জাতীয়

অশ্রুভেজা চোখে স্বজনদের অপেক্ষা

নেপালে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নিহতদের জাতীয়ভাবে জানাজা হবে বাংলাদেশের আর্মি স্টেডিয়ামে। এজন্য ইতোমধ্যে স্টেডিয়ামে নিহতদের স্বজনরা উপস্থিত হয়েছেন। সেখানে সৃষ্টি হয়েছে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের। স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। তাদের আর্তনাদে ভারি হয়ে উঠছে স্টেডিয়াম।

Advertisement

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) সহকারী পরিচালক (মিডিয়া) নূর ইসলাম বলেন, নিহতদের মরদেহ বিকেলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা। এরপর আর্মি স্টেডিয়ামে নেয়া হবে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের শ্রদ্ধা জানাবেন।

তিনি আরও জানান, দেশে নিহতদের প্রথম জানাজা আর্মি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে। জানাজায় সর্ব সাধারণরা অংশ নিতে পারবেন। এরপর মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

তাই স্বজনরা মরদেহ গ্রহণ করতে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই স্টেডিয়ামে পৌঁছে গেছেন। ইতোমধ্যে কো-পাইলট পৃথুলা রশিদের বাবা-মা ও আত্মীয় স্বজনার উপস্থিত হয়েছে। তারা পৃথিলার মরদেহ পাবার অপেক্ষা অস্থির হয়ে আছের। পাশাপাশি ডুকরে কেঁদে ওঠছেন। মা কান্না করার পাশাপাশি কোরআন শরিফ পড়ছেন।

Advertisement

পৃথুলা রশিদের মামা তৌফিকুর রাহমান সুমন জাগো নিউজকে বলেন, পৃথুলার মরদেহ গ্রহণে ইউএস-বাংলার পক্ষ থেকে আমাদের স্টেডিয়ামে আসতে বলেছে। আমরা যথাসময়ের আগেই পৌঁছে গেছি। তার মরদেহ নিয়ে মিরপুর শ্যামলি আশা টাওয়ারের কাছে আলাদা জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

নিহত নজরুল ইসলাম ও তার স্ত্রী আক্তারা বেগমের ভাবী মিনা বেগম ও তার পরিবার মরদেহ গ্রহণ করতে এসেছেন। কিন্তু নজরুল ইসলামের মরদেহ শনাক্ত না হওয়ায় এখনও তার মরদেহ বাংলাদেশে আসেনি। তবে তার স্ত্রীর আক্তারা বেগমের মরদেহ দেশে আনা হয়েছে। তার মরদেহ রাজশাহীতে নিয়ে যাওয়া হবে।

মিনা বেগম ডুকরে কেঁদে বলেন, যেহেতু ভাই-ভাবীকে একসঙ্গে দাফন করতে হবে ভাইয়ের মরদেহ আসেনি তাই দাফন করা নিয়ে আমরা একটু অনিশ্চয়তায় আছি। আক্তারা বেগমের মরদেহ পেলেই আমরা রাজশাহী ফিরে যাব।

ফ্লাইটে নিহত ক্রু খাজা হোসেন মো. সাহেদের মা-শাশুড়িসহ পরিবার এসেছেন তার মরদেহ গ্রহণ করতে। তার শাশুড়ি ফৌজিয়া রহমান বলেন, মরদেহ নিতে এসেছি। পুরান ঢাকায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করার চিন্তা রয়েছে।

Advertisement

এভাবে অনেক নিহতের স্বজনরা মরদেহ নিতে আর্মি স্টেডিয়ামে এসে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। আর অপেক্ষা করছেন।

গত ১২ মার্চ (সোমবার) ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট বিএস-২১১ নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। ৬৭ যাত্রী ও চার ক্রুসহ দুপুর ২টা ২০ মিনিটে বিমানটি বিমানবন্দরের পাশের একটি ফুটবল মাঠে বিধ্বস্ত হয়। এতে ৫১ যাত্রীর প্রাণহানি ঘটে। এর মধ্যে ২৬ বাংলাদেশি নিহত ও ১০ বাংলাদেশি আহত হন। আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে নেপালের বিভিন্ন হাসপাতলে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য ৬ বাংলাদেশিকে রোববার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে আনা হয়েছে।

বিমানটিতে মোট ৬৭ যাত্রীর মধ্যে বাংলাদেশি ৩২ জন, নেপালি ৩৩ জন, একজন মালদ্বীপের ও একজন চীনের নাগরিক ছিলেন। তাদের মধ্যে পুরুষ যাত্রীর সংখ্যা ছিল ৩৭, নারী ২৮ ও দুজন শিশু ছিল।

এমএইচএম/এমইউএইচ/জেডএ/আরআইপি