দেশজুড়ে

কক্সবাজারে আবারো বন্যার পদধ্বনি

কক্সবাজারে আবারো থেমে থেমে ভারী বর্ষণ শুরু হয়েছে। বৃষ্টির তোড়ে মিঠাপানির পাঁচ নদীতে নেমেছে ঢল। এতে করে সাম্প্রতিক বন্যায় সৃষ্ট ভাঙন দিয়ে পানি ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে জেলার সিংহভাগ নিম্নাঞ্চল। গ্রামের পর গ্রাম ক্রমে পানিবন্দি হতে থাকায় পুরো কক্সবাজারে আবারো বন্যার পদধ্বনি দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি ও ঢলের পানি রাস্তার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার অনেক সড়ক ও উপ-সড়কে বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। অনেক এলাকায় সড়ক ভেঙে বিচ্ছিন্ন রয়েছে সব ধরণের যোগাযোগ। ব্যাহত হচ্ছে আমন চাষাবাদ। ফলে সাম্প্রতিক বন্যায় ভাঙনের কবলে পড়া নদীর তীর ও ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি-ঘর মেরামত সম্ভব না হওয়ায় আবারো দীর্ঘ পানিবন্দি হওয়ার আশঙ্কায় দিনাতিপাত করছেন জেলার নিম্নাঞ্চলের মানুষ। জেলা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ভারী বর্ষণ ও বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় কক্সবাজার উপকূলকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। কক্সবাজার জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত আরো কয়েকদিন স্থায়ী হতে পারে উল্লেখ করে, আবহাওয়া অফিস সংশ্লিষ্টরা সবাইকে সর্তক অবস্থায় থাকতে এবং পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।জুন মাসের শেষের দিকে শুরু হয়ে চলতি মাসের শুরুতে শেষ হওয়া বন্যায় জেলার কক্সবাজার সদর, চকরিয়া, পেকুয়া ও রামু উপজেলা লাখো বাসিন্দা মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতির মুখে পড়েন। মাতামুহুরী, বাঁকখালী ও ঈদগাঁও ফুলেশ্বরী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভেঙে গেছে বাঁধের একাধিক স্থান ও অসংখ্য ঘরবাড়ির। বৃহস্পতিবার রাত থেকে ক্রম বৃষ্টির কারণে নদী ও সমতল এলাকায় পানি বাড়তে থাকায় আবারো বন্যার পদধ্বনি দেখা দিয়েছে। এ কারণে নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন দুর্ভোগে পড়া লোকজন। গত বন্যায় জেলায় প্রায় ২১ কিলোমিটার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে জানায় জেলা প্রশাসন সূত্র।কলাতলীর ব্যবসায়ী হাবিব মিজবাহ ও মাওলানা জামাল উদ্দিন জানান, ভারী বর্ষণের পানি জমে শহরের হোটেল-মোটেল জোন, কলাতলী, লারপাড়া, চাদেরপাড়া, হাজিপাড়া, পেশকারপাড়া, এসএমপাড়া, বিডিআর ক্যাম্প, পেতাসওদাগরপাড়া, রুমালিয়ারছরা, চরপাড়া, সমিতিপাড়াসহ শহরের আশপাশের নিম্নাঞ্চল বার বার প্লাবিত হচ্ছে।  বার্মিজ মার্কেট এলাকার দোকানি শফিউল আলম ও ইকবাল বাহার জানান, শহরে টানা ১০ থেকে ১৫ মিনিট বৃষ্টি হলে বাজারঘাটা এলাকার সড়ক দুই থেকে তিন ফুট পানিতে ডুবে থাকছে। রিকশা ছাড়া অন্য কোন যানবাহন চলাচল কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। বড়বাজার, বার্মিজ মার্কেট ও বাজারঢ়াটা এলাকার শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জলমগ্ন থাকায় খোলা সম্ভব হচ্ছে না। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে নষ্ট হচ্ছে মালামাল।