অর্থনীতি

ফ্ল্যাটের দাম বর্গফুটে ২০০ টাকা বাড়ার শঙ্কা

রড ও সিমেন্টের দাম বাড়ায় ফ্লাট হস্তান্তর অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে এবং প্রতি স্কয়ার ফুটের (বর্গফুট) দাম ২০০ টাকা করে বাড়বে বলে জানিয়েছে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)।

Advertisement

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এমন দাবি করা হয়। নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে এই সংবাদ সম্মেলন ডাকে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠনটি।

সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, বর্তমানে আবাসন খাতের প্রধান উপকরণ ৬০ গ্রেডের রডের প্রতিটনের বাজার মূল্য প্রায় ৬৫ থেকে ৬৮ হাজার টাকা এবং ৪০ গ্রেডের রডের বাজার মূল্য ৫৩ থেকে ৫৬ হাজার টাকা। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) হিসাবেও এক সপ্তাহ আগে ৬০ গ্রেডের রডের বাজার মূল্য ছিল ৫৯ থেকে ৬০ হাজার টাকা এবং ৪০ গ্রেডের রডের বাজার মূল্য ৫০ থেকে ৫১ হাজার টাকা।

আর এক বছর আগে ৬০ গ্রেডের রডের বাজার মূল্য ছিল ৫২ থেকে ৫৩ হাজার এবং ৪০ গ্রেডের রডের বাজার মূল্য ৪২ থেকে ৪৩ হাজার টাকা ছিল। অর্থাৎ এক বছরে রডের বাজার মূল্য প্রতি টনে বেড়েছে ২৩ শতাংশ।

Advertisement

একই সঙ্গে বিভিন্ন কোম্পানির সিমেন্টের দাম বেড়েছে বস্তাপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং ইটের দাম বেড়েছে প্রতি হাজারে এক হাজার টাকা।

তিনি বলেন, ছয় মাস আগে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রতিবস্তা সিমেন্ট বিক্রি হত ৩৬০ থেকে ৩৯০ টাকায়। বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪২০ থেকে ৪৬০ টাকায়। এই সময়ে সিমেন্টের ওপর কোনো ধরনের চার্জ বা কর আরোপ করা হয়নি, বাড়েনি কাঁচামালের দাম। তাহলে এই দাম বৃদ্ধি কেন? রড, সিমেন্ট, ইট ছাড়াও গত ছয় মাসে পাথরসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীর দামও বেড়েছে। আমরা মনে করি এই মূল্য বৃদ্ধি আবাসন শিল্প তথা নির্মাণ খাতের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।

আলমগীর শামসুল আলামিন বলেন, এ খাত যখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, সেই মুহূর্তে নির্মাণ উপকরণের দাম বৃদ্ধিতে নির্মাণকাজ গতিহীন হয়ে পড়বে। নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই ইতোমধ্যে নির্মাণকাজ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিতে চাচ্ছেন। ফলে যথাসময়ে ফ্ল্যাট হস্তান্তর অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে। এতে দুর্ভোগে পড়বেন চুক্তিবদ্ধ ক্রেতারা। আমরা মনে করি, সঙ্কট উত্তরণের পথে থাকা আবাসন খাত আবারও বড় ক্ষতির মুখে পড়বে। এ জন্য সমস্যা খুঁজে বের করে দ্রুত এই বিষয়ে সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সারা দেশে নানা ধরনের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের বেশির ভাগ নির্মাণ-সংক্রান্ত। আর নির্মাণের প্রধান উপকরণ হচ্ছে রড, সিমেন্ট, ইট, পাথর। উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় রড, সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল এবং পাথর আমদানি বেড়েছে। বর্তমানে রড তৈরির বিভিন্ন উপাদান আমদানিতে নানা ধরনের কর দিতে হচ্ছে।

Advertisement

রড তৈরির প্রধান কাঁচামাল বিলেটে আরডি ২০ শতাংশ, প্রতি টনে এআইটি ৮০০ টাকা, এটিভি ৪ শতাংশ এবং ভ্যাট দিতে হচ্ছে ১৫ শতাংশ। এ ছাড়া রড তৈরির আরেক অন্যতম উপাদান স্ক্র্যাপে প্রতিটনে এআইটি ৮০০ টাকা, সিডি ১ হাজার ৫০০ টাকা, এটিভি রয়েছে ৪ শতাংশ।

অন্যদিকে সিমেন্ট তৈরির উপাদান ক্লিংকার আমদানিতে এআইটি ৫ শতাংশ, এটিভি ৪ শতাংশ, ভ্যাট ১৫ শতাংশ এবং সিডি ৭৫০ টাকা প্রতি টনে দিতে হয়। পাথর আমদানিতে নানা ধরনের কর দিতে হচ্ছে ৭০ শতাংশ।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বর্তমানে পাথর প্রায় পুরাটাই আমদানি নির্ভর। দেশে আগে যে পরিমাণ পাথর উত্তোলন হতো তা পরিবেশবাদীদের আপত্তির কারণে প্রায় বন্ধ রয়েছে। নিত্যপণ্য না হওয়ার কারণে বন্দরে দিনের পর দিন পাথরের জাহাজ আটকা পড়ে থাকে। ফলে সেখানে অতিরিক্ত মাসুল দিতে হয়। এতে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পায়। এই বাড়তি ব্যয় সবশেষে গিয়ে পড়ে ক্রেতার ওপর।

আলমগীর শামসুল বলেন, আমরা আগেই বলেছি, উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় রড, সিমেন্ট তৈরির কাঁচামাল এবং পাথর আমদানি বেড়েছে। ফলে এখান থেকে সরকারের রাজস্ব আয় আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চলমান। আমদানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার এই জায়গায় কর কমিয়ে দিলে রাজস্বের পরিমাণ বাড়তে থাকবে।

তিনি আরও বলেন, সরকার তার রাজস্ব এক খাত থেকে আয় করে অন্য খাতে ব্যয় করছে। এই ক্ষেত্রে এই খাতে কর কমিয়ে দিলে বেসরকারি আবাসন খাত স্থবিরতা থেকে রক্ষা পাবে। আমরা চাই সরকার এই আবাসন শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রড, সিমেন্ট, পাথরসহ বিভিন্ন সমিতির সকলকে নিয়ে একটি মতবিনিময় করে উদ্ভুত সমস্যার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুক।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- রিহ্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি নুরন্নবী চৌধুরী শাওন, সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, পরিচালক কামাল মাহমুদ প্রমুখ।

এমএএস/এনএফ/পিআর