিমের টাকা চুরি করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কথা সঠিক প্রমাণ করতে উনি দোষ না করলেও সাজা হতে হবে।’

রাজনৈতিক ইচ্ছা ও উদ্দেশ্যে খালেদা জিয়ার মুক্তি বিলম্বিত হচ্ছে মন্তব্য করে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্যও তাকে বেশিদিন আটকে রাখা যাবে না। আইনই তাকে মুক্তি দেবে ইনশাআল্লাহ। আর যদি আইন অগ্রাহ্য করে বেআইনিভাবে জনগণের উপর চাপ প্রয়োগের চেষ্টা কেউ করে, এর যে প্রতিবাদ হবে সেই প্রতিবাদের দায়িত্ব তাদের নিতে হবে।’

Advertisement

‘আমরা যেখানে যাই নেতাকর্মীরা অসন্তুষ্ট, আমরা যে আন্দোলন করছি সেই আন্দোলনে তার (খালেদা জিয়া) মুক্তি হবে না। আমাদের অন্য কিছু করতে হবে। করতে হবে যখন, নিশ্চয়ই করা হবে। যাই করতে হবে বা করা হবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশেই করা হবে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এখন যা করছি তার (খালেদা জিয়া) পরামর্শ অনুযায়ীই করছি। তার নির্দেশ অনুযায়ীই করছি। বাইরে থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান (তারেক রহমান) আমাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।’

তিনি বলেন, ‘আজকে ২০ দলীয় শীর্ষ নেতাদের মিটিং আছে, তারা আলোচনা করে প্রস্তাব করবেন। আমাদের দলে আলোচনা হচ্ছে। সেই সব প্রস্তাব যেখানে পরামর্শ করা দরকার। সবাই মিলে তা বাস্তবায়ন করব।’

‘তবে একটা কথা আমরা এখন যা করছি আমরা শুধু এতটুকুই করতে পারি এর বেশি পারি না, এটা কিন্তু নয়। আমরা আরও বেশি কিছু করতে পারি। এদেশের জনগণ আরও বেশি কিছু করতে চায়। কিন্তু কখন কীভাবে, সেটা করা হবে সেই সিদ্ধান্তের ভার আমাদের উচিত নেত্রীর উপর ছেড়ে দেয়া’ বলেন নজরুল।

Advertisement

তিনি বলেন, ‘জেলাখানা আমাদের লোকজন দিয়ে ভরে গেছে, কোনো জেলখানা খালি নেই। আরও লাখ লাখ নেতাকর্মী প্রয়োজনে গ্রেফতার হওয়ার জন্য প্রস্তুত।’

যারা যুদ্ধে যাননি, তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শেখান

বিএনপি নেতা আরও বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি আমাদের থেকেও এখন বেশি বোঝেন যারা মুক্তিযুদ্ধের ধারে কাছে ছিলেন না। তখন যাদের বয়স ছিল কিন্তু যুদ্ধে যাননি এমন ব্যক্তিরা এখন আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা শেখান। তারা স্বাধীনতার চেতনা শেখান আমাদের। আমি তাদের বলতে চাই, আগে এটা পরিষ্কার করেন- আপনার যুদ্ধে যাওয়ার বয়স ছিল, আপনি যুদ্ধে যাননি কেন? তারপর বলেন, সেই যুদ্ধে কী চেতনা ছিল, আপনার ও আপনার ধারণায় অন্যদের।’

তিনি বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের অবদান স্বীকার করে আওয়ামী লীগ সরকার জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ খেতাব বীর উত্তম খেতাব দিয়েছিলেন। আজকে আওয়ামী লীগের কিছু নাবালক নেতা জিয়াউর রহমান সম্পর্কে আজেবাজে কথা বলেন। তিনি নাকি পাকিস্তানি চর ছিলেন, তিনি ঘটনাক্রমে মুক্তিযোদ্ধা হন।’

রাস্তা বন্ধ করে মিছিলে জনগণ বরং অসন্তুষ্ট

উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতিতে শুধু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিভিন্ন বাহিনীর লোকজন ও ছাত্রছাত্রীরা মিছিল করেছে দাবি করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘মনে হল আমরা একটু উন্নত হলাম এটাকে খুশি হল স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা ও সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। জনগণ নয়। আরে উন্নত হল দেশ, দেশ মানে জনগণ। জনগণ এতে যদি সন্তুষ্ট হত, এটাকে যদি জনগণ গুরুত্বপূর্ণ মনে করত। তবে তো জনগণ সোৎসাহে রাস্তায় নামবে, ফূর্তি করবে। কিন্তু সেই আনন্দ-ফূর্তি তো দেখলাম না।’

‘একই সঙ্গে মিয়ানমার এবং সাওস এই তালিকায় আসছে। ইন্টারনেট খোঁজেন, পত্রিকা খোঁজেন মিয়ানমার বা লাওসে কোন মিছিল হইছে কিনা। কোথাও হয়নি। এটা একটা শুরু মাত্র। আরও তিন বছর দেখবে, এরপর আরও তিন বছর দেখবে। এরপর আমরা উন্নয়নশীল দেশে যাব। অনেক দেশ এ তালিকায় এসে পড়েও গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশ সমৃদ্ধ হবে এতে সন্তুষ্ট না হওয়ার তো কোনো কারণ নেই, কিন্তু জনগণ সন্তুষ্ট হওয়ার জন্য যে অনুভূতি আসবে, হ্যাঁ আমরা উন্নত হয়েছি, সেই অনুভূতি জনগণের মধ্যে আসছে কিনা!’

‘এই উন্নয়নের ফসল সবাই পায়নি, সেজন্য এই উন্নয়নে সবাইকে সম্পৃক্ত করা যায়নি। যারা মিছিলে গেছে তাদেরও বাধ্য করা হয়েছে। রাস্তা বন্ধ করে মিছিল করায় জনগণ বরং অসন্তুষ্ট হয়েছে’ বলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য।

এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য কী হতে পারে

নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘জার্মানির একটি প্রতিষ্ঠানের জরিপ অনুযায়ী আমরা হলাম একটি স্বৈরাচারি দেশ। এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য কী হতে পারে। ইন্টারনেটে আসছে, আমাদের যিনি প্রধান তিনি যে ধরনের স্বৈরশাসক তার ছবির নিচের ছবি হল হিটলারের ছবি। এইচটি ইমাম সাহেব নাকি বলেছেন জার্মানির কাছ থেকে আমাদের কিছু শেখার নেই। হিটলারের ছবি উপর যদি আমার ছবি থাকে তবে হিটলারের কাছ থেকে কী শেখার আছে আমার।’

বাংলাদেশ লেবার পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবীব লিংকন, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আখতারুজ্জামানসহ অন্যান্য নেতারা বক্তব্য দেন।

আরএমএম/জেএইচ/আরআইপি