তাঁরা আরো জানান, একটু বৃষ্টি হলেই এ সড়কের পাশাপাশি হাঁটু থেকে কোমর সমান পানি চলাচল করছে বৌদ্ধ মন্দির সড়ক, গোলদিঘীর পাড়, অ্যাড. সালামত উল­াহ, বড়বাজার এলাকা ও পেশকারপাড়ায়। রামু উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগ সভাপতি রিয়াযুল আলম জানান, গত দুই দিনের বৃষ্টিপাতে খুনিয়াপালং ইউনিয়ন ছাড়া ফতেখারকূল, কাউয়াকূপ, কচ্ছপিয়া, গর্জনিয়া, চাকমারকূল, জোয়ারিয়ানালা ও দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি এলাকা আবারো প্লাবিত হয়েছে। গত বন্যায় বাঁকখালী নদীর তীর রাজারকুল, অফিসেরচর, মুক্তারকুল, পিএমখালীসহ ভাঙনের কবলে পড়া একাধিক স্থান মেরামত করা সম্ভব না হওয়ায় সেসব স্থান দিয়ে সহজে পানি ঢুকে গ্রামের পর গ্রাম আবারো পানিবন্দি হয়ে পড়ছে।   তিনি আরো জানান, রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়কের কাউয়ারকুপ গাছুয়াপাড়া ফরেস্ট অফিস এলাকায় রাস্তার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় বন্ধ রয়েছে সড়ক যোগাযোগ।  চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জাফর আলম এমএ জানান, ভারী বর্ষণে মাতামুহুরী নদীর পানি আবারো বাড়ছে। বৃষ্টির পানি জমছে সমতল এলাকাতেও। নদীর ভঙ্গুর বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করায় বরইতলী, হারবাং, লইক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, কাকারা, পৌরসভার চিরিঙ্গা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল ধীরে ধীরে প্লাবনের শিকার হচ্ছে। ক্রমে পানিবন্দি হচ্ছে পার্শ্ববর্তী উপজেলা পেকুয়াসহ বিশাল এলাকা। অপরদিকে, মেরামত কাজ শুরু হওয়ার চার দিনের ব্যবধানে ফের ভারী বর্ষণে মাতামুহুরী নদীর পানির প্রবল চাপে ভেঙে গেছে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার চিরিঙ্গা ইউনিয়নের পালাকাটা জেটি (রাবার ড্যাম) সড়কের আড়াইশত মিটার বেড়িবাঁধ। এতে শনিবার দুপুর থেকে নদীর পানির প্রবল চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে নদীর পানি। চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলাম জানান, মেরামত করা বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। বেড়িবাঁধের ওই অংশ দিয়ে নদীর পানি অনায়সে পানি ঢুকে পড়ায় গ্রামের লোকজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। টানা বর্ষণে পাহাড়ি ঢলে মহেশখালীর গোরক ঘাটা-জনতা বাজার সড়কের হোয়ানক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ও শাপলাপুর এলাকায় এবং ছনখোলা পাড়ায় প্রধান সড়কের তিনটি স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এতে বন্ধ হয়ে গেছে সড়ক যোগাযোগ। আটকে পড়েছে পান ও মালবাহী অসংখ্য গাড়ি। সদরের পোকখালীর আল-জামিয়া আল-ইসলামীয়া পোকখালী মাদ্রাসার সহকারি পরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ আজিজ জানান, সাম্পতিক বন্যায় ঈদগাঁও নদীর ছমিউদ্দিন পাড়ায় ভাঙনের কবলে পড়া বাঁধ দিয়ে অনবরত পানি ঢুকে বিস্তৃর্ণ এলাকা ধীরে ধীরে পানিবন্দি হয়ে পড়ছে। অনেক সড়ক-উপসড়ক পানিতে ডুবে থাকায় বিঘ্নিত হচ্ছে জন ও যান চলাচল। এছাড়াও ভারী বর্ষণে জেলার আমন চাষাবাদ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। শত শত একর আমন বীজতলা প্লাবিত হওয়ায় কৃষকেরা চারা উত্তোলন করতে পারছেন না। কৃষকরা জানান, আমন বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার কারণে চারা পঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জাগো নিউজকে জানান, ভাঙনের কবলে পড়া নদী তীর মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হলেও এখনো মেরামত সম্ভব হয়ে উঠেনি। আবরো ভারী বৃষ্টিপাত চলায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে বলে খবর আসছে। জনদুর্ভোগ সম্পর্কে খোঁজ রাখতে ইউএনওদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।সায়ীদ আলমগীর/এআরএ/এমআরআই

Advertisement