জাতীয়

প্রথম ভ্রমণেই প্রাণ গেল বৃদ্ধ দম্পতির

বিকেল সাড়ে ৪টা। বনানী আর্মি স্টেডিয়ামে নেপালে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহতদের স্বজনদের জন্য সংরক্ষিত গ্যালারিতে পাশাপাশি বসেছিলেন দুই তরুণী। দু’জনের দৃষ্টি অদূরে নির্মিত মঞ্চের দিকে। মঞ্চ থেকে কিছুক্ষণ পরপর বলা হচ্ছিল একটু পরেই উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহতদের কফিন পৌঁছাবে।

Advertisement

যতবার ঘোষণা দেয়া হচ্ছিল ততবারই ওই দুই তরুণী ফুপিয়ে কেঁদে উঠছিল। ওদের সামনে বসা এক আত্মীয় জানালেন ওরা সম্পর্কে দুই সহোদর। উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত ব্যাংক কর্মকর্তা নজরুল কবীর ও বেসরকারি স্কুল শিক্ষিকা আক্তার বেগম দম্পতির মেয়ে নাজনীন আক্তার কনক ও নার্গিস আক্তার কাকন।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ওরা দু’বোন জানান, বাবার বয়স ৬৩ ও মার ৬০। দু’জনই চাকরি করলেও কখনই নিজেদের ভোগ-বিলাস বা ভ্রমণের চিন্তা করেননি। দুই মেয়ের পড়াশোনা ও সুখ-শান্তির কথা ভেবেছেন।

এবারই প্রথম উড়োজাহাজে চড়ে বিদেশে যাচ্ছিলেন। আর প্রথমবার উড়োজাহাজে চড়ে প্রাণটা হারালেন বাবা মা, এ কথা বলেই দু’বোন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

Advertisement

বড় বোন কনক জানান, উড়োজাহাজ ছাড়ার সময় বাবা ফোন করে বলেছিলেন, এখনই উড়োজাহাজ ছাড়বে, তোর জন্য কিছু আনবোরে মা। জবাবে মে জানান, কিছু লাগবে না। তোমরা সহি সালামতে ফিরে এসো।

ছোট বোন কাকন জানান, মায়ের কাছে নেপাল থেকে জামা কিনে আনার বায়না ধরলে মা হেসে চোখের ইশারায় জামা নিয়ে ফিরবেন বলে ইঙ্গিত দিয়ে চলে যান। এ সময় দু’বোন জানায়, বাবা ও মার একসঙ্গে গেলেও মা আজ একাই ফিরেছে। তার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দিয়ে তারা জানায়, বাবার মরদেহ আজ সকালে শনাক্ত হওয়ায় কাগজপত্র তৈরি না হওয়ায় মরদেহ আসেনি। তারা দেশবাসীর কাছে নিহত বাবা-মায়ের জন্য দোয়া চান।

উড়োজাহাজটিতে মোট ৬৭ যাত্রীর মধ্যে বাংলাদেশি ৩২ জন, নেপালি ৩৩ জন, একজন মালদ্বীপের ও একজন চীনের নাগরিক ছিলেন। তাদের মধ্যে পুরুষ যাত্রীর সংখ্যা ছিল ৩৭, নারী ২৮ ও দুজন শিশু ছিল।

এমআরএম/পিআর

Advertisement