ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান লিমিটেড প্রিমিয়ার ক্রিকেট সুপার লিগ খেলতে না পারায় কোটি ভক্তের মন খারাপ। রকিবুল হাসান, মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ও আমিনুল ইসলাম বুলবুলের মত মোহামেডানের সাবেক অধিনায়করা তো কিছুতেই মানতে পারছেন না, ক্রিকেটের সেরা ছয়ে নেই তাদের প্রিয় মোহামেডান।
Advertisement
এ নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে হতাশা ব্যক্ত করার পাশাপাশি কিছু পরামর্শও দিয়েছেন মোহামেডান তথা জাতীয় দলের ঐ তিন সাবেক অধিনায়ক। তাদের তিনজনেরই কথা মোহামেডান শুধু ক্লাব নয়। ক্রীড়া শক্তি নয়। দেশের খেলাধুলার এক ঐতিহ্যবাহী শিবির। কোটি ভক্ত যে দলের অন্তপ্রাণ সমর্থক। ফুটবল, ক্রিকেট, হকি, টেবিল টেনিস, দাবাসহ অন্যান্য খেলায় আকাছোঁয়া সাফল্য যাদের সঙ্গী ছিল। যে দলের খেলা থাকলে হাজারো জনতার ঢল নামতো, যে দলে দেশের সিংহভাগ তারকা ও নামী ক্রিকেটার খেলে গেছেন। অর্জুনা রানাতুঙ্গা সনৎ জয়সুরিয়ার মত বিশ্ব খ্যাত ক্রিকেটার যে সাদাকালো জার্সি গায়ে চাপিয়েছেন, সেই দল প্রথমবার ক্রিকেটের সুপার লিগে ওঠেনি, তা ভাবনার অতীত! র
রকিবুল, নান্নু ও বুলবুলরা এই ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বেড়িয়ে আসার জোর তাগিদ দিয়ে বলেছেন, মোহামেডানের সাংগঠনিক কাঠামো আরও সুদৃঢ় করা জরুরি। পেশাদার ব্যবস্থাপনা অতি জরুরি। আর যেন তেন মানের দল না সাজিয়ে দক্ষ কোচ এবং ভালো মানের টিম ম্যানেজমেন্টের হাতে একটা সমৃদ্ধ ও শক্তিশালি দল ছেড়ে দিতে হবে। তাহলে অবশ্যই মোহামেডান আবার স্বীয় ঐতিহ্য ফিরে পাবে। পূর্বসুরীদের সাথে দ্বিমত পোষন না করলেও মোহামেডানের দুই সাবেক ক্রিকেটার খালেদ মাসুদ পাইলট ও মোহাম্মদ আশরাফুল সুপার লিগে উঠতে না পারাকে খুব বড় করে দেখতে নারাজ। তারা পুরো বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখতে চান। যার অধিনায়কত্বে ২০০৯ সালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আবাহনীকে হারিয়ে মোহামেডান শেষ বার লিগ বিজয়ী হয়েছিল, সেই খালেদ মাসুদ পাইলট মনে করেন, মোহামেডান অবশ্যই দেশের অন্যতম শীর্ষ, জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী দল। এ দলের সাবেক ক্রিকেটার ও অধিনায়ক হিসেবে তারও খারাপ লেগেছে।
তবে পাইলট বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখতে চান। তার ব্যাখা, ‘যেহেতু এখন দল বদল হয় প্লেয়ার্স বাই চয়েজে। যেখানে প্রতি দল আগের বারের ৫ জন করে ক্রিকেটার রেখে দেয়ার সুযোগ পাচ্ছে। তার মানে অর্ধেক শক্তি আগের বারের মতই থেকে যাচ্ছে। সঙ্গে নতুন ৫/৭ জন যোগ হচ্ছে। এর সঙ্গে ম্যাচ পিছু একজন বিদেশি ক্রিকেটার যোগ হচ্ছেন। এতে করে দলের শক্তিমাত্তায় বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটার অবকাশ নেই। যাদের বা যে দলের আগের বারের লাইন আপ ভালো ছিল, তাদের দল আপনা আপনি ভালো হবে। কারণ সবাই তার আগের বছরের সেরা পাঁচজনকে ঠিক রেখে দিচ্ছে। এই নিয়মে কম বেশি সব দলের শক্তির হের ফের ঘটছে না। তাতে শক্তির অনুপাত থাকছে কাছাকাছি। প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেড়েছে। দলগুলোর শক্তি ও সামর্থ্য প্রায় কাছাকাছি হয়ে পড়েছে। আর তাতে করে যে কোন দল সুপার লিগ থেকে ছিটকে পড়তে পারে।’
Advertisement
সত্যিই পারে। পড়েছেও। পাইলট যে দলের কোচ, সেই প্রাইম ব্যাংক অনেক টাকার দল। কাগজে কলমে মোহামেডানের চেয়ে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী লাইন আপ। তারপরও প্রাইম ব্যাংক সেরা ছয়ে নেই এবার। মোহামেডানের মত প্রাইম ব্যাংকও সুপার লিগ খেলতে পারেনি।
পাইলটের অধিনায়কত্বে শেষ বার যখন সাদা কালোরা ক্রিকেট লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল, সেই দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। এবারের লিগে তলানিতে থাকা আশরাফুলও পাইলটের সাথে একমত। তার সোজা সাপটা কথা, ‘প্লেয়ার্স বাই চয়েজে দলগুলোর শক্তির তারতাম্য অনেক কমে গেছে। এথন গড়পড়তা সবার শক্তি ১৯-২০ হয়ে গেছে। বড়জোর ১৮-২০। প্রাইম ব্যাংক অনেক ভালো দল নিয়েও সুপার লিগে যেতে পারেনি। আমাদের কলাবাগান কেসির লাইন আপও ভাল ছিল। কিন্তু আমরা তলানিতে। কাগজে কলমে এক নম্বর দল আবাহনী, যে দলে আছে সাত-আটজন জাতীয় ক্রিকেটার। সেই দলও তিন ম্যাচ হেরে গেছে।’
মোদ্দা কথা, পাইলটের মত আশরাফুলও মোহামেডানের সুপার লিগ খেলতে না পারাকে খুব বড় করে দেখতে নারাজ। তাদের ব্যাখ্যা, ‘প্লেয়ার্স বাই চয়েজ সিষ্টেমে এমন হতেই পারে। অনেক বড় দলের স্বপ্ন পূরন নাও হতে পারে।’
এআরবি/এমআর/আরআইপি
Advertisement