মঙ্গলবার বেলা ১১টা। রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স (এনআইএনএস) হাসপাতালের চতুর্থ তলায় আইসিইউ’র বাইরে তখন বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার সাংবাদিকরা আইসিইউতে চিকিৎসাধীন নেপালে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত পাইলট আবিদের স্ত্রী আফসানা খানম টপির শারীরিক অবস্থার বিষয়ে পূর্বনির্ধারিত প্রেস ব্রিফিংয়ের জন্য অপেক্ষা করছেন।
Advertisement
গণমাধ্যমকর্মীরা ছাড়াও সেখানে টপির শারীরিক অবস্থা জানতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষার প্রহর গুনছিলেন তার নিকটাত্মীয়রা। সকাল থেকেই তারা নানাভাবে আইসিইউ’র চিকিৎসকদের কাছে টপির শারীরিক অবস্থা জানার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে ‘টপি বাঁচবে কিনা’ তা জানতে চাইছিলেন। তারা সবাই বলছিলেন, ওর কিছু হলে মাহির (টপির ছেলে) কী হবে? বিমান দুর্ঘটনায় সুখের সংসারটা ভেঙে তছনছ হয়ে গেল।
ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন টপির প্রকৃত শারীরিক অবস্থা জানার জন্য শুধু স্বজনরা নন, দেশের অসংখ্য মানুষ উদগ্রীব হয়ে আছেন।
নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম মঙ্গলবার সকালে প্রেসব্রিফিংয়ে শারীরিক অবস্থার সর্বশেষ তথ্য তুলে ধরে বলেন, নিহত পাইলট আবিদের সহধর্মিণী রোববার ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। ভর্তির পর দ্রুত তার মাথার সিটি স্ক্যানসহ অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। তার ব্রেনে রক্ত চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় দ্রুত ক্যাথল্যাবে নিয়ে অস্ত্রোপচার শেষে আইসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। রোববার রাতে তার রি-স্ট্রোক হয়।
Advertisement
তিনি জানান, প্রথমে তার ইসকিমিক স্ট্রোক ছিল পরবর্তীতে হেমোরেজিকে ট্রান্সফরমেশন হয়ে যায়। এ অবস্থায় রাত ১২টা থেকে ৩টা পর্য়ন্ত ফের অস্ত্রোপচার হয়। তার ব্রেনের ওপরের খুলির একটা অংশ খুলে রাখা হয়েছে। ব্রেনের প্রেসার বেশি থাকায় খুলির অংশটি খুলে রাখা হয়েছে বলে জানান চিকিৎসকরা। ভবিষ্যতে প্রেসার কমে গেলে সেটি লাগানো হবে।
হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক জানান, রোগীর গতকালের (সোমবার) ও আজকের (মঙ্গলবার) শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে। তিনি ভেন্টিলেটর মেশিনের সাহায্য শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করছেন। তার হার্ট, কিডনি, লিভার এবং অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সচল আছে। গতকাল ব্লাড প্রেসার বেশি থাকলেও ১২০/৮০। ওনার কিডনি থেকে ইউরিন বের হচ্ছে। হার্টবিট চলছে। কিন্তু ব্রেনের দিক থেকে খুব একটা উন্নতি হয়নি। সাত সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা চলছে। কিছু ওষুধ বাদ দেয়া হয়েছে কিছু নতুন ওষুধ যোগ করা হয়েছে। বোর্ডের সিদ্ধান্ত তার চিকিৎসা চলবে।
তিনি জানান, বুধবার সকাল ১০টায় আরেকটি মেডিকেল বোর্ড করে পরবর্তী চিকিৎসা নির্ধারণ করা হবে। প্রয়োজনে এর আগে ব্রেনের আরও একটি সিটিস্ক্যান করে নেয়া হবে। এ মুহূর্তে চিকিৎসা চলতে থাকবে। তবে সার্বিকভাবে তার অবস্থা সংকটাপন্ন, আশঙ্কাজনক। কিন্তু এখনও তিনি জীবিত আছেন।
তাকে বিদেশে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করা যাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, এ অবস্থায় তাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া অসম্ভব। এ অবস্থা থেকে তিনি কখনও সুস্থ হবেন কিনা জানতে চাইলে ডা. বদরুল বলেন, কয় ঘণ্টা, কয় মাস বা কয় বছর লাগবে তা বলা মুশকিল। সবকিছু নির্ভর করবে তার হেমোডাইনামিক কন্ডিশনের ওপর।
Advertisement
পূর্ব অভিজ্ঞতায় এ ধরনের রোগীর সুস্থ হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ব্রেনস্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর দুই দফা অস্ত্রোপচারের পর এখন যে অবস্থা রয়েছে তা সংকটাপন্ন। তবে অামরা কারও ন্যাচারাল ডেথ না হওয়া পর্যন্ত ডেথ ঘোষণা করতে পারি না।
এমইউ/এমবিআর/বিএ