আন্তর্জাতিক

পৃথিবীর একমাত্র সাদা পুরুষ গণ্ডারের মৃত্যু

অবশেষে মারা গেল কেনিয়ায় সংরক্ষিত শেষ তিনটি সাদা গণ্ডারের একমাত্র পুরুষটি। গতকাল সোমবার কেনিয়ার গণ্ডার সংরক্ষণশালা কর্তৃপক্ষ বয়স্কজনিত কারণে গণ্ডারটির মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে।

Advertisement

সুদান নামক ওই গণ্ডারটির মৃত্যুর পর এ প্রজাতির গণ্ডারের প্রজননের আর কোনো সম্ভাবনা থাকল না। নাজিন আর পাটু নামে আর মাত্র দুটি নারী গণ্ডার বেঁচে আছে পৃথিবীতে।

১৯৭৩ সালে তৎকালীন সুদানের সাম্বে-তে জন্ম হয় সাদা গণ্ডার সুদানের। দেশ ভাগ হয়ে সাম্বে এখন দক্ষিণ সুদানের অন্তর্গত। তবে সাদা গণ্ডারের নাম পাল্টায়নি। সুদান নামেই সে পরিচিত পায়। জন্মের এক বছর পর সুদানকে চেক প্রজাতন্ত্রে চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ২০০৯ সালে তাকে আনা হয় কেনিয়াতে। তখন থেকেই স্থানীয় একটি সংরক্ষণশালায় রাখা হয় তাকে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, ৪৫ বছর বয়সী সুদান ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে। তার প্রজনন ক্ষমতা কমে যায়। সাদা এ পুরুষ গণ্ডারটির সুশ্রসার জন্য সর্বক্ষণিক চিকিৎসক নিয়োজিত রাখা হয়। তার ডিএনএও সংগ্রহ করা হয়েছে।

Advertisement

নাজিন আর পাটু : কেনিয়ার ওল পেজেটা অভয়ারণ্যে আর মাত্র দু’টি সাদা গণ্ডার বেঁচে রইল৷ মৃত্যু হয়েছে একমাত্র পুরুষ গণ্ডার সুদানের। বিশেষজ্ঞরা চেষ্টা চালিয়েছিলেন, সাদা গণ্ডারের বংশ বিস্তার করতে৷ কিন্তু সুদানের এতই বয়স হয়েছিল যে, তাকে দিয়ে প্রজনন করানো যায়নি৷ বাকি দু’টি গণ্ডার মা ও মেয়ে৷ নাজিন আর পাটু। সারাক্ষণ এ গণ্ডার দুটিকে পাহারা দেয় বন্দুকধারী রক্ষীরা, যাতে শিকারীরা ধারে কাছে পৌঁছাতে না পারে

বিশেষজ্ঞরা আরও জানান, ১৯৬০ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সাদা গণ্ডার মিলতো। তারপর কমে আসে সেই সংখ্যা।

গেল ফেব্রুয়ারির শেষের দিক থেকে সুদানের অবস্থা খারাপের দিকে যেতে থাকে। তার ডান পায়ে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়। মৃত্যুর আগের ২৪ ঘণ্টা, সুদানের অবস্থার চরম অবনতি ঘটে। এ কারণে তার পক্ষে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব হচ্ছিল না। ‘ডের কারালাভ জু’, ‘ওল পেজেটা অভয়ারণ্য কর্তৃপক্ষ’ এবং কেনিয়া ওয়াইল্ডলাইফ সার্ভিসের পশুচিকিৎসক দল অবশেষে গতকাল সোমবার তার মৃত্যু ঘোষণা করে।

কবরস্থান : এখন পর্যন্ত যে ক’টি সাদা গণ্ডারের দেহ উদ্ধার হয়েছে, তাদের এভাবেই গাছের তলায় কবর দেয়া হয়েছে৷ জঙ্গলের মধ্যে গড়ে উঠেছে গণ্ডারদের কবরস্থান। সুদানকেও এখানে কবর দেয়া হবে।

Advertisement

রাজকীয় সুরক্ষা

জীবিতকালীন সুদানের জন্য রাজকীয় সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়। এক মুহূর্তের জন্য তাকে একলা ছাড়া হতো না। তাকে ঘিরে থাকত স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে রক্ষীর দল। না জনিয়ে সাদা সুদানের দিকে কারও যাওয়ার ওপর ছিল নিষেধজ্ঞা। সন্দেহজনক কারও আগমন হলেই গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিল কেনিয়া সরকার। দুর্লভ প্রাণী হওয়ায় চোরাশিকারীদের নজর ছিল সাদা গণ্ডার সুদানের দিকে। নিরাপত্তার একটু ফাঁক পেলেই তার সাদা চামড়া ও শিং কেটে নিতে একটুও হাত কাঁপবে না। তাই চিন্তিত ছিল কেনিয়া সরকার। জঙ্গি হানায় দেশটি রক্তাক্ত হলেও সাদা সুদানকে রক্ষায় কড়া সুরক্ষা বলয় তৈরি করা হয়েছিল।

এমএআর/আরআইপি