ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় ঝাড়খণ্ড রাজ্যে এক মুসলিম মাংস ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা করার দায়ে ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। গোমাংস পরিবহনের জন্যে গত বছর ৫৫ বছর বয়সী আলিমুদ্দিন আনসারীকে পিটিয়ে হত্যা করেছিল কট্টর হিন্দুদের একটি গ্রুপ। খবর বিবিসি।
Advertisement
ভারতে সাম্প্রতিক সময়ে গরুর মাংস খাওয়া, রাখা বা বিক্রি করার কারণে মুসলমানদের উপর বেশ কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটেছে কিন্তু এই প্রথম এ ধরনের ঘটনায় কাউকে শাস্তি দেওয়া হলো।
হিন্দুরা গরুকে অত্যন্ত পবিত্র একটি প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করেন। কট্টর হিন্দুরা মনে করে এই প্রাণীটিকে রক্ষা করা তাদের ধর্মীয় দায়িত্ব। এছাড়াও দেশটির বিভিন্ন রাজ্যে গরু হত্যা অবৈধ। এর মধ্যে রয়েছে ঝাড়খণ্ড রাজ্যও।
ভারতে তথাকথিত গো-রক্ষার নামে এ ধরনের হামলার ঘটনায় পুলিশের তদন্তে দেখা গেছে, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় তাদেরকে পরে খালাস করে দেওয়া হয়েছে।
Advertisement
আনসারীকে হত্যার ঘটনায় ১২ জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। যে ১১ জনের সাজা হয়েছে তারা বাদে বাকি একজনের ব্যাপারে আদালত এখনও কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি। অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি একজন কিশোর।
এই মামলার সরকারি আইনজীবী সুশীল কুমার শুক্লা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, আমরা সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছিলাম আদালতের কাছে। তিনি বলেন, কিন্তু আদালত অভিযুক্ত একজনের বিরুদ্ধে কোন শাস্তির কথা বলেনি। কারণ তার বয়স ১৬ থেকে ১৮।
নিহত মুসলিম আলিমুদ্দিন আনসারীর ছেলে বলেন, আদালতের রায়ে তার পরিবার সন্তুষ্ট। তবে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে কোন ধরনের ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় তারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
রায়ের পর আদালতের বাইরে আনসারীর স্ত্রী মরিয়ম খাতুন সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় বলেন, তার স্বামীর মৃত্যু একটি মর্মান্তিক ঘটনা এবং এতে তাদের বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। তবে আমরা আর রক্তপাত চাই না।
Advertisement
তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে তিনি সমাজে শান্তিতে বসবাস করতে চান। হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টি বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে গো-রক্ষার নামে বিভিন্ন গ্রুপের তৎপরতা বৃদ্ধি পায়। সাম্প্রতিক সময়ে তারা বিভিন্ন মুসলিম ও দলিত সম্প্রদায়ের উপর হামলা করে তাদের কাছে গোমাংস পাওয়ার অভিযোগে।
গত বছর এ ধরনের তৎপরতার বিরুদ্ধে ভারতে বেশকিছু প্রতিবাদ বিক্ষোভও হয়েছে। ফেসবুক পোস্ট নট ইন মাই নেইম থেকে এই প্রতিবাদের সূচনা ঘটে। রাজধানী দিল্লিতে ২০১৭ সালের জুন মাসে মুসলিম এক কিশোরকে হত্যার পর সাবা দেওয়ান নামে একজন ফেসবুকে হ্যাশট্যাগ দিয়ে এই প্রচারণা চালিয়ে প্রতিবাদের ডাক দিয়েছিলেন।
এ ধরনের হামলায় ভারতে প্রায় ১২ জন নিহত হয়েছে। বেশিরভাগ সময়ই গুজবের উপর ভিত্তি করে মুসলমানদের উপর এসব হামলা চালানো হয়, পরে যার কোন তথ্যপ্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
টিটিএন/পিআর