‘মা ও মা।’ অস্ফুট স্বরে আদরের একমাত্র সন্তান পাইলট পৃথুলাকে ডেকে ওঠলেন তার মধ্যবয়সী মা রাফেজা বেগম। তার দুচোখ বেয়ে টপটপ করে ঝরছে অশ্রুধারা।
Advertisement
পাশে বসে থাকা পৃথুলার রশীদের বন্ধু পাইলট সামিয়া বন্ধুর মাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে নিজেও কেঁদে ওঠেন। সোমবার বিকেলে আর্মি স্টেডিয়াম থেকে মরদেহ স্বজনদের বুঝিয়ে দিতে পৃথুলার নাম ডাকলে এ হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। পৃথুলার মায়ের পাশে তার নানু ও ছোট খালা বসেছিলেন। তারাও হাউমাউ করে কাঁদছিলেন।
গত ১২ মার্চ (সোমবার) নেপালে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহত হন পৃথুলা রশীদ। আজ দেশে এনে তার মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
সৈয়দা নাছিমা সুলতানা নামে পৃথুলার দূর সম্পর্কের এক খালা বলেন, একমাত্র সন্তানকে তার বাবা-মা শ্রেষ্ঠ সন্তান হিসেবে গড়ে তুলেছিলেন। পৃথুলা তার বাবা-মায়ের আশা পূরণ করেছিল কিন্তু আল্লাহ তাকে অকালেই নিয়ে গেলেন।
Advertisement
সোমবার বিকেল ৫টা ২৩ মিনিটে নিহত ২৩ বাংলাদেশির জানাজা আর্মি স্টেডিয়ামে সম্পন্ন হয়। এর আগে মরদেহবাহী বিমানবাহিনীর একটি কার্গো বিমান সোমবার বিকেল ৩টা ৫৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। মরদেহের কফিন গ্রহণ করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তার সঙ্গে ছিলেন বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী শাহজাহান কামাল। জানাজা শেষে রাষ্ট্রপতির পক্ষে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের সচিব, প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে ওবায়দুল কাদের এবং স্পিকার শ্রদ্ধা জানান। এরপর মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
যাদের মরদেহ আনা হয়েছে- আঁখি মনি, বেগম নুরুন্নাহার, শারমিন আক্তার, নাজিয়া আফরিন, এফএইচ প্রিয়ক, উম্মে সালমা, বিলকিস আরা, আখতারা বেগম, মো. রকিবুল হাসান, মো. হাসান ইমাম, মিনহাজ বিন নাসির, তামারা প্রিয়ন্ময়ী, মো. মতিউর রহমান, এস এম মাহমুদুর রহমান, তাহারা তানভীন শশী রেজা, অনিরুদ্ধ জামান, রফিক উজ জামান, পাইলট আবিদ সুলতান, কো-পাইলট পৃথুলা রশিদ, খাজা সাইফুল্লাহ, ফয়সাল, সানজিদা ও নুরুজ্জামান।
এখনও তিন বাংলাদেশির মরদেহ শনাক্ত হয়নি। তারা হলেন- নজরুল ইসলাম, পিয়াস রয় ও আলিফুজ্জামান। ডিএনএ পরীক্ষার পর তাদের মরদেহ শনাক্ত করা হবে বলে জানা গেছে। তাদের মরদেহ শনাক্তের পর দেশে আনা হবে।
গত ১২ মার্চ (সোমবার) ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিএস-২১১ নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। ৬৭ যাত্রী ও চার ক্রুসহ দুপুর ২টা ২০ মিনিটে বিমানটি বিমানবন্দরের পাশের একটি ফুটবল মাঠে বিধ্বস্ত হয়। এতে ৫১ যাত্রীর প্রাণহানি ঘটে। এর মধ্যে ২৬ বাংলাদেশি নিহত ও ১০ বাংলাদেশি আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে নেপালের বিভিন্ন হাসপাতলে ভর্তি করা হয়।
Advertisement
এরপর আহত সাত বাংলাদেশিকে দেশে ফেরত আনা হয়। সর্বশেষ সোমবার আহতও কবীর হোসেনকে দেশে আনা হয়। রোববার দেশে ফিরেয়ে আনা হয় আহত শাহিন বেপারীকে। এর আগে শেহরিন আহমেদ, কামরুন্নাহার স্বর্ণা, মেহেদী হাসান, আলমুন্নাহার অ্যানি ও রাশেদ রুবায়েত দেশে ফেরেন। তারা সবাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।
বিমানটিতে মোট ৬৭ যাত্রীর মধ্যে বাংলাদেশি ৩২ জন, নেপালি ৩৩ জন, একজন মালদ্বীপের ও একজন চীনের নাগরিক ছিলেন। তাদের মধ্যে পুরুষ যাত্রীর সংখ্যা ছিল ৩৭, নারী ২৮ ও দুজন শিশু ছিল।
এমইউ/জেডএ/পিআর