দেশজুড়ে

বীরকন্যা কাঁকন বিবির মরদেহ বাড়িতে

বীর মুক্তিযোদ্ধা কাঁকন বিবির মরদেহ তার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের জিরারগাঁও গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার বেলা সোয়া ১১টায় তাকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স বাড়িতে গিয়ে পৌঁছায়। সেখানে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও এলাকাবাসী কাঁকন বিবির মরদেহে শ্রদ্ধা জানান। একমাত্র মেয়ে সকিনা বিবি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

Advertisement

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার রাত ১১টা ৫ মিনিটে কাঁকন বিবি মারা যান। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। তিনি একমাত্র মেয়ে সকিনা বিবিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কাঁকন বিবির মরদেহ তার মেয়ের কাছে হস্তান্তর করে। এরপর ওসমানী হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. একে মাহবুবুল হক হাসপাতালে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে এই মুক্তিযোদ্ধার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

এছাড়া সিলেট জেলা প্রশাসন ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা তার মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। সকাল সাড়ে ৯টায় ওসমানী হাসপাতালের একটি অ্যাম্বুলেন্স কাঁকন বিবির মরদেহ নিয়ে দোয়ারাবাজারের পথে যাত্রা শুরু করে।

Advertisement

কাঁকন বিবির একমাত্র মেয়ে সকিনা বিবি জানান, বিকেল ৪টায় জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হবে।

গত সোমবার রাতে নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগে ভর্তি হন কাঁকন বিবি। এর আগে গত বছর ২১ জুলাই হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার পর দীর্ঘ একমাস ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন তিনি। তবে এবার তাকে আর বাঁচানো গেল না।

কাঁকন বিবির জন্ম ১৯১৫ সালে বলে জানিয়েছেন তার ভাগ্নে ইনছান আলী। মেঘালয়ের নেত্রাই হাসিয়া পল্লীতে তিনি জন্মেছিলেন। কাঁকন বিবির স্বামী সাঈদ আলীও প্রয়াত।

১৯৭১ সালে ৩ মাস বয়সী শিশু সকিনাকে রেখে মুক্তিযুদ্ধে যান কাঁকন বিবি। প্রথমে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে গুপ্তচরের কাজ করলেও পরবর্তীতে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন তিনি। পাক বাহিনীর হাতে আটক হয়ে নির্যাতনের শিকারও হয়েছেন এই বীর যোদ্ধা।

Advertisement

এরপর ছাড়া পেয়ে মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলীর কাছে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নেন কাঁকন বিবি। রহমত আলীর দলে সদস্য হয়ে সশস্ত্র যুদ্ধ করেন তিনি। একইসঙ্গে চালিয়ে যান গুপ্তচরের কাজ। ১৯৭১ সালের নভেম্বর মাসে টেংরাটিলার সম্মুখ যুদ্ধে কয়েকটি গুলি তার শরীরে বিদ্ধ হয়।

১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে বীরপ্রতীক খেতাবে ভূষিত করেন। কিন্ত তার এ বীর প্রতীক খেতাব এখনও গেজেটভুক্ত হয়নি।

সখিনা বলেন, ৯৬ সালে কাঁকন বিবিকে আওয়ামী লীগ সরকার বীর প্রতীক খেতাব দিলেও তা গেজেটভুক্ত না হওয়ায় মায়ের মনে কষ্ট ছিল। বীর প্রতীকের সুবিধাও তিনি পাননি। আমাদের দাবি এ সুবিধাগুলো যেন আমারা পাই সেজন্য দ্রুত গেজেটভুক্তির দাবি জানাচ্ছি।

ছামির মাহমুদ/এফএ/আরআইপি