জাতীয়

মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্তিতে ফের বাছাই কমিটি

মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য ফের বাছাই কমিটি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

Advertisement

বুধবার সচিবালয়ে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালন, ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের কর্মসূচি এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নতুন প্রকল্প নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী একথা জানান।

নিয়ম না মেনে প্রস্তাব পাঠানোর জন্য মুক্তিযোদ্ধা অন্তর্ভুক্তি যাচাই-বাছাই কমিটি স্থগিত করা হয়েছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে আবার নতুন কমিটি করেছি। কাজটি যাতে আরও স্বচ্ছভাবে হয়, দ্রুত হয়- সেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। যাদের তালিকা করা হয়েছিল, তারা আবার যাচাই-বাছাইয়ের আওতায় আসবেন।’

যুদ্ধের এতো বছর পরও মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত তালিকা করা যায়নি। সরকার কবে নাগাদ মুক্তিযোদ্ধাদের চূড়ান্ত একটি তালিকা করতে পারবে- জানতে চাইলে মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমি আশাবাদী আমাদের মেয়াদকালে এটা করতে পারব। না পারলেও যেটুকু আমাদের বিবেচনায় চূড়ান্ত, সেটা আমরা পাবলিশ করে দেব। এটার কাজ শেষ পর্যায়ে।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘তালিকা করে আমরা সিল করে দেব না। সেটার জন্য একটা আইনও করতে চাই যে, এই এভাবে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে। কেউ যদি বাদ পড়ে তার প্রতি তো আমি অবিচার করতে পারি না।’

মন্ত্রী বলেন, ‘এটা করার পরই বিশ্বের সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে আট ধরণের বারকোড দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ তৈরি করা হবে। বাংলাদেশে হয়তো টাকা জাল করা সহজ হবে, কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের সনদ জাল করা সোজা হবে না।’

আগের সরকারগুলোর মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অন্তর্ভুক্তির কার্যক্রম স্বচ্ছতার সঙ্গে করেনি বলেও অভিযোগ করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী।

ক্রেস্ট জালিয়াতি : শাস্তি হয়নি কারো

Advertisement

মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য বিদেশি বন্ধুদের সম্মাননা ক্রেস্ট জালিয়াতির ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তির বিষয়ে জনতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘আমার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব ছিল তদন্ত করা। সরকারি কর্মচারীদের শৃঙ্খলা অনুযায়ী আমরা কিছু করতে পারি না। এটা করার মালিক জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আমরা তদন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে অনেক আগেই পত্র দিয়েছি। তাগিদপত্রও দিয়েছি। কারণ আমরা যেখানেই যাই একটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ি। কী হল- এটা জানার অধিকার মানুষের আছে।’

স্বাধীনতার চার দশক পূর্তি উপলক্ষে ২০১৩ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনায়ক, রাজনীতিবিদ, দার্শনিক, শিল্পী-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, বিশিষ্ট নাগরিক ও সংগঠনকে সম্মাননা দেয় সরকার।

বিশিষ্টজনদের একটি করে সম্মাননা ক্রেস্ট দেয়া হয়। প্রতিটি ক্রেস্টে এক ভরি স্বর্ণ ও ৩০ ভরি রুপা থাকার কথা ছিল। কিন্তু বিএসটিআই (বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট) এ একটি ক্রেস্ট পরীক্ষা করায় মন্ত্রণালয়। তাতে দেখা যায়, ক্রেস্টটিতে এক ভরির জায়গায় সোয়া তিন আনা স্বর্ণ এবং রুপার বদলে ৩০ ভরি পিতল, তামা ও দস্তা দেয়া হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা ক্রেস্টে স্বর্ণ জালিয়াতি নিয়ে ২০১৪ সালের ৬ এপ্রিল একটি দৈনিক পত্রিকা প্রতিবেদন প্রকাশ করলে তখনকার ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার জিল্লার রহমানকে (বর্তমানে সমাজকল্যাণ সচিব) প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ কমিটি একই বছরের ৮ মে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করে।

পরে ২০১৪ সালের ৩ আগস্ট ক্রেস্ট কেলেঙ্কারির ঘটনা অধিকতর তদন্তের জন্য তখনকার বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল-মামুনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

এই কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, সংসদীয় কমিটির নির্দেশনায় তদন্তের পর এই ধরনের কমিটির কাজ করার কোনো ভিত্তি নেই, আইন মন্ত্রণালয়ের এমন মতামতের পর তারা কোনো কাজ করেননি।

আরএমএম/এমবিআর/এমএস